ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

গুলশানে বিলাসবহুল ভবনে থাকতেন টিউলিপ!

গুলশানে বিলাসবহুল ভবনে থাকতেন টিউলিপ!

ঢাকার একটি বিলাসবহুল ১০তলা ভবনের বাসিন্দা হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিকের নাম তালিকাভুক্ত ছিল। তার পরিবারের নামে ভবনটির নামকরণ হয়। গত শনিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ। টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের সাবেক দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী। তিনি দেশটির ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি)। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার খালা। প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার কর্মকর্তাদের ধারণা, ২০১৪ সালে টিউলিপের ‘স্থায়ী ঠিকানা’ ছিল ‘সিদ্দিকস’ নামের ওই অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স। ওই সময় তিনি যুক্তরাজ্যের উত্তর লন্ডনের ক্যামডেনের কাউন্সিলর ছিলেন। অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সটির অবস্থান ঢাকার গুলশানে। এই এলাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের পাশাপাশি বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, এ নিয়ে বাংলাদেশে টিউলিপের সঙ্গে সম্পর্কিত পঞ্চম সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গেল। যদিও যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশে টিউলিপের কোনো সম্পত্তি নেই। তাই এ নিয়ে কোনো প্রশ্নের জবাব দেয়ারও দরকার নেই। যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে টিউলিপ সিদ্দিক প্রায় এক মাস আগে পদত্যাগ করেন। কিন্তু তিনি এখনো সম্পত্তিসংক্রান্ত বিষয়সহ বাংলাদেশে তার খালা শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের সঙ্গে যোগসূত্র নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন। টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভার সদস্যদের মানদ-বিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা লাউরি ম্যাগনাস তদন্ত করেন। তদন্তে তিনি দেখতে পান, শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক ব্যক্তির কাছ থেকে টিউলিপ উপহার পান একটি ফ্ল্যাট। এ নিয়ে তিনি অসাবধানতাবশত জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন। এই তদন্তের জেরে টিউলিপ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। অল্প সময়ের জন্য সিটি মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন টিউলিপ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা ছিল তার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত বিষয়। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তির লন্ডনের সম্পত্তি ব্যবহার করা নিয়ে কয়েক সপ্তাহের প্রশ্নের পরে টিউলিপ তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের জন্য লাউরির প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। ৭৭ বছর বয়সি শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে এখন তিনি ভারতে আছেন। এ ঘটনায় দেড় হাজার মানুষ নিহত হন।

শেখ হাসিনার শাসনামলে বিরোধীদের ওপর হামলা, গ্রেপ্তার এবং গোপনে কারাগারে বন্দি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই সময় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল। গাজীপুরের কানাইয়া এলাকায় ‘টিউলিপস টেরিটরি’ নামের প্লটসহ একটি পারিবারিক অবকাশযাপনের বাগানবাড়ি নিয়ে তদন্ত করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন। এ তথ্য সামনে আসার এক দিন পর গতকাল শনিবার গুলশানের সম্পত্তির সঙ্গে টিউলিপের যোগসূত্রের তথ্য জানতে পারে দ্য টেলিগ্রাফ। একটি আনুষ্ঠানিক নথিতে দেখা যায়, গুলশানের সম্পত্তিটি টিউলিপের ‘বর্তমান’ ও ‘স্থায়ী’ উভয় ঠিকানা হিসেবেই বিবেচিত হয়েছিল। একটি অফিসিয়াল নথিতে দেখা যায়, সম্পত্তিটি তার ‘বর্তমান’ এবং ‘স্থায়ী’ ঠিকানা উভয়ই বিবেচনা করা হয়েছিল। নথিটি প্রকাশ হয় ২০১৪ সালের মে মাসে টিউলিপের ক্যামডেনের কাউন্সিলর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর তিন সপ্তাহ পর। গুলশান এলাকার ১০ তলা অ্যাপার্টমেন্টটি ২০১০ সালের দিকে নির্মিত হয়। একটি প্রচারমূলক ভিডিওর তথ্য অনুসারে, ফ্ল্যাটে একাধিক বারান্দা ও তিনটি শয়নকক্ষ রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর একটি ঢাকা। এ শহরে দুই কোটির বেশি মানুষ বসবাস করে। ঢাকার বেশিরভাগ অধিবাসী যে পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করেন, তার বিপরীত চিত্র এসব প্রশস্ত ফ্ল্যাট। ভবনটি টিউলিপের বাবা শফিক আহমেদ সিদ্দিক, টিউলিপের নানা কিংবা এই পরিবারের নামে কি না, তা-ও স্পষ্ট নয়। সম্পত্তিটি সম্পর্কে জানা এক ব্যক্তির ধারণা, এই পরিবারের এক সদস্যের মালিকানাধীন জমিতে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু এই ভবনের কোনো ফ্ল্যাটের মালিক এই পরিবার কি না কিংবা বিশেষভাবে এটি কার নামে নামকরণ করা হয়েছে, সে সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত