ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

বিশ্বের শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশ হতে চায় বাংলাদেশ

* কাতারের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার * আমরা যে সভ্যতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি তা আত্মবিনাশী, বললেন ড. ইউনূস
বিশ্বের শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশ হতে চায় বাংলাদেশ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের কাতার সফরের শেষ দিনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল থানির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার কাতারের রাজধানী দোহায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার অফিশিয়াল ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়েছে। চার দিনের এ সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করার কথা রয়েছে। আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫-এ যোগ দিতে গত সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় দোহার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি গত সোমবার কাতারের স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৪০ মিনিটে দোহায় হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

দোহায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি হতে চায় বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, বর্তমানে সরকার এ অঞ্চলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ পরিবেশ গড়ে তুলেছে বাংলাদেশে। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে একটি উৎপাদন ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রে রূপান্তরের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার কাতারের রাজধানী দোহায় কয়েকজন খ্যাতনামা বিদেশি বিনিয়োগকারীর সঙ্গে বৈঠকে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, বাংলাদেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অংশ নেন মালদ্বীপের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী, মালয়েশিয়ার রাজপরিবারের এক সদস্য, মালয়েশিয়ার সাবেক এক মন্ত্রী, কাতারের রাজপরিবারের সদস্য, শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকার ও বেশ কয়েকজন ধনাঢ্য প্রবাসী বাংলাদেশি।

বৈঠকে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে একটি উৎপাদন ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রে রূপান্তরের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। সরকার সব ধরনের বিদেশি বিনিয়োগ স্বাগত জানায়। বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের উৎপাদন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জ্বালানি, ব্যাংকিং এবং পর্যটন খাতে- বিশেষ করে কক্সবাজারের রিসোর্ট এলাকায় বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। পাশাপাশি বিনিয়োগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানান। বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কাতারের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, আপনারা এ সুযোগ নিতে পারেন। গত বুধবার রাতে কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ এখন আবার ব্যবসায় ফিরেছে এবং তা বড় পরিসরে। আমরা আপনাদের অংশীদারিত্ব চাই। প্রধান উপদেষ্টা জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে এবং একটি দুর্নীতিমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি নরওয়েজিয়ান টেলিকম অপারেটর টেলেনরকে বাংলাদেশে কীভাবে একটি টেলিফোন কোম্পানি গঠন করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল সে প্রেরণাদায়ক গল্পটি তুলে ধরেন, যা পরে টেলেনরের সবচেয়ে লাভজনক উদ্যোগে পরিণত হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ফোরাম, কাতারের সভাপতি আজাদ আশরাফ স্বাগত বক্তব্য দেন।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী সম্ভাব্য কাতারি বিনিয়োগকারী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়ে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আপনি যদি কখনও বাংলাদেশকে বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করেন, তাহলে এখনই সম্ভবত সবচেয়ে ভালো সময়।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখন বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে ৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অনাদায়ী ঋণ ছিল, যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৬০০ মিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে কাতার এনার্জির কাছে ২৫৪ মিলিয়ন ডলারের বকেয়া ছিল, যা গত বুধবারের মধ্যে শূন্যে নেমে এসেছে বলে তিনি জানান। তিনি জ্বালানি নিরাপত্তা এবং উন্নত অবকাঠামো নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে কাতারের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি সালেহ মাজেদ আল খালাফি, নেক্সট স্মার্ট সলিউশনসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আলি বেন ফার্জসহ অন্যরা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন।

আমরা যে সভ্যতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি তা আত্মবিনাশী বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় দুপুরে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের বি২৩৯ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। ড. ইউনূস বলেন, আমরা যে সভ্যতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি তা আত্মবিনাশী। এ সভ্যতা শুধু বিশ্বজুড়ে বর্জ্য তৈরি করছে। এক সময় যা আমাদের বিনাশ করবে।

‘তিন শূন্যের একটি বিশ্ব নির্মাণ: শূন্য নেট কার্বন নির্গমন, শূন্য সম্পদ মজুদ এবং শূন্য বেকারত্ব’ শীর্ষক অধিবেশনের আয়োজন করে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়। এতে ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্বের ওপর বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত