ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা

বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হতে হবে

বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হতে হবে

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ তার শততম জন্মদিনে গণতন্ত্র ও আধুনিক সভ্যতা নিয়ে তীব্র হতাশা প্রকাশ করেছেন। জন্মদিন অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে দেওয়া এক বার্তা সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘গণতন্ত্র যেমন সঠিকভাবে কাজ করেনি, তেমনি আধুনিক সভ্যতাও তার দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে।’ মাহাথির বলেছেন, ‘গণতন্ত্রে শুধু দুটি রাজনৈতিক দল থাকলে ভালো হয়। তখন একটি জিতবে, একটি হারবে- এভাবে একটি শক্তিশালী সরকার গঠন সম্ভব। কিন্তু সবাই নেতা হতে চায়, ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়, ফলে কোনো পক্ষই সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না। তাই বহু ক্ষেত্রেই গণতন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।’ গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে ওই সাক্ষাৎকারে মাহাথির বলেছেন- একটি জাতিকে ধ্বংস করতে খাদ্যসংকট ও যুদ্ধকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছেন, পশ্চিমা সভ্যতা যেভাবে এ অন্যায়কে নীরবে মেনে নিচ্ছে, তা তাদের নৈতিক পতনের প্রতিচ্ছবি।’

গাজার ওপর তেল আবিবের গণহত্যামূলক সামরিক অভিযান সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে কয়েক মাস আগে মাহাথির মোহাম্মদ বলেছিলেন, ইসরায়েলের মিত্ররা যেভাবে তাদের গণহত্যায় সহায়তা ও উৎসাহ প্রদান করছে- এটি সভ্য মানুষের আচরণ নয়। এর আগে এক্স-এ (পূর্বে টুইটার) এক পোস্টে মাহাথির বলেছেন, ‘আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব নৈতিক মূল্যবোধ উপেক্ষা করে আমরা নিজেদের সভ্য দাবি করতে পারি না।’ এই পুরো বিষয়টিতে মানবসভ্যতারই ব্যর্থতা দেখছেন তিনি। মাহাথির মনে করেন, ‘ইসরায়েল যে গণহত্যা চালাচ্ছে-তা আর্থিকভাবে এবং অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে সেই দেশগুলো, যারা মানবাধিকার, মানুষের জীবনের পবিত্রতা এবং নিষ্ঠুরতার প্রতি ঘৃণার বড় বড় বুলি আওড়ায়। আমরা দেখি, হাজার হাজার মানুষ নিহত হচ্ছে, না খেয়ে মারা যাচ্ছে, পানি ও ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা দেখি, হাসপাতাল, স্কুল ও শরণার্থী শিবিরগুলো বোমা ও রকেট হামলার শিকার হচ্ছে। হ্যাঁ। সভ্যতা ব্যর্থ হয়েছে।’

জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা পি. আলবানিজ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারত্বের সমালোচনা করেছেন। ২৬ মার্চ ২০২৪ তারিখে আলবানিজ জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলকে রিপোর্ট করেন, গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড গণহত্যার সমান। আলবানিজ সেখানে গণহত্যার প্রমাণ হিসাবে গণহারে হত্যা, বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস এবং এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি, যেগুলো ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে- এসব বিষয় তুলে ধরেন। উল্লেখ্য, ইসরায়েলি সামরিক পদক্ষেপকে গণহত্যার ধ্রুপদি দৃষ্টান্ত বলে মনে করেন অনেক গবেষক। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী যখন গাজায় ত্রাণ বিতরণের জায়গায় মানুষ হত্যা করছিল, সেই দৃশ্য দেখে ইসরায়েলি পত্রিকা হারেৎজ-এর লেখক গিডিয়ন লেভি ২৯ জুন লিখেছিলেন, ‘ইসরায়েল কি গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে? গাজায় সামান্য খাবারের আশায় ত্রাণকেন্দ্রে ছুটে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের নৃশংসতা থামছে না। ছয় সপ্তাহে ত্রাণকেন্দ্রে যাওয়া এমন অন্তত ৭৯৮ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। ইসরায়েলের হামলায় গাজায় যেভাবে প্রাণহানি হচ্ছে এবং অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে, তা কোনো বিবেকবান মানুষ সমর্থন করতে পারে না। এসব অপরাধের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হতে হবে। এসব অপরাধ চলতে থাকলে আধুনিক সভ্যতার কোনো মূল্যই থাকে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত