প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
বিশ্বের ১১০ কোটিরও বেশি মানুষ চরম দারিদ্র্যপীড়িত অবস্থায় জীবনযাপন করছে, যাদের অর্ধেকেরও বেশি শিশু। গত বছর (২০২৪) জাতিসংঘে উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। অক্সফোর্ড পোভারটি অ্যান্ড হিউম্যাস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (ওপিএইচআই) সঙ্গে যৌথভাবে প্রকাশিত ইউএনডিপির এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির পাশাপাশি যুদ্ধবিগ্রহে জড়িত হয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। যুদ্ধে জড়িত দেশগুলোতে দারিদ্র্যের এই মাত্রা তিনগুণেরও বেশি। ২০১০ সাল থেকে ইউএনডিপি এবং ওপিএইচআই এই বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক প্রকাশ করে আসছে। এই সূচকে বিশ্বের ১১২টি দেশের ৬৩০ কোটি জনসংখ্যার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। দেশের হিসাব অনুসারে ভারতে সবচেয়ে বেশি চরম দরিদ্র মানুষ বাস করছে। দেশটির ১৪০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ২৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্য সীমার নিচে রয়েছে। এর পরে অবস্থান করছে পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া ও গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো। এই পাঁচটি দেশেই বিশ্বের ১১০ কোটি চরম দারিদ্র্য পীড়িত জনসংখ্যার অর্ধেক লোকের বসবাস।
২০২০ সালে কোভিড মহামারির আগে তিন দশক ধরে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমছিল, যা দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক অগ্রগতিকেই নির্দেশ করে। কিন্তু গত তিন বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে গেছে। সরকারি হিসাবে, ২০২২ সালে এ হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ, যা চলতি বছরে ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশে পৌঁছেছে। তিন বছরে অতি বা চরম দারিদ্র্যের হারও বেড়েছে। ২০২২ সালের অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে। এছাড়া দরিদ্রের বাইরে এখন দেশের ১৮ শতাংশ পরিবার হঠাৎ দুর্যোগে যেকোনো সময় দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে। দেশে দারিদ্র্যের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়া শুধু একটি পরিসংখ্যানগত পরিবর্তন নয়, বরং এটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় সতর্কবার্তা। এমনকি এটি দেশের আর্থসামাজিক অগ্রযাত্রা পিছিয়ে যাওয়ার লক্ষণও। একটি দেশের দারিদ্র্য যখন বাড়তে থাকে, তা শুধু অর্থনৈতিক দুর্দশার চিত্রই তুলে ধরে না, বরং সে দেশের অর্থনীতির ভিত কতটা দুর্বল, বৈষম্যমূলক ও অনিরাপদ তাও স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে। অর্থনীতির মূলধারায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে এবং বিপুল পরিমাণ মানুষ মৌলিক চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে। এর অর্থ দাঁড়ায়- দেশে প্রবৃদ্ধি হলেও তা অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়েছে। খাবার, চিকিৎসা, বাসাভাড়া ও শিক্ষা- এমন প্রতিটি খাতেই ব্যয় বেড়েছে। ফলে দরিদ্র থেকে মধ্যবিত্ত পর্যন্ত সবাই আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য রাখতে পারছেন না। পিপিআরসি বলছে, দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে কোভিড মহামারি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। মহামারির অভিঘাত থেকে অর্থনীতি এখনও পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।