ঢাকা সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শিশুখাদ্যে ভেজাল দমনে কঠোর রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপের প্রয়োজন

মো. শামীম মিয়া
শিশুখাদ্যে ভেজাল দমনে কঠোর রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপের প্রয়োজন

জাতির অগ্রগতির ভিত্তি সুস্থ ও সচল প্রজন্ম। আর সেই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম- শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশনির্ভর করে একটি বিষমুক্ত, নিরাপদ খাদ্যব্যবস্থার ওপর। কিন্তু আজ বাংলাদেশের খাদ্য বাজারে এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতা হচ্ছে- শিশুদের জন্য তৈরি অনেক খাদ্যদ্রব্যেই মিশে আছে বিষ, ক্ষতিকর কেমিক্যাল, নকল রং ও প্রতারণা। যারা এসব অপরাধে জড়িত, তারা নিছক অসাধু ব্যবসায়ী নয়, তারা মানবতাবিরোধী অপরাধী এবং সরাসরি দেশের ভবিষ্যতের শত্রু। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, খাদ্যজনিত রোগে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৬০০ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয় এবং ৪২০,০০০ জন মৃত্যুবরণ করে, যার একটি বড় অংশ পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু। শুধু খাদ্যবিষক্রিয়া নয়, দীর্ঘমেয়াদি দূষিত খাদ্যগ্রহণে শিশুরা ক্যান্সার, কিডনি বিকলতা, স্নায়বিক জটিলতা এবং মানসিক প্রতিবন্ধকতাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। এই স্বাস্থ্যঝুঁকি একদিকে পরিবারে বেদনার আবহ তৈরি করে, অন্যদিকে জাতীয় অর্থনীতির উপর চাপ ফেলে। শুধু খাদ্যের মান নয়, শিশুদের পুষ্টি অবস্থা নিয়েও উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। ২০২৫ সালের IPC Acute Malnutrition (AMN) বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে ১৬ লাখ শিশু তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে, যার মধ্যে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৫০ জন শিশু গুরুতরভাবে অপুষ্টিতে আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের জন্য বাজারজাত অনেক খাদ্যেই যথেষ্ট পুষ্টিগুণ নেই; উপরন্তু, এগুলোর অনেকগুলোতে মিশ্রিত হয় ক্ষতিকর রাসায়নিক- যা অপুষ্টি ও রোগ দুটোই বাড়িয়ে তোলে। এই চিত্র আমাদের জন্য শুধু দুঃখজনক নয়, ভবিষ্যৎ ধ্বংসের সংকেত। সরকার, সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও সমাজ যদি এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে একটি দুর্বল, রোগাক্রান্ত, মেধাহীন প্রজন্ম তৈরি হবে- যা আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে চরমভাবে ব্যাহত করবে।

এই মুহূর্তে জরুরি কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক-

১. ভেজাল খাদ্য প্রস্তুতকারীদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি কার্যকর করা। ২. বিশেষ খাদ্য আদালত ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের ক্ষমতা বাড়ানো। ৩. বাজার মনিটরিং জোরদার করতে ভোক্তা অধিদফতরকে আধুনিক ল্যাব ও লোকবল সরবরাহ। ৪. শিশু খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সিং, মান পরীক্ষায় কঠোরতা।

৫. জনসচেতনতা কর্মসূচি : গণমাধ্যম, সামাজিক সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করে শিশুদের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে দেশে জোরালো প্রচারণা চালানো। অভিভাবকদেরও নিজেদের দায়িত্ব নিতে হবে। ‘সস্তা’ আর ‘ঝকঝকে মোড়ক’ দেখে খাদ্য কিনে নেওয়ার প্রবণতা বদলাতে হবে। শুধুমাত্র ব্র্যান্ড নয়- খাদ্যের গুণগত মান যাচাই করা আবশ্যক।

আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন বিষ নয়, বরং পুষ্টির স্বাদ পায়- এটা শুধু সরকারের নয়, আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্ব।

জাতির সন্তানদের খাদ্যে বিষ মেশানো মানে জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া। এই ভয়াবহ অমানবিকতা রোধে এখনই কঠোর ও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ নিতে হবে। ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই শুধু স্বাস্থ্য রক্ষার নয়- এটা একটি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন।

লেখক : শিক্ষার্থী

ফুলছড়ি সরকারি কলেজ, জুমারবাড়ী, সাঘাটা, গাইবান্ধা

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত