ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

অযাচিত হস্তক্ষেপ : নবীনদের আগ্রহকে বিনষ্ট করে দেয়

মো. রুহুল আমীন খান
অযাচিত হস্তক্ষেপ : নবীনদের আগ্রহকে বিনষ্ট করে দেয়

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, অন্যের হস্তক্ষেপ ছাড়াই নিজের মনমতো কাজ করা, সব ক্ষেত্রে নিজের ইচ্ছামত সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতাই হলো প্রকৃত ব্যক্তিস্বাধীনতা। ব্যক্তিস্বাধীনতা মানুষের কার্যক্রমে গতি আনে। কর্মক্ষেত্রে মনোযোগ বৃদ্ধি করে। বর্তমানে কর্মক্ষেত্রের অনেক সেক্টরে প্রকৃত ব্যক্তিস্বাধীনতা পাওয়া দুরূহ। কর্মক্ষেত্রে অগ্রজরা অযাচিতভাবে হস্তক্ষেপ করে। তাদের আধিপত্য বিস্তারের অপতৎপরতা অনুজদের ব্যক্তিস্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করে।প্রায়ই সকল ক্ষেত্রেই অগ্রজরা নিজেদের মত, পথ ও পদ্ধতিকে অনুজদের এর উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। ‘এটা নয়, ওটা করো। এভাবে নয়, ওভাবে করো’ এগুলো তাদের নিত্যদিনের নির্দেশনা। তাদের অযাচিত নির্দেশনা অনুজদের বিব্রত করে। কর্মজীবনের শুরু থেকে এমন পরিস্থিতির শিকার তারা এটাকে স্বাভাবিক মনে করতে পারেন। কিন্তু বিষয়টি আসলে স্বাভাবিক নয়। বরং এর কারণে অনুজদের ইচ্ছাশক্তি ও সৃজনশীলতা বিনষ্ট হয়ে যায়। নতুন কিছু করার আগ্রহ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়।

কাজ তাকে শেষ করতে হবে, সে বেছে নেবে তার কাজ করার পদ্ধতিটি কেমন হবে। তার মন থেকে উদ্ভাবিত পদ্ধতিটিই তার জন্য সবচেয়ে সহজ হবে। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের দেওয়া পরামর্শ বা দিকনির্দেশনা তার জন্য সহায়ক হতে পারে। কিন্তু একমাত্র অবলম্বন নয়। অভিজ্ঞতার দোহাই দিয়ে কোনো একটা পদ্ধতি যদি তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে পুরো পদ্ধতিটাই তাদের কাছে বিরক্তিকর ও অসহ্যকর মনে হবে।

প্রয়োজনের সময় কোনো নির্দেশনা দেওয়া হলে সেই নির্দেশনা মানুষ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করে। মেনে চলার চেষ্টা করে। আর প্রয়োজন সৃষ্টি হওয়ার আগেই নির্দেশনা দেওয়া হলে সে নির্দেশনার কোনো গুরুত্ব থাকে না। অনেকের কাছে সেটা নিষ্প্রয়োজন ও বিরক্তিকর মনে হয়। অগ্রজরা সেটা বোঝার চেষ্টা করে না। কর্মক্ষেত্রে অগ্রজরা সাধারণত নিজের মত, পথ ও পদ্ধতিকে সবচেয়ে সেরা ও সর্বোত্তম মনে করে। অনুজদের মত, পথ ও পদ্ধতিকে অবজ্ঞার চোখে দেখে। আবেগের বশে অভিজ্ঞতার অজুহাতে অনুজদের যৌক্তিকবিষয়কে অযৌক্তিক ও সঠিক কর্মপদ্ধতিকে ভুল কর্মপদ্ধতি প্রমাণের চেষ্টা করে। এটা কখনও প্রকৃত অভিজ্ঞ-ব্যক্তির কাজ হতে পারে না।

শুনতে খারাপ লাগলে- এটাই সত্য যে, ভালোকাজের কৃতিত্ব গ্রহণে অগ্রজরা অগ্রগামী। কিন্তু কোনো কাজে ব্যর্থ হলে সে-কাজের দায়ভার তারা নিতে চায় না। সে-সময় ব্যর্থতার সমস্ত দায়ভার অনুজদের উপর চাপিয়ে দিতে চায়। এটাই তাদের নিত্যদিনের অভ্যাস। জানি না, এ অভ্যাস থেকে জাতি কবে মুক্তি পাবে। নবীনদের মধ্যে স্বভাবগতভাবেই নতুন কিছু করার ইচ্ছা থাকে। তারা নতুন কিছু করতে চায়। কিন্তু অগ্রজদের আধিপত্য কায়েমের করালগ্রাসে সেই ইচ্ছাশক্তির অপমৃত্যু ঘটে। ফলে অফিসিয়াল কার্যক্রম চলে কচ্ছপ গতিতে সনাতনী পদ্ধতিতে। কর্মক্ষেত্র হারায় নতুনত্ব। সাফল্য লাভের স্বপ্ন বিলীন হয়ে যায় নীল আকাশে। পরিশেষে বলা যায়, ‘অগ্রজ আধিপত্য’ বিস্তারের লিপ্সা ত্যাগ করে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রদর্শনের মাধ্যমেই কর্মক্ষেত্রে নতুনত্ব আনা যাবে। কার্যক্রমে স্বাভাবিক গতি ফিরে আসবে। কর্মক্ষেত্র হবে আনন্দে মুখরিত ও প্রাণবন্ত। অন্যথায় এর বিপরীত প্রতিক্রিয়াও হতে পারে।

লেখক : প্রাক্তন শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত