ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আসুন, নদীরক্ষায় এগিয়ে আসি

শফিকুল ইসলাম খোকন
আসুন, নদীরক্ষায় এগিয়ে আসি

শিশুকাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একটি শব্দ আমাদের কানে বাজে, যার নাম ‘নদী’। কখনও মুখে বলি, কখনও কানে শুনি, কখনও সিনেমায় দেখি, কখনও কবিতার পাতায় পড়ি, কখনও ক্লাসের পাঠপুস্তকের মাধ্যমে পড়ি। কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতকদের ভাষায় এ দেশটি নদীমাতৃক দেশ। দেশের নদী নিয়ে কতশত কবিতা, গল্প, উপন্যাস, সিনেমা তৈরি হয়েছে তার অন্ত নেই; কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই ঐতিহ্য আর নেই। আজ নদী মাতৃক দেশ বলতেও লজ্জা হয়। গতিহীনভাবে বয়ে চলার ধারা দেখে এক সময়ের খরস্রোতা বলেশ্বর, বিষখালীসহ উপকূলের নদীগুলো চিনার এখন উপায় নেই।

এ মুহূর্তে গানের একটি লাইন মনে পড়ে গেল, আর তা হলো ‘ভব নদী দেব পাড়ি যাব আমার আপন বাড়ি ঘাটেতে বাইন্দা নাও মন মাঝি কেন ঘুমাও’। যদিও এ গানটি পুড়ো শুনলে অর্থ ব্যাখ্যা বা পর্যালোচনা ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু এই লাইনের সঙ্গে দেশের বর্তমান নদীগুলোর বাস্তবতা মিলে যাচ্ছে। দেশের অনেক নদীই এখন পড়ে গেছে। এখন নদী পাড়ি দেওয়া যায় না, নদীতে নৌকাও বান্দা যায় না, মাঝিও নৌকা বেঁধে ঘুমাতেও পারছে না। অনেক নদী, খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেখানে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।

আমাদের দেশ বাংলাদেশ। এ দেশটিকে বলা হয় নদী মাতৃক দেশ। নদী শব্দটির সঙ্গে আমরা অতি পরিচিত। বাংলার বিচিত্র ভূপ্রকৃতিতে নদীর দান অপরিসীম। প্রধানত নদীকে কেন্দ্র করেই মানুষের বসতি। শহর, নগর, বন্দর পৃথিবীর সব সভ্যতার সূচনা। মানব শরীরে সচল রক্তশিরার মতো নদীও এ দেশের প্রাণ। মানুষের যেমন প্রাণ আছে, নদীরও তেমন প্রাণ আছে। নদী জীবন্ত, নদী জীবন্ত সত্তা। নদীর কাছে মানব সভ্যতার ঋণ অপরিসীম। এই জীবন্ত প্রাণ নিয়ে রয়েছে শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, সংগ্রামে নদীর উপস্থিতি নিরবচ্ছিন্ন। আছে নদীকেন্দ্রিক পরিচয়ের প্রাধান্য, রাজনীতির স্লোগানও পদ্মা-মেঘনা-যমুনা- তোমার আমার ঠিকানা।

স্বাধীনতার যুদ্ধেও রয়েছে নদীর অবদান, নদী নিয়ে রয়েছে কত শত গান, কবিতা। এক নদী রক্ত পেরিয়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা আমরা তোমাদের ভুলব না। আজ সেই নদী নিয়ে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, গান আর আমাদের মাঝে নেই। নদীর অবদানও আমরা ভুলে গেছি। কি অকৃতজ্ঞ আমরা, যে নদী দিয়েছে আমাদের সভ্যতা, যে নদী দিয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতা, যে নদীর মাঝে রয়েছে আমাদের জীবিকা, অপার সম্ভাবনা।

আজ সেই নদীই হারিয়ে গেছে, নদী কাঁদছে, নদীর কান্না কেউ শুনতে পায় না বা শুনতে চায়ও না। অথচ এই নদীর ওপরেই জীবিকা, মানবসভ্যতা, কৃষি ইত্যাদি নির্ভর করে।

বাংলাদেশ শব্দটি উচ্চারণ করতে গেলেই মাতৃক শব্দটি এসে যায়। বলা হয়ে থাকে, নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। বিপন্ন ‘প্রাণী’র নাম ‘নদী’। বিশ্বে হয়তো একটি দেশ রয়েছে বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যাকে বলা হয় নদীমাতৃক। নদীকে যদি মা বলি তাতেও মনে হয় ভুল হবে না। আজ নদীগুলো ধংস হচ্ছে। ডুবোচর, প্লাস্টিক বর্জ্যে পরিবেশ দূষণ থেকে শুরু করে দখল, ভরাট থেকে শুরু করে প্রভাবশালীদের কড়াল গ্রাসে নদীগুলো মৃত্যুপ্রায়। সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে বিষখালী, বলেশ্বর ও পায়রা নদীর চিত্র এমনটাই উঠে এসেছে। যদি বলি বিষখালী নদীর অবস্থা কি? উত্তর খুব কঠিন হলেও দখল, দূষণ করা খুবই সহজ। দখল, দূষণে ‘বিষে নীল’ এখন বিষখালী। দেশের উপকূলীয় অঞ্চল হওয়াতে খুব সহজে বনের গাছ কেটে কাঠ পুড়িয়ে, নদীর মাটি কেটে ইট ভাটায় ইট তৈরি করছে। ইট পোড়ানোর ক্ষেত্রে সংশোধিত আইন অনুযায়ী কোনো জনবসতি বা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের তিন কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। এসবের কোনো কিছুই যেন তোয়াক্কা করা হচ্ছে না বিষখালী নদীর বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বাইনচটকি ফেরিঘাট এলাকায়। এই এলাকায় সংরক্ষিত বন থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যেই ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। বিষখালী নদীর চর দখল করে বাড়ানো হচ্ছে ভাটা দুটির আয়তন। এতে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি, নদীর জলজ পরিবেশ এবং সংরক্ষিত বন ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

একদিকে বন ধংস হচ্ছে, অপরদিকে অপরিকল্পিত নদীর মাটি কাটা হচ্ছে, পাশাপাশি ইট পুড়িয়ে পরিবেশ দূষণও করছে। অন্যদিকে জলোচ্ছ্বাসে প্রাকৃতিকভাবে বিষখালী, বলেশ্বর, পায়রা ও উপকূলের নদীগুলো ভেঙে যাচ্ছে। বিশেষ করে বলেশ্বর, বিষখালী ও পায়রা নদীতে অসংখ্য ডুবোচরের কারণে পানির প্রবাহ দিন দিন কমে যাচ্ছে, পাশাপাশি ইলিশের যাতায়াতও কমে যাচ্ছে। অপরিকল্পিত ব্রিজ, কালভার্ট তো রয়েছেই। ইট পোড়ানো মৌসুম ছাড়াও সারা বছর ইট-সুরকির টুকরা ফেলে নদী ভরাট করছে তার লোকজন। এতে নদীর জোয়ার-ভাটার স্রোতের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে ভাঙনের মুখে পড়েছে নদীতীর।

নদীগুলো ভরাট এবং দূষণের ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানির প্রবাহ। অন্যদিকে যদি চোখ রাখি, পলি জমে আগেই ভরাট হয়েছে একসময়ের খরস্রোতা বাগেরহাটের বিষখালী নদী। অবৈধ স্থাপনার কারণে সংকুচিত নদীতে পানিপ্রবাহ নেই আগের মতো। জলধারা ফেরাতে ২০২৩ সালে শুরু হয় নদী পুনঃখনন কাজ। তবে এ কাজে বাদ সেঁধেছে নদীপাড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা। বিভিন্ন সময় নোটিস দেওয়ার পরও এসব স্থাপনা সরিয়ে না নেওয়ায় খননকাজে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ। ঝালকাঠির নলছিটির অংশে একটি খাল যার নাম ‘মরা নদী’। নামের সঙ্গে বাস্তবতার মিল রয়েছে। এখন নিজেই মরা; তথ্যে জানা যায়, ওই খালটি ১১৯.৭৪ একর কাগজে কমলে লিজ নিলেও বাস্তবে দখলে নিয়েছে ৩০০ একর।

বর্তমানে আমাদের মানসিকতা এমন হয়েছে উন্নয়ন মানেই রাস্ত, ঘাট, পুল ব্রিজ, বিল্ডিং বানানো ইত্যাদি। উন্নয়ন বলতে সরকারি দলের লোকরাও তো একই কথা বুঝে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি উন্নয়নের নামে নদীসহ পরিবেশদূষণকারী বিষয়গুলোর ব্যাপারে খড়গহস্ত হওয়া যেত, তাহলে তো আমজনতার বোঝা না- বোঝাকে অগ্রাহ্য করেই আমরা আমাদের নদীগুলো বাঁচাতে পারতাম। নদীর পাড় দিয়েই প্রাচীনকালে গড়ে উঠেছিল সভ্যতা। পানি ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। তাই পানির সবচেয়ে ভালো উৎস হিসেবে নদীকেই বেছে নিয়েছিল প্রাচীনকালের মানুষ। কিন্তু সেই সভ্যতার খাঁড়ায়ই বিলীন হতে চলেছে নদী। উন্নয়নের নামে অযথা নদীর টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে বলে অনেক সময় নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। আর নদীকে নালা হিসেবে ব্যবহার করার কথা কে না জানে। নদীর প্রতি অনিষ্টকর আচরণের কয়েকটির কথা বলা যাক।

আমরা দেখেছি মেডিকেল বর্জ্য, গৃহবর্জ্য ইত্যাদির অনেকটাই নিক্ষেপ করা হচ্ছে নদী নামক ভাগাড়ে। আবার দেখছি উন্নত রাষ্ট্রের পারমাণবিক মহড়ার জন্য বেছে নেয় সাগর ও নদী, নদী হয়ে উঠছে মশা-মাছির প্রজননের আদর্শ স্থান। নদীর পাড়ে ভূমিহীনদের আবাসন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যাদি। কেউ কি খেয়াল করেছেন, নদীর পাড় কিংবা নদীতে জেগে ওঠা চর হামেশাই দখল হয়ে যাচ্ছে? প্রথমে কোনো সমিতির সাইনবোর্ড, রাজনৈতিক দলের কার্যালয় লাগিয়ে দখল শুরু হয়ে যায়। তবে সবশেষ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়ই ভরসা। এরপর সেখানে দালান ওঠে। নদীর ধারে এই অবৈধ কারবার দিনের পর দিন চলে; কিন্তু কেউ তাদের কোনো শাস্তি দেয় না। নদীকে আড়াআড়ি রেখে রাস্তা তৈরি করে নদীর সর্বনাশও ডেকে আনা হয়। সড়ক মানেই যে উন্নয়ন নয়, সড়ক নির্মাণের সময়ও যে প্রকৃতি-পরিবেশের কথা বিবেচনায় নিতে হয়, সে কথা কে কাকে মনে করিয়ে দেবে?

সারাদেশেই আগ্রাসী থাবায় নদীগুলো বিপর্যস্ত। যে কোনো নদীর পাড়ে চোখ মেলে তাকালেই দখলবাজির চিত্র স্পষ্ট দেখা যায়। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, অনেক নদনদীর অস্তিত্বই এখন হুমকির সম্মুখীন। অনেক নদী এরমধ্যেই হারিয়ে গেছে। দখল ও দূষণের কারণে গত ৪ দশকে দেশের ৪০৫টি নদনদীর মধ্যে বিলুপ্ত হওয়ার পথে ১৭৫টি। বাকি ২৩০টিও রয়েছে ঝুঁকির মুখে। ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ কমে হয়েছে ৬ হাজার কিলোমিটারের মতো। কৃষি, যোগাযোগ, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, মানুষের জীবনযাত্রা সবকিছুর জন্যই এটা ভয়াবহ হুমকিস্বরূপ। নদী-জলাশয় রক্ষার প্রয়োজনীয়তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। পরিবেশ সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠনগুলো, একেবারে শীর্ষ থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের পদাধিকারীরা নানা কথা বলে চলেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আদালতের নির্দেশেও খুব একটা অগ্রগতি হয়নি। এই নদীই একটি জীবন্ত সত্তা।

২০১৯ সালের ৩ ফেরুয়ারি হাইকোর্ট একটি রায়ে নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা (লিভিং এনটিটি)’ বলে আদেশ জারি করেছে। এর অর্থ মানুষের মতো নদীরও সুস্থ সুন্দর থাকার অধিকার রয়েছে। দখল দূষণ ভরাটের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে রয়েছে আইনি অধিকার। এর আগে বিশ্বব্যাপী এ ধারণার সূচনা হয়েছে কলম্বিয়া থেকে ২০১৭ সালে। সোনা আর কয়লার খনির কারণে নদী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দেশটির সাংবিধানিক আদালত ‘রিয়ো এট্রাটো’ নামক একটি নদীকে এ অধিকার দেয়। এ পরিস্থিতি থেকে নদীটিকে রক্ষার জন্যই আদালত একে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা করে। শুধু তাই নয়, নিউজিল্যান্ডের একটি নদীকে খুবই পবিত্র মনে করে এবং সেটিকেও জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে। আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতের মধ্যপ্রদেশের রাজ্য আদালত থেকে নর্মদা নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কারণ নদীটি খাওয়ার পানির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উপকূলীয় অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ, পরিবেশ এবং মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন, উপকূলীয় অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন এবং সংরক্ষণের জন্য ‘উপকূলীয় অঞ্চল নীতি ২০০৫’ নামে একটি কাঠামো তৈরি করে। ওই নীতির ৪.২ ধারায় মৌলিক চাহিদা ও জীবিকায়নে সুযোগ হিসেবে বলা হয়েছে ২০০২ সালে টেকসই উন্নয়নের জন্য বিশ্ব শীর্ষ সম্মেলনে (ডাব্লিউএসএসডি) পাঁচটি বিষয় গুরুত্বারোপ দেয়া হয়।

এগুলো হলো, পানি সরবরাহ ও পয়ঃব্যবস্থা, শক্তি, স্বাস্থ্য, কৃষি, জীববৈচিত্র্য। অথচ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মৌলিক চাহিদার অধিকাংশ পূরণ হচ্ছে না। উপকূলের জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ ও জীবিকায়নের সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে তৎকালীন সরকার এ নীতিকাঠামো প্রণয়ন করেন। ওই নীতির ৪.৪.২ তে উপকূলের পানি সংরক্ষণে নিশ্চিত করতেও বলা হয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে ওই নীতিমালার ৪.৪ এর (ক)তে বলা উপকূলীয় অঞ্চল ও বঙ্গোপসাগরে মিলিত সকল নদীর প্রয়োজনীয় পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করার লক্ষে আন্তর্জাতিক নদীগুলো হতে প্রাপ্য পানির ন্যায্য অধিকার আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অথচ আমাদের দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের নদীগুলোর দিকে চোখ বুলালে চোখ বুঝে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আমরা নদীগুলো ধ্বংস লীলায় মেতে উঠি। এসব নদীগুলোর শাখা খালের কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

দেশের সব রাজনৈতিক দল, যে দলই ক্ষমতায় যায় তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার লড়াই এবং যারা বিরোধী দলে থাকে বা ক্ষমতায় যেতে পারে না তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার লড়াইয়ে মেতে ওঠে। কিন্তু কোনো দলকেই দেখা যায়নি নদী নিয়ে ভাবতে, নদী সুরক্ষা নিয়ে কথা বলতে, যাও বলছে ক্ষমতাসীন লোকরা বলার কথা বলে, কাজে বা বাস্তবে ঘোড়ার ডিম, বরং উল্টো ক্ষমতায় গেলে তারাই দখল বাণিজ্যে মেতে ওঠে। নদীকে ঘিরে সভ্যতা গড়ে উঠেছে- এটা সত্য। নদীর পাড়ে ইন্ডাস্ট্রি হবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে, শহর হবে, সড়ক হবে সবই ঠিক আছে। সেগুলো হবে নদীকে রক্ষা করে কিন্তু নদীকে ধ্বংস করে নয়। নদীদখলে যে শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তি তা নয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), প্রভাবশালীরা ও স্বার্থান্বেষী মহল আমাদের নদীগুলো ধ্বংস হওয়ার জন্য অনেকাংশে দায়ী।

নদী রক্ষার জন্য নতুন নতুন পরিকল্পনা নিতে হবে। নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি। অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। সেখানে থাকবে না কোনো স্বজনপ্রীতি, থাকবে না কোনো রাজনৈতিক প্রভাব। নদী সুরক্ষায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করতে হবে, নদীকে মুক্তভাবে চলতে দিতে হবে, নদীনির্ভর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে নদীর অর্থনৈতিক যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে, নদীর প্রতিবেশগত ঝুঁকি হ্রাস করতে হবে, নদীর পুনরুজ্জীবনের জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, নদী রক্ষায় জিরো টলারেন্স মনোভাব থাকতে হবে, নদী সুরক্ষার সুফল এবং দখল দূষণের কুফল সম্পর্কে স্থানীয় পর্যায় সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, স্থানীয় পরিষদকে শক্তিশালী করতে হবে। এছাড়াও, আমাদের নদীগুলো কোথায় আছে, কেমন আছে তা আমাদের জানতে হবে, মানুষকে জানাতে হবে।

পরিশেষে, জীবন্ত প্রাণকে হত্যা করা যেমন অপরাধ, মাকে হত্যা করা আরও বেশি অপরাধ। একাধিক জীবন্ত প্রাণিকে হত্যা করলে যেমন গণহত্যার শামিল তেমনি নদীকে হত্যা করাও গণহত্যার শামিল। আসুন নিজেদের জন্য, জীবিকার জন্য, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য, নদী মাতৃক দেশের ঐতিহ্য ফিরে আনার জন্য সম্মিলিতভাবে নদী রক্ষায় এগিয়ে আসি।

সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত