ঢাকা ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৮ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাজনৈতিক দলের ভেতর সংস্কার জরুরি

গোলটেবিল বৈঠক
রাজনৈতিক দলের ভেতর সংস্কার জরুরি

বর্তমান বাস্তবতায় ন্যূনতম সংস্কারের মাধ্যমে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া জরুরি। নয়তো সংকট আরো বাড়বে। এ মন্তব্য এসেছে ঢাকায় এক গোলটেবিল বৈঠকে। বক্তারা বলেছেন, রাষ্ট্রকে জনগণের রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে প্রথমে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে সংস্কার প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলে সংস্কার না আনলে অন্য কোনো সংস্কারই স্থায়ী হবে না বা থাকবে না। গতকাল শুক্রবার ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ কোন পথে’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা। জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে সাপ্তাহিক একতা। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ রাজনৈতিক দলের নেতাদের অবসরের সময়সীমা বেঁধে দেয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, একজন নেতা হলেন আর তিনি স্থায়ীভাবে পদ পেলেন, এটা ঠিক নয়। পদে স্থায়ী হওয়ার ভাবনা থেকেই স্বৈরতন্ত্রের জন্ম হয়। তাই রাজনৈতিক দলের প্রতিটি স্তরে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকা দরকার। এই প্রতিনিধির বয়সসীমাও নির্ধারিত হওয়া উচিত। রাজনৈতিক দলের সংস্কারে জনমত তৈরি করার আহ্বান জানিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, একটি জাতীয় পর্যায়ের দল হতে হলে এর মধ্যে সব ধর্ম, জাতি ও লিঙ্গের ভারসাম্য থাকা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে জনগণের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ হবে না।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম দ্রুত নির্বাচনের পথে যাওয়ার আহ্বান জানান। নয়তো সংকট আরো বাড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি স্বীকার করেন, জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রথম পর্বটি তারা ধরতে পারেননি। এ জন্য ডানপন্থিরা শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে দ্বিতীয় পর্বে বাম গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তৈরির ওপর জোর দেন তিনি। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান বলেন, অতীতের সামরিক সরকারগুলোও সংবিধান নতুন করে তৈরির চেষ্টা করেনি। তারা সংবিধান বাতিল রেখে শাসন চালিয়েছে। এখন সংবিধান নতুন করে লেখার চেষ্টা হচ্ছে। তিনি বর্তমান সংবিধানের চার মূলনীতি পরিবর্তনের প্রস্তাবের সমালোচনা করেন। সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু ন্যূনতম সংস্কার করে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের দ্বার খুলে দেয়ার আহ্বান জানান। অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের আমলে লুটপাট করার সুযোগ তৈরির জন্যই গণতন্ত্রহীন রাখা হয়েছিল।

সুতরাং নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। দুই, তিন কিংবা চারটা নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসবে বলে তিনি মত দেন। ১৭ বার কাটাছেঁড়া করার পরও সংবিধানে অনেক ভালো ভালো কথা লেখা আছে। কিন্তু কেউ তা মানছে না বলে মন্তব্য করেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ। তিনি বলেন, আজকে যে সংস্কার প্রস্তাব এসেছে, তা ভবিষ্যতে মানবে, এর নিশ্চয়তা কী? তাই রাজনৈতিক দলে সংস্কার দরকার। জাতীয় প্রেসক্লাবে গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক একতা আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছিলেন, রাজনৈতিক দলসহ যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলোই সংস্কার করা হবে। আর দ্বিমত হলে তিনি আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। এটাই যেন বহাল থাকে। তিনি দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার বিষয়ে আলোচনা শুরুর তাগিদ দেন। গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সাপ্তাহিক একতার সম্পাদক ও সিপিবির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আফরোজান নাহার রাশেদা। আরো বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ জাসদের নেতা মুশতাক হোসেন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রমুখ। সমাপনী বক্তৃতায় আলোচকদের মধ্যে নারীর অংশগ্রহণ না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেন আফরোজান নাহার রাশেদা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত