
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। কাতারের আমীরের দেয়া রয়েল অ্যাম্বুলেন্সে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হবে বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্য রাতের পর অথবা আজ শুক্রবার সকালে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এভারকেয়ার হাসপাতালের বাইরে এক সংবাদ সম্মেলনে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য এবং খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন একথা জানান। তিনি বলেন, দেশবাসীকে অবগত করতে চাই, দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার আলোকে যদি সব কিছু ঠিক থাকে, কাতার রয়েল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে উনাকে আজকে (বৃহস্পতিবার দিবাগত) মধ্যরাতে পরে অথবা আগামীকাল (আজ শুক্রবার) সকালের ভেতরে ইনশাআল্লাহ যুক্তরাজ্যে অর্থাৎ লন্ডনে একটি নির্ধারিত হসপিটাল ঠিক করেছি, সেখানে আমরা উনাকে নিয়ে যাব। ডা. জাহিদ বলেন, উনার যাওয়ার সময়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক এবং বাইরের দুইজন চিকিৎসক উনার সঙ্গে থাকবেন। যাতে উনার যাত্রাপথে কোনো ধরনের প্রতিকূলতার মধ্যে সুস্থভাবে বিমানে চিকিৎসা দেওয়া যায়, সেই লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আমরা ইনশাআল্লাহ উনাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাব, মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শক্রমে।
অধ্যাপক জাহিদ বলেন, আমরা দেশবাসীসহ দেশের বাইরে হাজার-লক্ষ মানুষের কাছে দোয়া চাই। যারা দেশনেত্রীর সুস্থতায় এতো দোয়া করেছেন। সেজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আপনাদের এই দোয়ায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সুস্থ করে তুলবে।
আমরা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার সধর্মিণী জুবাইদা রহমান এবং উনার কন্যা জায়মা রহমান, দেশনেত্রীর ছোট ছেলের সহধর্মিণী সৈয়দা শামিলা রহমানসহ তাদের দুই কন্যা জাফিয়া ও জাহিয়া রহমান, উনার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারসহ তাদের আত্মীয়-স্বজনের পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে দোয়া চাই, দেশবাসীকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরর প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টারা, সেনাবাহিনীসহ তিন বাহিনী প্রধান, আইনশঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এভারকেয়ার হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ, চিকিৎসক-নার্সসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী, চীন, রাশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান দূতাবাসের সব ধরনের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অধ্যাপক জাহিদ।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে কি না জানতে চাইলে জাহিদ বলেন, আমরা মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শের বাইরে কোনো কিছু চিন্তা করছি না। মেডিকেল বোর্ড গতকাল তিনবার ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন। উনাকে যুক্তরাজ্য ও চীনের ডাক্তাররা ফিজিক্যালি দেখেছেন। এই মুহূর্তেও যুক্তরাজ্যের ডাক্তার ও চীনের ডাক্তারদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। আমরা আল্লাহর রহমতে আশাবাদী ইনশাআল্লাহ। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আল্লাহর অশেষ রহমতে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, এবারও ইনশাআল্লাহ উনি আবারও আমাদের মাঝে ফেরত আসবেন। এর আগে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় এভারকেয়ার হাসপাতালে বৈঠকে বসে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড। এতে যুক্তরাজ্য ও চীন থেকে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসরকরা অংশ নেন। বৈঠক শেষে বেলা ২টা ৪০ মিনিটে সাংবাদিকদের সামনে আসেন অধ্যাপক জাহিদ। এদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য সারা দেশের মানুষ প্রার্থনা করছেন। মসজিদে মসজিদে দোয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সংগঠন তার সুস্থতা কামনায় দোয়া করছেন।
খালেদা জিয়ার জন্য সারা দেশে দোয়া ও প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছে সরকার : বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা করে সারা দেশে দোয়া ও প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। আজ শুক্রবার বাদ জুমা দেশের সকল মসজিদে দোয়ার আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রেস উইং থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জুমার নামাজ শেষে মসজিদে দোয়ার পাশাপাশি মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডাসহ অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়ে সংশ্লিষ্ট ধর্মের রীতি ও আচার অনুযায়ী প্রার্থনার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির জন্য দোয়া ও প্রার্থনার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। এরআগে, গত বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক রাষ্ট্রপতির স্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিতে যান প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তিনি খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডন যাচ্ছেন যে ১৪ জন : দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়া হচ্ছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন ১৪ জন। তারা হলেন- খালেদা জিয়ার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান, চিকিৎসক আবু জাফর মো. জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, চিকিৎসক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকি, চিকিৎসক মো. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, চিকিৎসক নূরউদ্দিন আহমদ, চিকিৎসক মো. জাফর ইকবাল, চিকিৎসক মোহাম্মদ আল মামুন, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) হাসান শাহরিয়ার ইকবাল, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের সৈয়দ সামিন মাহফুজ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সহকারী মো. আবদুল হাই মল্লিক, সহকারী ব্যক্তিগত সচিব মো. মাসুদুর রহমান, গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম ও গৃহকর্মী রূপা শিকদার।
লন্ডনের যে হাসপাতালে নেওয়া হবে খালেদা জিয়াকে : সংকটাপন্ন অবস্থায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে আজ শুক্রবার সকালের মধ্যেই লন্ডন নেওয়া হবে। দেশটিতে নেওয়ার পর বিএনপি প্রধানকে লন্ডনের টেমস নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত যুক্তরাজ্যের অন্যতম বৃহত্তম বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান লন্ডন ব্রিজ হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা ও আন্তর্জাতিক মানের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের জন্য সুপরিচিত হাসপাতালটি এইচসিএ হেলথকেয়ারের মালিকানাধীন। হাসপাতালটি কার্ডিয়াক, ক্যান্সার, অর্থোপেডিক, স্নায়ুরোগ, কিডনি চিকিৎসাসহ বিভিন্ন জটিল রোগের উন্নতসেবা দিয়ে থাকে। এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা এবং বিশেষায়িত ক্লিনিক। বিশাল এই হাসপাতালটিতে ১৬০টিরও বেশি শয্যা, ২২টি আইসিইউ শয্যা এবং ১০টি অপারেটিং থিয়েটার রয়েছে।
এভারকেয়ার হাসপাতালে কঠোর অবস্থানে পুলিশ-বিজিবি : বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নিরাপত্তাব্যবস্থা তীব্রভাবে জোরদার করা হয়েছে। হাসপাতালের সামনের সড়কে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে এবং প্রায় শতাধিক পুলিশ ও বিজিবি সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। হাসপাতালের প্রবেশপথ, পার্কিং এলাকা এবং আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে সদস্যরা টহল দিচ্ছেন, যাতে কেউ অযথা ভিড় তৈরি করতে না পারে বা কোনো অশান্তি সংঘটিত না হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালের সামনের সড়কে নেতাকর্মীদের ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। এর ফলে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা প্রবেশপথে নজরদারি চালাচ্ছেন এবং মানুষের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণে রাখছেন। ব্যারিকেডের সাহায্যে বাইরে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে এবং হাসপাতালে অপ্রয়োজনীয় লোক প্রবেশ থেকে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। হাসপাতালের শান্তি বজায় রাখা এবং রোগী ও দর্শনার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। অতিরিক্ত ভিড়, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বা সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধের জন্য সদস্যরা প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ চালাচ্ছেন। নিরাপত্তা বাহিনী বাধ্য হয়েই ব্যারিকেডের মাধ্যমে সড়কের কিছু অংশ বন্ধ রেখেছে এবং হাসপাতালে প্রবেশের সময় মানুষের দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা হাসপাতালে প্রতিটি কোণায় উপস্থিত এবং সিসিটিভি ও মোবাইল টহল চালাচ্ছেন। বাহিনী হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ ও বাইরে অবস্থানরত মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি যেকোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। দলের শীর্ষ নেতাকর্মীরা বলছেন, এই নিরাপত্তাব্যবস্থা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলাকালীন সময় দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থকরা হাসপাতালের সামনে জড়ো হচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া এই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতো। তাদের তৎপরতা হাসপাতালে শান্তি বজায় রাখার পাশাপাশি চিকিৎসা পরিবেশকে নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে অপরিহার্য।
বিএনপি চেয়ারপার্সনকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য আসছেন জোবাইদা রহমান : সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এজন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান লন্ডন থেকে ঢাকায় আসছেন। বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। জোবাইদা রহমান বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তাকে নিয়ে লন্ডন উদ্দেশে যাত্রা করবেন।
মায়ের জীবনরক্ষার প্রয়োজনে তারেক রহমান দেশে ফেরেননি -মাহদী আমিন : বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার লন্ডনে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখন দেশে ফেরেননি বলে জানিয়েছেন তার উপদেষ্টা মাহদী আমিন। তিনি বলেন, তারেক রহমানের দেশে না ফেরার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক নয়, সম্পূর্ণ মাকে বাঁচানোর প্রয়োজনেই নেওয়া। এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউনির্ভর পরিস্থিতিতে দেশে এলে যেমন জনসমাবেশ ও নিরাপত্তাজনিত বিশৃঙ্খলা তৈরি হতো, তাতে চিকিৎসা ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই এই সিদ্ধান্ত। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এসব কথা বলেন তিনি।
মাহদী আমিনের ফেসবুক পোস্ট হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দেশি-বিদেশি স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, দেশবাসীর অনিঃশেষ দোয়া-আন্তরিকতা ও কূটনীতিকদের সহযোগিতায় তার শারীরিক অগ্রগতি হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। উন্নত ও সর্বাধুনিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ম্যাডামকে অতি শিগগিরই লন্ডনের হাসপাতালে ভর্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
‘এই চিকিৎসা-প্রক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন ডা. জুবাইদা রহমান, যিনি লন্ডন থেকে সার্বিক সমন্বয় করে যাচ্ছেন। তিনি আজই দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে কাল সকালে ঢাকা পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন, যেন সঙ্গে থেকে দেশনেত্রীকে কাতারের অত্যাধুনিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডন নিয়ে যেতে পারেন। তবে তার আগেই যদি ফ্লাইট ব্যবস্থা করা যায় কিংবা তার আসা না হয়, সেই বিবেচনায় লন্ডনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিল এরইমধ্যে ঢাকায় এসেছেন। ম্যাডামের পুত্রবধূ শর্মিলা (শামিলা) রহমান, কয়েকজন চিকিৎসক ও কর্মকর্তাও এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সার্বক্ষণিক পাশে থাকবেন বলে জানা গেছে।’
তিনি লেখেন, ‘চলমান প্রক্রিয়ার প্রতিটি বিষয়, অর্থাৎ মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে নিয়মিত ব্রিফিং, লন্ডনের বিশেষায়িত হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ, কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের প্রস্তুতি, দেশনেত্রী ও ডা. জুবাইদা রহমানের ভ্রমণের ব্যবস্থাপনা- সবকিছুর তত্ত্বাবধান করছেন তারেক রহমান।’
‘তিনি শুধু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নন; একাধারে শহীদ জিয়া ও আপসহীন নেত্রীর আদর্শবাহী সন্তান; যার কাছে দায়িত্ববোধ, মাতৃস্নেহ ও দেশপ্রেম একে অপরের পরিপূরক। তারেক রহমান যদি পপুলার পলিটিক্সকে প্রাধান্য দিয়ে দেশে ছুটে আসতেন, তাহলে তিনি চিকিৎসক স্ত্রীর সঙ্গে একযোগে নিখুঁতভাবে যে তদারকি করছেন, তা কি এভারকেয়ার হাসপাতালের হৈ চৈ, ভিড়, বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বলয়ের ভেতরে করা যেত?’
‘তারেক রহমানের দেশে আসা মানেই লাখ লাখ মানুষের ঢল, জনসমুদ্রের উত্তাল আবেগ, যা জনগণের আবেগ ও ভালোবাসা হলেও অন্যান্য রোগী, চিকিৎসা পরিবেশ, এমনকি দেশনেত্রীর নিজের জন্যও কতটা ভালো হতো? সিসিইউতে থাকা মায়ের জন্য এমন কোনো যৌক্তিক দায়িত্ব ছিল, যা তারেক রহমান দেশে গণমানুষের ভালোবাসায় সৃষ্ট ভিড়ের মাঝে করতে পারতেন। কিন্তু নিরিবিলিতে লন্ডন থেকে বিশেষজ্ঞ, হাসপাতাল ও আন্তর্জাতিক সমন্বয় নিশ্চিত করে আরও সুচারুভাবে করছেন না?’
‘ম্যাডাম যখন চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাবেন ইনশাআল্লাহ, যদি দেশে আসতেন, তখন কি তারেক রহমান এখানে থেকে যেতেন, নাকি মায়ের সঙ্গে চলে যেতেন? থেকে গেলে অতিউৎসাহী গোষ্ঠী বলতো, তিনি মায়ের সঙ্গে কেন গেলেন না। আর চলে গেলে বলতো, তিনি নির্বাচনের জন্য কেন থাকলেন না?’
‘সুতরাং তারেক রহমানকে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে ব্যক্তিগত অনুভূতি নয়, মায়ের সুস্থতা ও দেশের স্থিতির স্বার্থে। তিনি একই সঙ্গে সন্তানের দায়িত্ববোধে নিবেদিত, আবার জাতীয় নেতার দায়বদ্ধতায় আবদ্ধ। মনে রাখা প্রয়োজন, তারেক রহমানের কাছে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া প্রথমে মা, তারপর নেত্রী। মায়ের প্রতি তার ভালোবাসার সাথে আমাদের কারও ভালোবাসার তুলনা করা অন?্যায়, অবিচার। তিনি তার মায়ের জন্য যা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেটিই করছেন, সেটিই করে যাবেন।’
মাহদী আমিন আরও লেখেন, ‘তারেক রহমানকে দল ও দেশের স্বার্থ একই সাথে দেখতে হচ্ছে। অগণতান্ত্রিক আধিপত?্যবাদীদের ষড়যন্ত্র কখনোই শেষ হওয়ার নয়। সেটিকে প্রজ্ঞা ও বাস্তবতার সঙ্গে প্রতিহত করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দায়িত্ব। বেগম খালেদা জিয়ার সারা জীবনের সংগ্রামের মূল প্রতিজ্ঞা হলো, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের মধ?্য দিয়ে জনগণের অধিকার ও দেশের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা।’
‘সেই ঐতিহ্যগত অভিযাত্রায়, ব?্যক্তিগত আবেগেকে ধারণ করলেও তারেক রহমানকে যুক্তিকেই প্রাধান্য দিতে হচ্ছে। ম্যাডাম ইনশাআল্লাহ নিরাপদে লন্ডনে পৌঁছালে, উনাকে একটু সেটেল করে দিয়ে ও স্থানীয় সব ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করে শিগগিরই তিনি দেশে ফিরবেন। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে গভীর ভালোবাসায় বরণ করে নিতে প্রস্তুত বিএনপি, প্রস্তুত প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ।’
‘আসুন, এই কঠিন সময়ে অপপ্রচারকে পেরিয়ে আমরা দেশনেত্রীর দ্রুত আরোগ্য ও দীর্ঘায়ুর জন্য আন্তরিক দোয়া করি। আল্লাহ তাকে সুস্থ করুন এবং জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আমাদের মাঝে দীর্ঘকাল রাখুন, আমিন’ যোগ করেন মাহদী আমিন।
প্রসঙ্গত, ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনিসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। গত ২৩ নভেম্বর হঠাৎ শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে বিএনপি প্রধানকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে সংকটাপন্ন অবস্থায় (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার সব ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আজ শুক্রবার সকালের মধ্যেই তাকে লন্ডন নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এর আগে চলতি বছরে ৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়া হয় কাতারের আামির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির দেওয়া রয়েল অ্যাম্বুলেন্সে করে। সেখানের লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন তিনি। চার মাস চিকিৎসার শেষে ৫ মে কাতারের আমিরের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেই দেশে ফেরেন বিএনপি চেয়ারপার্সন।