ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বিদেশে পালিয়ে গেলেও তাদের ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা দেশের ভেতরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। যার প্রকৃত উদাহরণ ঢাকার গাজীপুরে সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে পরিকল্পিতভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা। ওই হামলার ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে সারা দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু হচ্ছে।
জানা গেছে, গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণের ঘটনায় গতকাল শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সারা দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, পুলিশের মহাপরিদর্শক, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) মহাপরিচালক, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএএফআই) মহাপরিচালক, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক এবং সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি ছিলেন। অভিযানের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা তুলে ধরতে আজকে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য জানাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক ফয়সল হাসান বলেন, গাজীপুরসহ সারা দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অভিযান শুরু হবে। গত শুক্রবার রাতে গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণের ঘটনায় গতকাল শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি এবং সেগুলো জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহারের চেষ্টা চলছে। তাই অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করবে।
তিনি বলেন, লাইসেন্সধারী বেশিরভাগ অস্ত্র পুলিশের কাছে জমা দেয়া হলেও লুট হওয়া অস্ত্রের বড় অংশ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী, পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তি দেশে অস্ত্র প্রবেশ করানোর মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। এ কারণে অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান ফের শুরু হবে। আসিফ মাহমুদ বলেন, পরাজিত কোনো শক্তি যদি জনগণের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকার সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ অভিযানের নির্দেশনা দেবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের ভেতরে অপরাধের অঙ্গরাজ্য করেছিল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের পতন ঘটলেও তাদের সন্ত্রাসীরা রাজত্ব টিকিয়ে রাখতে দেশকে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা করছে। এসব সন্ত্রাসীদের দমনে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে দেশব্যাপী ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ চালানো হবে। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ছয় মাস শেষ হয়েছে, এরপরও গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে নগরের ধীরাশ্রম দাক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীদের ওপর পরিকল্পতি হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এভাবে চললে ফ্যাসিস্টদের কোনোভাবেই দমানো সম্ভব নয়। সেজন্য পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসী দমনে কঠোর হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জানা গেছে, গত শুক্রবার হামলায় আহতদের সবাইকেই প্রথমে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে রাত ১টার দিকে গুরুতর আহত সাতজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।