যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা দখলের হুমকি দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার তিনি এমন হুমকি দেয়ার পর এ নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার নতুন করে আবারো গাজা নিয়ে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। তার দাবি, যুদ্ধ শেষে ইসরায়েলই গাজাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবে। গাজা দখল করতে তাদের কোনো সেনার প্রয়োজন হবে না। সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথে’ ট্রাম্প লিখেছেন, যুদ্ধ শেষে ইসরায়েল গাজা উপত্যকাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তুলে দেবে। গাজাবাসীকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে ট্রাম্প দাবি করেন, অনেকেই সেখান থেকে উন্নত জায়গায় চলে গেছে। যেখানে তারা ভালো আছে। নতুন করে যারা যাবে তারাও ‘খুশি, নিরাপদ এবং মুক্ত’ থাকতে পারবেন।
গাজাকে বিশ্বের অন্যতম সুন্দর শহরে পরিণত করা হবে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সেরা ডেভেলপমেন্ট দলের সঙ্গে কাজ করছে এবং ধীরগতি ও সতর্কতার সাথে গাজাকে পুনর্গঠন শুরু করবে। যেটি হবে বিশ্বের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন শহর। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সেনাকে প্রয়োজন হবে না। মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাই থাকবে।
এদিকে ট্রাম্পের গাজা দখলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন সেখানকার মানুষ। এক ফিলিস্তিনি নারী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা গাজাতেই থাকবেন এবং গাজাতেই মরবেন। তিনি বলেন, গাজা থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা এখানে থাকব এবং গাজা ভূখণ্ডে, জন্মভূমিতে মরব। আমরা দেড় বছরের যুদ্ধ, মৃত্যু ও ধ্বংস মোকাবিলা করেছি। এরপরও আমরা এখানে রয়েছি। তাহলে আমরা কীভাবে এ ধরনের প্রস্তাবে রাজি হতে পারি। গত মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে হোয়াইট হাউজে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে গাজার সাধারণ মানুষকে অন্যত্র সরানোর ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এরপরই বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় শুরু হয়েছে। টানা ১৫ মাসের যুদ্ধে বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি জাতিগত নিধনে ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থন করছেন বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন তত্ত্ব দিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সৌদি আরবের ভূখণ্ড ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্ভট তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছেন তিনি। ফিলিস্তিনিদের প্রস্তাবিত গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিকে ঔদ্ধত্যের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছেন ইসরায়েলের উগ্রবাদী এই প্রধানমন্ত্রী।
গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের ডানপন্থি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ফোরটিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু দাবি করেন, ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে দেয়ার মতো যথেষ্ট জায়গা সৌদি আরবে আছে। তিনি বলেন, সৌদি কর্তৃপক্ষ সৌদি আরবে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে। সেখানে তাদের অনেক ভূমি আছে। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শর্ত দিয়েছে সৌদি আরব। সে প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল রাষ্ট্রকে বিপন্ন করবে, এমন কোনো চুক্তি তিনি করবেন না।
নেতানিয়াহু বলেন, বিশেষ করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র তো নয়ই। ৭ অক্টোবরের পরও? আপনি কি জানেন সেটা কী? একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ছিল, এটিকে গাজা বলা হতো। হামাসের নেতৃত্বে গাজা ছিল একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র এবং দেখুন, আমরা কী পেয়েছি, হলোকাস্টের পর সবচেয়ে বড় গণহত্যা।
যুক্তরাষ্ট্র সফরের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন নেতানিয়াহু। ওই সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিতে তার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এছাড়া দুই নেতা সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, আমি মনে করি, ইসরায়েল এবং সৌদি আরবের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি কেবল সম্ভাবনাই নয়, আমি মনে করি, এটি ঘটতে চলেছে।
তবে ওই সংবাদ সম্মেলনের পরপরই সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবে না। গাজাবাসী ফিলিস্তিনিদের ‘স্বেচ্ছায়’ এই উপত্যকা ত্যাগে বাধ্য করার জন্য ইহুদিবাদী সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন দখলদার সরকারের যুদ্ধমন্ত্রী ইসরাইল কাতজ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প গাজাবাসীকে এই উপত্যকার বাইরে স্থানান্তর এবং গাজা দখল করার পরিকল্পনা তুলে ধরার পর গত বৃহস্পতিবার কাতজ এই নির্দেশ দেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, আমি গাজার অধিবাসীদের স্বেচ্ছায় উপত্যকা থেকে সরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে একটি পরিকল্পনা তৈরি করার জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি। ইহুদিবাদী যুদ্ধমন্ত্রী আরো স্পষ্ট করে বলেন, গাজার কোনো অধিবাসী যদি উপত্যকা ত্যাগ করতে চায় এবং বিশ্বের কোনো দেশ তাকে গ্রহণ করতে রাজি হয় তাহলে ইসরাইলি সেনাবাহিনী তার চলে যাওয়ার পুরো ব্যবস্থা করে দেবে। কাতজ বলেন, স্থল ক্রসিংগুলোর পাশাপাশি সাগর বা আকাশপথেও যাতে গাজাবাসীকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া যায় সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হবে। ইসরাইলি যুদ্ধমন্ত্রী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে গাজাবাসীর একটি বিশাল অংশ সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশে পুনর্বাসিত হতে পারবে।