ঢাকা রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ক্রোধ থামেনি এখনও

* শেখ সেলিমের বনানীর বাড়িতে আগুন * সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিম ও সাবেক আপিল বিভাগের বিচারপতি এনায়েতুর রহিমের বাসভবন ভাঙচুর * সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর বাড়ির সব পুড়ে ছাই * সাবেক সেনা কর্মকর্তার বাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ * সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদের বাড়ি ও গাড়ি ভাঙচুর
ক্রোধ থামেনি এখনও

গত বৃহস্পতিবার দিনভর ফ্যাসীবাদ আওয়ামী লীগের স্থাপনা ও নেতাকর্মীদের বাড়ি ভাঙচুরের রেশ গতকাল শুক্রবারও সারা দেশব্যাপী ছিলো। আলোকিত বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর থেকে-

শেখ সেলিমের বনানীর বাড়িতে আগুন : ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিমের (শেখ সেলিম) ঢাকার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে বনানীতে এ আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। আগুন নেভাতে আসেনি ফায়ার সার্ভিস। সেই আগুন যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য পানির পাইপ দিয়ে তা নেভান স্থানীয়রা। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। আগে থেকেই লুটের শিকার বাড়িটির দরজা-জানালা খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তৃতীয় তলাটি আগুনে পুড়ে কালো হয়ে গেছে। একটি কক্ষে তখনো আগুন জ্বলছে। বাড়িটিতে কোনো আসবাবপত্র নেই। কেবল কিছু ছবি, অ্যালবাম আর কাগজপত্র এখানে-সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। পাশের একটি বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ কর্মী সাইফুল ইসলাম বলেন, ৫ আগস্টের পর বাড়িটিতে কয়েক দফায় লুট হয়েছে। সেখানে এখন কোনো আসবাবপত্র নেই। গত বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎই বাড়িটির তিনতলায় আগুন দেখা যায়। আগুন বাড়তে থাকলে পেছনের বাড়িতে আগুন ছড়ানোর শঙ্কা দেখা দেয় জানিয়ে সাইফুল বলেন, ‘দুই বাড়ির মধ্যে মাত্র কয়েক হাত দূরত্ব। পরে ওই বাড়ির লোকেরা আতঙ্কে নেমে আসেন। আশপাশের বাড়ির কর্মীরা মিলে পাইপ দিয়ে পানি মেরে আগুন নেভান। ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার লিমা খানম গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা না পাওয়ায় আমাদের গাড়ি যেতে পারেনি।’ গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিমকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। গোপালগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এ সংসদ সদস্য ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

দিনাজপুর : দিনাজপুর সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম ও সাবেক আপিল বিভাগের বিচারপতি এনায়েতুর রহিমের বাসভবন দ্বিতীয়বারের মতো ভাঙচুর করে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে শত শত জনতা দিনাজপুরের সাবেক হুইপ ও সাবেক আপিল বিভাগের বিচারপতির বাসভবন, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেয়।

দেখা গেছে, কেউ কেউ সাবেক সংসদ সদস্যের বাড়ির ইট ও লোহার রড খুলে নিয়ে যাচ্ছে। রাতেই প্রাচীরের গেট খুলে নিয়ে গেছে। কেউ কেউ সকাল থেকেই ইট অটোরিকশায় নিয়ে যাচ্ছে আবার কেউ প্রাচীরের পিলার ভেঙে ইট ও লোহার রড বের করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। একই দিন আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয়, সদর আওয়ামী লীগের কার্যালয়, চিরিরবন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, খানসামা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে। সাবেক এমপি ইকবালুর রহিমের বাড়ি পরিদর্শনে আসা কয়েকজন জানায়, ইকবালুর রহিমের দাম্ভিকতা ও মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার রাস্তাঘাটের তেমন কোনো উন্নয়ন না করা, নিজের দলীয় নেতাকর্মী ও নিজের পকেট ভারি করে কোটি কোটি টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছেন। তার ওপর তিক্ত ক্ষোভ ও ক্রোধের বহিঃপ্রকাশস্বরূপ দ্বিতীয়বার তার বাসভবনের প্রাচীর ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর সাবেক হুইপ ও সাবেক আপিল বিভাগের বিচারপতির বাসভবন প্রথমবারের মতো অগ্নিসংযোগ ভাঙচুর করেছে ছাত্র-জনতা।

সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর বাড়ির সব পুড়ে ছাই : বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার দেয়া আগুনে নোয়াখালীর হাতিয়ায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মোহাম্মদ আলীর বসতঘর, স্পিডবোট, ট্রলার সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঘটনার সময় অথবা পরবর্তীতেও এগিয়ে আসেনি ফায়ার সার্ভিস। এতে অন্তত অর্ধশত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতভর হাতিয়া পৌরসভার লক্ষ্মীদিয়া এবং ব্রিকফিল্ড বাজার এলাকার দুটি বাড়ি ছাড়াও সাতটি স্পিডবোট এবং চারটি ট্রলারে ভাঙচুরের পর আগুন দেয়া হয়েছে। এছাড়া রাতে লক্ষ্মীদিয়ার দুটি দোকানেও ভাঙচুর করা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, অগ্নিকাণ্ডে কঙ্কালসার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভবনগুলো। পুড়ে ছাই হয়ে আছে বসতঘরের আসবাবপত্র। কোথাও কোথাও ধোয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে। ট্রলার ও স্পিডবোট পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। জানা যায়, গত বছরের ১০ আগস্ট রাত ৩টার দিকে উপজেলার ওছখালীর নিজ বাসভবন থেকে মোহাম্মদ আলী, তার স্ত্রী সাবেক এমপি আয়েশা ফেরদাউস ও তাদের বড় ছেলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশিক আলী অমিকে হেফাজতে নেয় নৌবাহিনী। তারপর ১২ আগস্ট থেকে স্ত্রী-ছেলেসহ কারাগারে আছেন হাতিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর হাতিয়া পৌরসভার লক্ষ্মীদিয়া ও ব্রিকফিল্ড বাজার এলাকায় দুটি বাড়ি, হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে নোঙর করা সাতটি স্পিডবোট ও চারটি ট্রলারে আগুন দেয়া হয়। পরে লক্ষ্মীদিয়ার দুটি দোকানেও ভাঙচুর করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কিছু লোক মিছিল নিয়ে মোহাম্মদ আলীর লক্ষ্মীদিয়ার বাড়ির সামনে যান। এসময় মোহাম্মদ আলীর অনুসারীদের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে মিছিলে থাকা তিনজন আহত হন। এ ঘটনার জেরে রাত দেড়টার দিকে লাঠিসোঁটা নিয়ে কয়েকশ’ মানুষ সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর দুটি বাড়িতে হামলা চালায়। ভাঙচুরের পর দুটি বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। একই সময়ে নলচিরা ঘাটে মোহাম্মদ আলীর সাতটি স্পিডবোট এবং চারটি পণ্য ও যাত্রীবাহী ট্রলারে আগুন দেয়া হয়। আগুনে ছাই হয়ে যাওয়া মোহাম্মদ আলীর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বাকের মাঝি বলেন, সব পুড়ে ছাই হয়ে আছে। কোথাও কেউ নেই। ভেতরে ধোঁয়ার জন্য যাওয়া যায় না। যেখানে বসে মোহাম্মদ আলী সালিশ করতেন সেই গোলঘরও পুড়ে ছাই। এত আগুন ফায়ার সার্ভিস ছাড়া নেভানো সম্ভব নয়। এক রাতের ব্যবধানে সব মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। গোলাম মাওলা নামে মোহাম্মদ আলীর এক অনুসারী বলেন, রাতে ছাত্রদের মিছিল থেকে প্রথমে মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে এক দফা হামলা হয়েছিল। পরে আবার রাতে দ্বিতীয় দফায় দুটি বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। এছাড়া সাতটি স্পিডবোট ও চারটি ট্রলারেও আগুন দেয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ছাত্রদের হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার সুযোগে বাড়ি দুটিতে ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসকে অবহিত করার পরও কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। মোহাম্মদ আলীর ছোট ছেলে মাহতাব আলী অদ্রি বলেন, আমার বাবা-মা-ভাই জেলে আছেন। আমাদের দুটি বাড়িতে কেউই থাকেন না। ছাত্র-জনতার আগুনে অন্তত ৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমাদের পরিবারের সবাই জেলে থাকার পরও আমাদের বাড়িতে এভাবে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-লুটপাটের ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। ফায়ার সার্ভিসের হাতিয়া স্টেশনের সেকেন্ড লিডার হারুনুর রশিদ বলেন, রাতে আগুন দেয়ার ঘটনার পর আমাদের ফোনে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। কিন্তু আমরা পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও পাইনি। তাই নিরাপত্তাহীনতার কারণে আগুন নেভাতে যেতে পারিনি।

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আজমল হুদা বলেন, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে আমাদের ঘটনাস্থলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। যদি থাকত তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম। সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদের বাড়ি ও গাড়ি ভাঙচুর : জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে? বিতর্কিত সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ব্যক্তিগত গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে উপজেলার আওনা ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এ ঘটনা ঘটায়। প্রায় একই সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশার বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পতনের পর থেকেই সপরিবারে পলাতক মুরাদ হাসান। শেখ হাসিনার লাইভ বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর মুরাদের বাড়িতেও একই ঘটনা ঘটে। এসময় মুরাদ হাসানের ব্যক্তিগত গাড়িটিও ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা। ডা. মুরাদ হাসান ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালে দ্বিতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তাকে প্রথমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এবং পরে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ্ অপসারণ, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের মেয়ে জায়মা রহমানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। এছাড়াও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সাথে মুরাদ হাসানের একটি অশ্লীল ফোনালাপ ভাইরাল হয়। পরে সরকার তাকে মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দিলে পালিয়ে কানাডা যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হন। বগুড়ায় আওয়ামী লীগ, জাপা ও জাসদ অফিস ভাঙচুর : গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে বুলডোজার দিয়ে বগুড়া শহরের সাতমাথা টেম্পল সড়কে জেলা আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জাসদের অফিস গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বুলডোজার দিয়ে এ কার্যক্রম পরিচালনা করে। জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে বগুড়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রবেশ করে। তারা ১২ তলা ভবনের নিচতলায় শেখ হাসিনার নাম ফলক হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলে। রাত ৮টার দিকে স্টেশন রোড, নবাববাড়ি সড়ক দিয়ে দুই শতাধিক ছাত্র-জনতা ‘দিল্লি না ঢাকা’ ‘ঢাকা- ঢাকা’ ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিয়ে শহরের সাতমাথা সংলগ্ন টেম্পল রোডে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ অফিস হামলা চালিয়ে হাতুড়ি দিয়ে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগ অফিস সংলগ্ন জেলা জাসদ কার্যালয় ভাঙচুর করে। পরে তারা অফিসের ভেতর থেকে আসবাবপত্র বাহিরে বের করে আগুন ধরিয়ে দেয়। রাত ৯টা পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগ অফিস ও জাসদ অফিসের সামনে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে। এরপর রাত সোয়া ৯টার দিকে কাজী নজরুল ইসলাম সড়কে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। তারা কার্যালয় ভাঙচুর করে অফিসের ভেতর থেকে আসবাবপত্র বাহিরে বের করে রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেয়। রাত পৌনে ১০টার দিকে টেম্পল সড়কে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বুলডোজার নিয়ে আসে। এরপর তারা প্রথমে জেলা আওয়ামী লীগ অফিস গুঁড়িয়ে দেয়া শুরু করে। এরপর রাত ২টার দিকে শহরের কাজী নজরুল ইসলাম সড়কে জাতীয় পার্টি অফিস বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া।সাবেক সেনা কর্মকর্তার বাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ : উত্তেজিত জনতা সাবেক সেনা কর্মকর্তা লে. জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর গ্রামের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। ফেনীর সোনাগাজীতে সেনাবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর গ্রামের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। তিনি ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভূঞা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য। গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ৫০-৬০ জন উত্তেজিত জনতা সোনাগাজীর মতিগঞ্জ ইউনিয়নের সুলাখালী গ্রামে অবস্থিত মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে এ ভাঙচুর করে। পরে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে মাসুদ চৌধুরীর বসতবাড়ি, কাচারি ও রেস্ট হাউজে অগ্নিসংযোগ করে। বিক্ষুব্ধ জনতা বলেন, ওয়ান ইলেভেনের খলনায়ক মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর ছিলেন। সে বিনাভোটে পর পর দুইবার সংসদ সদস্য হয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের পর উত্তোজিত জনতা রাত ৮টার সময় পাশে সোনাপুর গ্রামে অবস্থিত আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সোনাগাজী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আজিজুল হক হিরনের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এসময় তারা বলেন, আজিজুল হক হিরন ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর মামাতো ভাই পরিচয় দিয়ে টেন্ডার-বাণিজ্য থেকে শুরু করে নানা অপকর্ম করতেন। এছাড়াও বিক্ষুব্ধ জনতা আলোচিত ছাগলকাণ্ডের মতিউর রহমানের শ্বশুরবাড়িতেও বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙচুর করে। সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ চৌধুরীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত