ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

গাজা উপত্যকার দখল চান ট্রাম্প প্রতিরোধের ঘোষণা হামাসের

গাজা উপত্যকার দখল চান ট্রাম্প প্রতিরোধের ঘোষণা হামাসের

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গাজার বাইরে ফিলিস্তিনিদের স্থায়ী পুনর্বাসনের ইঙ্গিত দেয়ার পর মঙ্গলবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই ঘোষণা দেন। প্রয়োজনে গাজায় মার্কিন সেনা পাঠানোর কথাও বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা গাজার নিয়ন্ত্রণ নেব এবং সেখানকার সমস্ত বিপজ্জনক অবিস্ফোরিত বোমা এবং অন্যান্য অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করব। ভূখণ্ডটি সমতল করব এবং সেখানে এমন অর্থনৈতিক উন্নয়ন করব, যা ওই এলাকার মানুষের জন্য প্রচুর চাকরি এবং আবাসন সৃষ্টি করবে।’ যুক্তরাষ্ট্র সেখানে সেনা পাঠাবে কি না জানতে চাইলে তিনি জবাব দেন, ‘যদি প্রয়োজন হয়, আমরা তা করব।’ ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সেই অংশটি দখল করতে যাচ্ছি, আমরা এর উন্নয়ন করতে যাচ্ছি, হাজার হাজার কর্মসংস্থান তৈরি করতে যাচ্ছি এবং এটি এমন কিছু হবে, যা নিয়ে পুরো মধ্যপ্রাচ্য গর্ববোধ করবে।’

ট্রাম্প আরো বলেন, তিনি গাজার দীর্ঘমেয়াদি মালিক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে দেখেন। তার ভাষায়, ‘আমি অনেক মাস ধরে এটি খুব ঘনিষ্ঠভাবে অধ্যয়ন করেছি, আমি এটিকে প্রতিটি আঙ্গিক থেকে দেখেছি। এটি খুব বিপজ্জনক জায়গা এবং দিনদিন জায়গাটি আরো খারাপ হতে চলেছে। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ও শান্তি আনতে সাহায্য করতে পারে এবং আমরা তা করব।’ ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সমস্যার দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকে সমর্থন করেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘এর অর্থ দুই-রাষ্ট্রও নয়, এক-রাষ্ট্রও নয়। এর মানে হলো, আমরা মানুষের জীবনে সুযোগ এনে দিতে চাই, যারা জীবনে কখনও সুযোগ পাননি। কারণ, গাজা উপত্যকা সেখানে বসবাসকারী মানুষের জন্য একটি নরকে পরিণত হয়েছে।’ ফিলিস্তিনিরা চলে গেলে গাজায় কারা বসবাস করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘বিশ্বের মানুষ।

আমি মনে করি, আপনি এটিকে একটি আন্তর্জাতিক, অবিশ্বাস্য জায়গায় পরিণত করতে পারেন। আমি মনে করি, গাজা উপত্যকার সম্ভাবনা অবিশ্বাস্য। আমি মনে করি, সমগ্র বিশ্ব, সারা বিশ্বের প্রতিনিধিরা সেখানে থাকবেন এবং তারা সেখানে বাস করবেন। সঙ্গে ফিলিস্তিনিরাও বাস করবেন।’ সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা যেমনটা আলোচনা করেছি, আমাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে হবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে আমাদের কাজ শেষ করতে হবে। ইসরায়েলকে নিশ্চিত করতে হবে যে, গাজা আর কখনও ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে না।’

ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার মার্কিন পরিকল্পনা অবরুদ্ধ উপত্যকার প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। ট্রাম্পের বক্তব্যকে বর্ণবাদী আখ্যা দিয়ে হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, এটি ফিলিস্তিনিদের অধিকার অস্বীকার করার একটি নির্লজ্জ প্রচেষ্টা। সংগঠনটি বলেছে, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করাই ছিল ইসরায়েলি আগ্রাসনের মূল লক্ষ্য। ট্রাম্পের এই ধারণাকে পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির রেসিপি বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। হামাস নেতা সামি আবু জুহরি এক বিবৃতিতে বলেন, গাজার জনগণ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে দেবে না। তিনি বলেন, এখন প্রয়োজন আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি আগ্রাসনের অবসান, তাদের নিজস্ব ভূমি থেকে বহিষ্কার করা নয়। দলটির সিনিয়র নেতা ইজ্জাত আল-রিশক বলেন, গাজার জনগণ ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে বোমাবর্ষণের পরও বাস্তুচ্যুতি ও নির্বাসন পরিকল্পনা ব্যর্থ করেছে। মাতৃভূমি থেকে উৎখাতের কোনো পরিকল্পনা তারা বাস্তবায়ন হতে দেবেন না। ইসলামিক জিহাদ বলেছে, ৮০ হাজার টনেরও বেশি মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করে গাজার জনগণকে বাস্তুচ্যুত করা সম্ভব হয়নি। এ-ধরনের ন্যক্কারজনক পরিকল্পনা কীভাবে প্রতিরোধ করতে হয়, তা ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অনুশীলন করছেন ফিলিস্তিনিরা। এদিকে, গাজাবাসীদের স্থানান্তর নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা জাতিগত নিধনের সামিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের পরিকল্পনা একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে অসম্ভব করার ঝুঁকি তৈরি করেছে।’

এদিকে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ইস্যুতে সৌদি আরবের অবস্থান নিয়ে ট্রাম্পের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে রিয়াদ। এক বিবৃতিতে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রশ্নে সৌদির অবস্থান আগের মতোই আছে। মঙ্গলবার ট্রাম্পের সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সৌদি আরব যদি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র দাবি করে, সে-ক্ষেত্রে ট্রাম্প কী করবেন। জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘না, তারা দাবি করবেন না। কারণ, সবাই শান্তি চায়।’ নিকট ভবিষ্যতে সৌদির সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে- এমন ইঙ্গিত দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘ইসরায়েলের জন্য আমাদের একজন সঠিক নেতা রয়েছেন। তিনিও শান্তি চান।’ ট্রাম্পের এই বক্তব্যের কিছুক্ষণের মধ্যে বিবৃতি দিয়ে এই ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ইস্যুতে সৌদির যে অবস্থান, তা দৃঢ় এবং অবিচল। কোনো অবস্থাতেই এর পরিবর্তন ঘটবে না এবং কোনোভাবেই এখানে আপস করবে না রিয়াদ।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত