ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হারিয়ে যাচ্ছে শরতের কাশফুল

সাকী মাহবুব
হারিয়ে যাচ্ছে শরতের কাশফুল

শরৎকাল বাংলার প্রকৃতির ‘ঋতুর রানি’। নীল আকাশ, সাদা মেঘের ভেলা, আর দিগন্তজোড়া কাশফুলের শুভ্রতা শরৎকে করে তোলে অনন্য। কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ সেই কাশফুল ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। নগরায়ন, কৃষিজমির সম্প্রসারণ এবং প্রকৃতির প্রতি মানুষের অবহেলার কারণে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই ফুল এখন শুধুই স্মৃতি।

প্রকৃতির শুভ্র কবিতা কাশফুল। কাশফুলের বৈজ্ঞানিক নাম : Saccharum spontaneum এক ধরনের ঘাসজাতীয় জলজ উদ্ভিদ, যা নদীর তীরে, চরাঞ্চলে, বা উঁচু ঢিবিতে জন্মায়। এর সাদা পালকের মতো নরম ফুল শরৎকালে প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলে। কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন, ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর- এই ‘বাংলার মুখ’ শরতের কাশফুলেই যেন মূর্ত হয়।

কেন হারিয়ে যাচ্ছে কাশফুল? জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কাশবন কেটে আবাসন ও কৃষিজমি তৈরি করা হচ্ছে। কাশফুলের কোনো বাণিজ্যিক মূল্য নেই বলে এর রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না : নদীর তীরে কাশফুলের প্রধান আবাসস্থল; কিন্তু নদীভাঙন ও ভূমিক্ষয়ে তা ধ্বংস হচ্ছে। গ্রামীণ জনপদে কাশ দিয়ে ঝাঁটা, ডালি, ঘরের ছাউনি তৈরি করা হয়। কাশমূল পিত্তথলির পাথর দূর করতে এবং চর্মরোগে ব্যবহৃত হয়। কাশফুল শুধু একটি ফুল নয়, এটি বাংলার সংস্কৃতি, প্রকৃতি এবং সাহিত্যের অঙ্গীকার। এটি রক্ষায় প্রয়োজন- সচেতনতা, প্রকৃতিপ্রেমীদের মাধ্যমে কাশবন সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া। নদীর তীরে কাশফুলের বীজ ছড়িয়ে দেওয়া। কাশফুলের সৌন্দর্যকে কবিতা, গান ও চিত্রকলায় তুলে ধরা। শরৎ এলেই যেন আমরা বলতে পারি- কালো খোঁপায় কাশফুল গুঁজে নববধূর মতো ফিরে এসেছে শরৎ।

লেখক : সাকী মাহবুব, সহকারী শিক্ষক, নাদির হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত