ঢাকা সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

সুরাইয়া আফরিন
খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

খাদ্যনিরাপত্তা বলতে বোঝায় খাদ্যের সহজলভ্যতা বা খাদ্যদ্রব্য জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকা। বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতির প্রভাব ভয়াবহভাবে দেশের ৭০ শতাংশ মানুষের ওপরে পড়েছে। প্রতিদিন বাজারে গিয়ে সবচেয়ে কম মূল্যের সবজি ও চাল কিনতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।

জন্মের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন নিয়ে জন্মায় প্রায় ৬ লাখ শিশু। বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক ২০২৪-এর তথ্যমতে পাঁচ বছরের কম ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু খর্বকায় বা স্বাভাবিকের তুলনায় কম উচ্চতাসম্পন্ন। কম ওজন ২২ দশমিক ৬ শতাংশ শিশুর। দুর্ভাগ্যজনক হলো বিশ্বব্যাপী সুষম খাদ্যসংকটের শিকার শিশুর মোট সংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের বাস যে ২০টি দেশে, বাংলাদেশ তার একটি। পুষ্টিহীনতায় ভুগে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত এসব শিশু কীভাবে দেশের ভবিষ্যৎ হিসেবে তৈরি হবে?

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ, যা ২০২৪ সালের নভেম্বরে এসে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে। সাধারণ মানুষের আয় বাড়লেও ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। কারণ বেতন ২ টাকা বাড়লে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে ৬ টাকা। এর ফল হিসেবে ক্ষুধা ও অপুষ্টি গ্রাস করেছে এ বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে। সর্বশেষ বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক ২০২৪ অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১১ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। প্রায় ২৯ শতাংশ মানুষ দৈনিক তিন বেলা খাবার পাচ্ছে না। শিশুদের ক্ষেত্রে এ অবস্থা আরও মারাত্মক। চমকে ওঠার মতো তথ্য হচ্ছে, ইউনিসেফের সর্বশেষ তথ্য (২৬ জুন, ২০২৪) অনুযায়ী, দেশের প্রতি তিনটি শিশুর মধ্যে দুটিই পর্যাপ্ত সুষম খাবারের অভাবে ভুগছে। প্রায় ২৮ শতাংশ শিশু অপুষ্টির শিকার।

নির্ধারিত মূল্য বলে বাজারে কিছু নেই। সেই সঙ্গে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির মূল্যবৃদ্ধি তো আছেই। জীবন বাঁচাতেই নাভিশ্বাস উঠছে, পুষ্টির হিসাব করার সুযোগ কোথায়! কিন্তু এর সমাধান কী? বাংলাদেশে চাহিদার তুলনায় কিছু পণ্যের কম উৎপাদন এবং বিভিন্ন সময় নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আশানুরূপ উৎপাদন ব্যাহত হয়।

এসব পরিস্থিতিতে যথাসময়ে আমদানি নিশ্চিত করতে হবে। আমদানি শুল্ক কমানো, টিসিবির কার্যক্রম আরও বাড়ানো উচিত। দেশে উৎপাদন বাড়াতে কৃষকের পাশে দাঁড়ানো দরকার। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ফসল কিনে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমাতে হবে। কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কৃষকরা কাজে উৎসাহিত হবেন। কৃষক লাভবান হলে কৃষিকাজে বাংলাদেশেও শিক্ষিতরা আগ্রহী হবেন। কৃষি খাতে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়িয়ে কৃষককে বিনা সুদে ঋণদান, আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ এবং কৃষকের প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। তবেই এ লাগামহীন বাজার নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে; তখন সত্যিকারের স্বাধীনতার স্বাদ পাবে সবাই।

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত