প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ২০ আগস্ট, ২০২৫
প্রবাস মানে দূরদেশ, প্রবাস মানে আত্মীয়-স্বজনবিহীন বছরের পর বছর একাকী কাটিয়ে দেওয়া, প্রবাস মানে দেয়ালবিহীন কারাগার, প্রবাস মানে শত দুঃখ-কষ্টের সঙ্গে বিরামহীন জীবনযুদ্ধ করা। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় জীবিকার তাগিদে কারও ছেলে, কারও ভাই, কারও বাবা, কারও স্বামী- অন্যের সুখের জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে দেশান্তরী হওয়া। এই দেশান্তরী হওয়া মানুষগুলোর সুন্দর একটি নাম প্রবাসী, যার অপর নাম রেমিট্যান্স যোদ্ধা। প্রবাসী সেজে মানুষ সুদূর দেশ থেকে একটি স্বপ্ন বা সুখের আশায় জীবন-মরণ সামনে রেখে প্রবাস নামক অন্য এক অচেনা দেশে যখন পা’টি প্রবেশ করায়, তখন বিদেশের চাকচিক্যময় পরিবেশ দেখে হয়তো মনে মনে ভাবে- এসেছি যখন এইবার হয়তো নিজের বা পরিবারের স্বপ্নটুকু বাস্তবায়ন করা যাবে। বিধির বিধান অনেক প্রবাসীর অনুকূল পরিবেশ বা প্রতিকুল পরিবেশে দিন, মাস, বছর এমনকি যুগ-কাল পেরিয়েও নিজের সর্বশক্তি সামর্থ্য ব্যয় করে সেই অধরা স্বপ্ন অপূরণীয় থেকে যায়। কিন্তু ওই দিন কাটানোর সময়ের মধ্যে একজন প্রবাসীর কাছ থেকে খুঁজে পাওয়া যাবে করুণ এক গল্প বইয়ের কাহিনি।
এই পৃথিবীতে কিছু পুরুষ মানুষ জন্ম নেন শুধু দায়িত্ব পালন করার জন্য। এই ধরনের পুরুষ মানুষ বেশির ভাগ খুঁজে পাবেন প্রবাসে। যারা বছরের পর বছর, নিজের জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন শুধু পরিবারকে একটু সুখে রাখার জন্য। দেশের মানুষ যারা জীবনে কোনো দিন প্রবাসে আসেনি, তারা হয়তো কোনো প্রবাসীর হাঁড়ভাঙা ঘাম জড়ানো কষ্টের ব্যথিত ব্যথা, কঠোর কায়িক পরিশ্রম, সময় ব্যবস্থাপনা, নিয়মণ্ডকানুন, আইন-কানুন, আদর্শ এবং ধৈর্যশীল ও সহনশীল, প্রেম-ভালোবাসা এবং আন্তরিকতা বুঝার হয়তো সম্ভবপর হবে না। কথায় বলে যে সহে সে রহে। কিন্তু সব জায়গায় প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধারা অবহেলিত কেন? সবধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা বঞ্চিত কেন? আজও প্রবাসীরা সদুত্তর পাননি। অনেকের ধারণা যেসব প্রবাসীরা প্রবাসে কুলি দিনমজুরি কাজ করে।
আমি মনে করি, দেশের যারা সর্বোচ্চ বেতনধারী ব্যক্তি তার চেয়েও অনেক প্রবাসী আছে, যারা অনেক উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত এবং ওই সর্বোচ্চ বেতনধারী থেকে অনেক বেশি পারিশ্রমিক পায় এবং তাদের রেমিট্যান্সের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক চাকা আজ অবধিও সচল রেখেছে। তারপরেও আজ এইদিক থেকেও মানসম্মান ইজ্জত নিরাপত্তা বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত সেই প্রবাসীরা। মনে রাখা উচিত, একজন প্রবাসীর ঘাম জড়ানো পরিশ্রম, কষ্ট ও ত্যাগ এবং নিয়মনীতি মেনে যে মেহনত করে তার ৫০ শতাংশ দেশের মানুষ যদি করত, তখনই প্রবাসীদের অক্ষরে অক্ষরে যথাযথ সম্মান জানাত বা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করত।