ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বড় রদবদল আসছে বিএনপিতে

বড় রদবদল আসছে বিএনপিতে

দীর্ঘ ১৭ বছর পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজনীতির মাঠে এখন অনেকটাই সক্রিয়। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ফলে এখনই দলকে আরো সুসংগঠিত করতে মাঠে নেমেছেন নেতারা। চলতি বছরের মধ্যেই সপ্তম জাতীয় কাউন্সিলের চিন্তাও রয়েছে হাইকমান্ডের। এ লক্ষ্যে আগামী দুই মাসের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর বিএনপির সপ্তম জাতীয় কাউন্সিলের ঘোষণা আসতে পারে বলে জানা গেছে।

দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক তিন বছর পরপর বিএনপির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হওয়ার কথা। তবে গত ৯ বছর সে রীতি রক্ষা করতে পারেনি দলটি। সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন-নিপীড়ন, হামলা-মামলা ও হয়রানির মুখে অনেকটাই নাজেহাল হয়ে পড়েছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি সামলে এখন জাতীয় কাউন্সিলের কথা ভাবছেন বিএনপির নেতারা। তারা বলছেন, কাউন্সিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পরই কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ হবে।

সূত্রমতে, সর্বশেষ ২০১৬ সালে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই কমিটি দিয়েই এখনো চলছে বিএনপি। দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সিল না হওয়ায় মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে অনেক কমিটি। স্থায়ী কমিটি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিসহ গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলোতে এখনো প্রায় ১২০টি শূন্যপদ রয়েছে। তারেক রহমান দেশের বাইরে থেকে প্রতিনিয়ত দিকনির্দেশনা দিয়ে সক্রিয় রেখেছেন নেতাকর্মীদের। তিন বছর মেয়াদের কাউন্সিলে এবার তরুণদের কেউ কেউ নেতৃত্বে আসতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে।

বিএনপি সিনিয়র এক নেতা বলেন, দলের পক্ষ থেকে একাধিকবার কাউন্সিলের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিহিংসার কারণে তা করা যায়নি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠানের ব্যাপারে ভাবা হচ্ছে এবং সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারেন। তিনি আরো বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা হলে বিএনপির পক্ষ থেকে কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা আসতে পারে।

বিএনপি দলীয় সূত্র বলছে, এ বছর দলের সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল করতে চায় বিএনপি। এজন্য দায়িত্বশীল নেতাদের ২ মাসের মধ্যে ৮২টি সাংগঠনিক জেলা ও অধিভুক্ত উপজেলার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে জেলাভিত্তিক আলাদা কমিটিও করছে তারা।

সূত্রমতে, বিএনপির শীর্ষ পদে বড় রদবদলের গুঞ্জন রয়েছে। সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে মহাসচিব পদ নিয়ে। ঢেলে সাজানো হচ্ছে দলটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামণ্ড স্থায়ী কমিটি। এতে বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে নিষ্ক্রিয়রা যেমন বাদ পড়তে পারেন, তেমনটি নতুন মুখের সমন্বয়ে পূর্ণ করা হবে খালি পদ।

দলটির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেছেন, দলের পদ পরিবর্তন ও পদায়ন তো চলমান প্রক্রিয়া। এটা যেকোনো রাজনৈতিক দলেই সারা বছর ধরে চলতে থাকে। এখন কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। সামনে আরো হবে। তিনি আরো বলেন, কাউন্সিলের বিষয়ে দল সিদ্ধান্ত নেবে। এছাড়া দলের পদে রদবদল তো দলীয় চেয়ারপারসনের সিদ্ধান্ত। তিনি যাদের প্রয়োজন মনে করবেন, তারাই পদে আসবেন।

পরিবর্তন যাই হোক, দলীয় স্বার্থ বিবেচনায় পরীক্ষিত নেতারাই নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন বিএনপির নেতারা।

মহাসচিব পদের পরিবর্তনের বিষয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে দলটির অভ্যন্তরে। আর এক্ষেত্রে যে ক’জন শীর্ষ নেতার নাম আলোচনায় আসছে তাদের মধ্যে সামনের সারিতে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমেদ। তিনি জিয়া পরিবারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত।

সালাহউদ্দিন আহমেদ ১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন। এরপর সরকারি চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। তিনবারের সাবেক এই এমপির স্থান হয়েছিল মন্ত্রিসভায়ও। ২০১৫ সালের ১০ মার্চ যখন তিনি নিখোঁজ হন, তখন যুগ্ম মহাসচিবের পাশাপাশি বিএনপি’র মুখপাত্রেরও দায়িত্ব পালন করছিলেন। বর্তমানে তিনি দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। বিএনপিতে তিনি আরো বড় কোনো পদ পান কি না তা নিয়ে এক ধরনের গুঞ্জন রয়েছে।

সালাউদ্দিন আহমেদ ছাড়াও বিএনপির নতুন মহাসচিবের বিষয়ে বেশ কয়েকজনের বিষয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। এদের মধ্যে মহাসচিব পদে আলোচনায় রয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত