প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১৯ আগস্ট, ২০২৫
মানুষের জীবনে শেখার শেষ নেই। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত শিক্ষা লাভ করে। একাডেমি পড়ালেখা করা একরকম আর জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করা আরেকরকম। দুটো জায়গায়ই মানুষ শিক্ষা লাভ করে। একাডেমিক পড়ালেখায় মানুষ মেধা ও পরিশ্রম করে ভালো ফলাফল অর্জন করে শিক্ষা লাভ করে; আর বাস্তব জীবনে মানুষ বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে অভিজ্ঞতা অর্জন করে শিক্ষা লাভ করে।
মানুষ পরাজিত হওয়ার জন্য পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেনি। প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনো সময় বিজয়ী হয়। টাকা-পয়সা অর্থ চাকরি ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি মাধ্যমেই শুধু মানুষ জয় লাভ করে না- আরও অনেক মাধ্যমে মানুষ সফল হয় জয় লাভ করে। যেমন- একজন মানুষ যদি শুধু ভালো মানুষ হয় তাহলেও সে জয়ী হয়। কেননা, পৃথিবীতে ভালো মানুষ হয়ে বেঁচে থাকা অত্যন্ত কঠিন কাজ। একজন মানুষ জীবনে চলার পথে বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয় এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করে। তবে সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করে এবং শিক্ষা লাভ করে ভুল করার মাধ্যমে। ভুল মানুষকে যেমন ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়, তেমনি ভুল মানুষকে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি জোগায়। কোনো কাজে মানুষ কখনও কখনও অকৃতকার্য হলে দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে এগিয়ে যায়। আর এটা সম্ভব হয় তখনই যখন মানুষটি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে তাকে সফল হতেই হবে। তাকে তার গন্তব্যে পৌঁছাতেই হবে।
মানুষ উন্নতির পথে সাধারণত যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়, সেগুলো সবার ক্ষেত্রে প্রায় একই রকম। যেমন- একটা সময় পর্যন্ত অর্থনৈতিক সংকটে থাকা : প্রতিটি মানুষই জীবনে কোনো না কোনো সময় অর্থনৈতিক সংকটে ভোগে। যারা প্রচুর বিত্তবৈভবে জন্মগ্রহণ করে তাদের কথা আলাদা। পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষ দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত। যারা পড়ালেখা করতে পারে, তারা একটা সময় পরে চাকরি করে জীবন পরিচালনা করে। যারা পড়ালেখা করার সুযোগ পায় না, তারা অল্প বয়সেই কাজে লেগে যায়। যে কোনো কাজে লেগে যাওয়া বা চাকরি করা এমনি এমনি হয় না। এখানেও কঠোর সংগ্রাম এবং যুদ্ধ করতে হয়। কখনও কখনও একটা চাকরি বা কাজ পাওয়ার জন্য মানুষকে দিনের পর দিন মাসের পর এমনকি বছরের পর বছরও অপেক্ষা করতে হয়। তবে যারা বুদ্ধিমান এবং তীক্ষè চিন্তার অধিকারী তারা ভেঙে পড়ে না। তারা ধৈর্য ধরে এগিয়ে যায় এবং একসময় সফল হয়।
কাছাকাছি মানুষের অসহযোগিতা : একটা সময় পর্যন্ত মানুষ সহযোগিতা করে আন্তরিকতা দেখায়। যখনই মানুষ নিজেকে বদলাতে শুরু করে উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে, তখনই শুরু হয় অসহযোগিতা এবং এটা কাছের মানুষগুলো সবচেয়ে বেশি করে।
এমনও দেখা যায়- আপন ভাই ভাইয়ের শত্রু হয়ে যায়। বন্ধু বন্ধুর শত্রু হয়ে যায়। নিটক প্রতিবেশী আত্মীয় শত্রু হয়ে যায়। মানুষের একটা স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- অন্যের সুখ এবং উন্নতি তার সহ্য হয় না।
কাছের মানুষের সঙ্গেই প্রতিযোগিতা : আসল সত্যটি হচ্ছে- পৃথিবীতে সবাই সবার প্রতিযোগী। এমনকি রক্তের সম্পর্কের মানুষগুলো একসময় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে মারাত্মকভাবে। ভাই ভাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী, কখনও কখনও স্ত্রী-স্বামীর প্রতিদ্বন্দ্বী, পরিবারের এক সদস্য আরেকজনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী, কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী, বন্ধু বন্ধুর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী। এভাবেই কেউ একজন এগিয়ে যেতে চাইলে অন্যেরা প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে। নানা রকম কলাকৌশল করে পেছনে ফেলার চেষ্টা করে। যারা বুদ্ধিমান এবং ধৈর্যশীল তারা এই সব মোকাবিলা করেই এগিয়ে যায়। সফলতা নামক সোনার হরিণ ছিনিয়ে আনে। মনে রাখতে হবে এই পৃথিবীতে এমনি এমনি কিছু হয় না। পরিশ্রম এবং অধ্যাবসায় এবং বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা একজন মানুষকে পরিপূর্ণ সফলতা এনে দেয়।
নিজের কাজের মূল্যায়ন না হওয়া : প্রতিটি মানুষ তার নিজের কাজের মূল্যায়ন চায়। কাজের স্বীকৃতি মানুষকে আরও বেশি কাজ করতে উৎসাহ জোগায়; কিন্তু আমাদের সমাজ বাস্তবতা হচ্ছে- মানুষ কাজের স্বীকৃতি দিতে চায় না। বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিরোধিতা করে। ভালো কাজ করলেও অসহযোগিতা করে এবং কখনও কখনও শত্রুতা বাড়ে। তবে কে মূল্যায়ন করল আর করল না, এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য, সফল হওয়ার জন্য কায়মনোবাক্যে কাজ করে যাওয়া জরুরি।
কর্মক্ষেত্রে অসহযোগিতা ও বিরোধিতা : মানুষের পরিচয় তার কাজের মাধ্যমেই হয়। মানুষ নানারকম কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। মানুষের কর্মক্ষেত্রে একে অপরের যেমন সহযোগী, তেমনি আবার প্রতিযোগী। নিজের ক্যারিয়ার, উপরে উঠার সিঁড়ি এবং প্রমোশন এসব মেধা এবং যোগ্যতা অনুযায়ী হওয়ার কথা থাকলেও অনেক সময় নানা রকম কায়দাকানুন করে পেছনে ফেলে দেওয়া হয়। মেধাবী এবং যোগ্যদের বঞ্চিত করে অযোগ্যদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এতে কাজের মান যেমন খারাপ হয়, তেমনি যোগ্যরা বঞ্চিত হয় মূল্যায়নে। এক্ষেত্রে যারা নিষ্ঠার সঙ্গে ধৈর্য ধরে এগিয়ে যায়, তারা একসময় মূল্যায়ন পায়।
একটা কথা প্রচলিত আছে- বোকারা শিখে ঠেকে আর বুদ্ধিমানরা শিখে দেখে। জীবন শিখায়; কিন্তু কে কীভাবে শিক্ষা লাভ করে, সেটি হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন বাধ্য হয়ে শিখে আরেকজন অন্যের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে শিখে। মোটকথা, মানুষ বাস্তব জীবন থেকেই সবচেয়ে বেশি শিক্ষা লাভ করে এবং এই অর্জিত শিক্ষা ও জ্ঞান তাকে এগিয়ে যেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
সফল হওয়ার চাবিকাঠি প্রতিটি মানুষের হাতেই থাকে। মানুষ ভুল করবে, এটাই স্বাভাবিক। ভুল করেই মানুষ শিক্ষা লাভ করে, অভিজ্ঞতা অর্জন করে। পরিশ্রম যেমন সফলতার চাবিকাঠি; তেমনি সঞ্চিত অভিজ্ঞতা মানুষের মেধাকে শাণিত করে। শুধুমাত্র জীবনের অভিজ্ঞতাগুলোকে কাজে লাগাতে পারলেই একজন মানুষ সফল মানুষ হয়ে উঠতে পারে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, ভাওয়ালগড়, গাজীপুর