ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

তেলআবিব-হাইফায় হাইপারসনিক হামলা, আশ্রয়কেন্দ্রে ২০ লাখ

তেলআবিব-হাইফায় হাইপারসনিক হামলা, আশ্রয়কেন্দ্রে ২০ লাখ

ইয়েমেনের হুথি আনসার-আল্লাহর নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র বাহিনী গত বুধবার ইসরায়েলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে শীর্ষস্তরের হামলা চালিয়েছে। বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি জানিয়েছেন, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনী হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক মিসাইল ব্যবহার করে হাইফা অঞ্চলে ইসরায়েলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালায়। তিনি নিশ্চিত করেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি সফলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে এবং ইসরায়েলি ইন্টারসেপশন সিস্টেমগুলো এটি প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়। তিনি বলেন, এই হামলার ফলে বসতি স্থাপনকারীদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ২০ লাখেরও বেশি ইসরায়েলি তড়িঘড়ি করে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যান। এদিকে, ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর ড্রোন ইউনিট তেলআবিবের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আঘাত হেনেছে। ‘ইয়াফা’ শ্রেণির ড্রোন ব্যবহার করে এই হামলা চালানো হয় বলে জানান ব্রিগেডিয়ার সারি। তিনি বলেন, মার্কিন মদতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকায় যে গণহত্যা চালাচ্ছে, তার জবাবে এবং ফিলিস্তিনি জনগণ ও তার সাহসী প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রতি সংহতি জানিয়ে এই হামলাগুলো চালানো হয়। হুথি আনসার-আল্লাহর সামরিক মুখপাত্র নিশ্চিত করেন, কোনো প্রতিবন্ধকতাই তাদের নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি ধর্মীয়, নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখতে পারবে না। এদিকে, গত মঙ্গলবার বিকালে উত্তর ইয়েমেনের সা-দা, পশ্চিম ইয়েমেনের কামারান আইল্যান্ড ও আল সালিফে চার দফা হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী। হাজ্জাহ প্রদেশে শত্রুতামূলক মিশন পরিচালনার সময় আনসার-আল্লাহর যোদ্ধারা একটি মার্কিন এমকিউ-নাইন ড্রোন ভূপাতিত করার পর এই হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী। নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি মিসাইল দিয়ে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করা হয় বলে জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি। ইসরায়েলি বন্দির ভিডিও, ধুয়ে দিলেন নেতানিয়াহুকে: আরও এক ইসরায়েলি বন্দির ভিডিও প্রকাশ করেছে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডস। ‘টাইম ইজ রানিং আউট’ সিরিজের অংশ হিসেবে ওমরি মিরানের এই ভিডিও প্রকাশ করা হয়। ভিডিওতে মিরান ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সমর্থকদের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘তারা বন্দিদের বিষয় আমলেই নিচ্ছেন না। আর, ইসরায়েলি বাহিনী সামরিক অভিযান চালানোর কারণে আমরা প্রচণ্ড আতঙ্কের মধ্যে সময় কাটাচ্ছি।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘এই সামরিক অভিযান বন্দিদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ, নেতানিয়াহু বলছেন, তিনি বন্দিদের মুক্ত করতে চান।’ মিরান ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘নেতানিয়াহুর কথা বিশ্বাস করবেন না।’ তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে আবেদন করার জন্য ইসরায়েলিদের প্রতি আহ্বান জানান, তিনি যেন বন্দিদের ঘরে ফেরাতে নেতানিয়াহুর ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। ভিডিওতে এই বন্দি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের চালানো অভিযানের জন্য নেতানিয়াহু, মন্ত্রী ইতামার বেন গিভির, বেজালের স্মোট্রিচ ও রন ডার্মারকে দায়ী করেন। তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কারণেই আমি এখানে, আপনাদের কারণেই আমরা সবাই এখানে; আপনাদের কারণেই দেশ আজ ধ্বংস হতে চলেছে।’ হামাসের টানেলব্যবস্থা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে ইসরায়েল: গাজা উপত্যকায় হামাসের টানেলব্যবস্থা মোকাবিলায় রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সেখানে দখলদার বাহিনীর সামনে যে কঠিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেইদিকে ইঙ্গিত করে ইসরায়েলি সামরিক বিশ্লেষক আভি আশকেনাজি বলেছেন, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ টানেলের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর তৎপরতা চামচ দিয়ে সমুদ্র সেঁচার মতো। একই সঙ্গে তিনি গাজার যুদ্ধকে ইসরায়েলি বাহিনীর জন্য একটি জটিল চ্যালেঞ্জ হিসেবেও উল্লেখ করেন। এক সাক্ষাৎকারে আভি বলেছেন, গাজায় এখনও হাজার হাজার সুড়ঙ্গ চিহ্নিত করা যায়নি। আপনি যেখানেই পা রাখবেন, সেখানেই একটি সুড়ঙ্গ রয়েছে। প্রাথমিক অনুমানের বিপরীতে হামাস এখনও তাদের যুদ্ধক্ষমতা বজায় রেখেছে এবং তাদের বিশাল বাহিনী রয়েছে। রাফাহ এবং অন্যান্য এলাকায় হামাস শত শত কিংবা সম্ভবত আরও বেশি যোদ্ধাকে সুড়ঙ্গের মাধ্যমে আল-মাওয়াসি এলাকায় স্থানান্তরিত করেছে। ইসরায়েলি এই বিশ্লেষক আরও বলেন, বাস্তবতা হলো- যুদ্ধটি বর্তমানে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর জন্য খুবই জটিল। এই সেনাবাহিনী এমন একটি বাহিনীর মুখোমুখি হচ্ছে, যারা গেরিলা যুদ্ধে পারদর্শী। আশকেনাজির মতে, হামাস যোদ্ধারা সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে এসে গুলি চালিয়ে আবার হারিয়ে যান এবং এ ঘটনা একই দিনে বহুবার ঘটে। এর জন্য ইসরায়েলি বাহিনীর সতর্কতা প্রয়োজন। কিন্তু প্রশ্ন হলো- তাদের পক্ষে কি সবসময় সজাগ এবং সতর্ক থাকা সম্ভব? এর আগে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর রেডিও গাজা উপত্যকার যুদ্ধক্ষেত্রে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর রিজার্ভ সেনাদের যোগ দিতে অনীহা এবং সেনা ঘাটতির কথা উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ গাজার রাফাহ এলাকায় বর্তমানে উপস্থিত একমাত্র রিজার্ভ ব্রিগেড হলো ব্রিগেড-টু-জিরো-ফাইভ। বিভিন্ন অসুবিধার কারণে এই ব্রিগেডের মাত্র ৬০ শতাংশ বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। গাজা উপত্যকায় বৃহৎ আকারের সামরিক অভিযানে বিলম্বের কারণ হলো, অভিযান চালানোর জন্য পর্যাপ্ত রিজার্ভ বাহিনী না থাকা। আশকেনাজি বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী সেনার ঘাটতিসহ অসংখ্য সমস্যার মুখোমুখি। এখন তারা অভিযানে বৃহৎ বাহিনী পাঠাতে চান, তবুও এটি বিপজ্জনক। কারণ, এতে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ইসরায়েলি বাহিনীকে আরও তীব্রভাবে আঘাত করতে বাধ্য হবেন। আর এ ঘটনা ইসরায়েলি বন্দিদের জীবনকে আরও বিপন্ন করে তুলবে।

দাবানলে পুড়ছে ইসরায়েলের কয়েকটি শহর: নেতানিয়াহু যখন গাজায় গণহত্যায় ব্যস্ত, তখন ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে ইসরায়েল। তীব্র তাপ এবং প্রবল বাতাসের কারণে দেশটির বেশ কয়েকটি শহরে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। এসব শহরের বাসিন্দাদের এরইমধ্যে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আগুনের কারণে শহরের সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। লাইনের কাছে আগুন লাগায় ট্রেন চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অ্যাডহক কমান্ড সেন্টারে জরুরি বৈঠকে অংশ নিয়েছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। খবরে বলা হয়, মধ্য ইসরায়েলের মোশাভ তারুমের কাছে আগুনের সূত্রপাত হয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং তীব্র বাতাসের কারণে তা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বেইত শেমেশ শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে আগুন লাগে। এক পর্যায়ে আগুন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এছাড়াও এশতাওল, বেইত মেইর ও মেসিলাত জিওন শহর থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভয়াবহ আগুনের ফলে সড়কের গাড়িচালকরা তাদের যানবাহনকে ফেলেই শহর ছাড়তে বাধ্য হন। জনগণকে সাবধানতা অবলম্বন করতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। দাবানল ছড়িয়ে পড়া এলাকা থেকে জেরুজালেমে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ করে দিয়েছেন তারা। বিমানের সাহায্যে আগুন নেভানোর কাজ শুরু হয়েছে। আগুন নেভাতে গিয়ে সাতজন দমকলকর্মীসহ কমপক্ষে নয়জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল। ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ অথরিটির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, আগুন নেভাতে গিয়ে ৯ জন ব্যক্তি আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে সাতজন দমকলকর্মী এবং দুজন বেসামরিক নাগরিক। তিনি বলেন, দাবানলের স্থান থেকে জেরুজালেম প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে। এরপরও জেরুজালেমের আকাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন, খুব দ্রুত বাতাস দূষিত হয়ে পড়ছে। তিনি আরও জানান, ছয়টি জেলা থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। তাদের সঙ্গে সেনা সদস্যরাও যোগ দিয়েছেন। বেইত শেমেশের উত্তরে দাবানল নেভাতে প্রায় ১১০টি অগ্নিনির্বাপক দল, ১১টি অগ্নিনির্বাপক বিমান ও একটি হেলিকপ্টার কাজ করছে। তাদের সঙ্গে আছে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী, উদ্ধার পরিষেবা ও পুলিশ। সামাজিকমাধ্যমে প্রকাশিত ফুটেজে দেখা গেছে, রেহোভোটের কাছে মহাসড়ক ধরে হেঁটে যাওয়া লোকজনের ভিড়, চারপাশ ভারি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। এমন সময় ইসরায়েলে ভয়াবহ দাবানলের এ ঘটনা ঘটল, যখন নেতানিয়াহুর পুরো প্রশাসন ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গণহত্যামূলক যুদ্ধে ব্যস্ত। হামাসকে গালি দিলেন মাহমুদ আব্বাস: ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে ‘কুত্তার বাচ্চা’ বলে গালি দিয়েছেন পশ্চিমাদের দালাল হিসেবে পরিচিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। রামাল্লায় এক বক্তেব্যে হামাসকে নিয়ে এমন মন্তব্য করে তিনি ইসরায়েলি বন্দিদের, বিশেষ করে আমেরিকান-ইসরায়েলি বন্দি এডেন আলেক্সান্ডারের মুক্তি দাবি করেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর এটাই হামাসের বিরুদ্ধে আব্বাসের সবচেয়ে কঠোর মন্তব্য। আব্বাসের এমন মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে হামাস। বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য বাসেম নাইম বলেছেন, মাহমুদ আব্বাস নিজের লোকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের প্রতি অবমাননাকর ভাষা ব্যবহার করেছেন। মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন পিএ এখন পশ্চিমতীরের একাংশ শাসন করছে। ২০০৭ সালে গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উপত্যকাটি শাসন করছে হামাস। তার আগে হামাস ফিলিস্তিনের নির্বাচনে জয়ী হলেও পশ্চিমাদের যোগসাজসে মাহমুদ আব্বাস পুরো ফিলিস্তিনের শাসনভার গ্রহণ থেকে হামাসকে বঞ্চিত করেন। তখন থেকে হামাস ও মাহমুদ আব্বাসের সম্পর্ক চরম তিক্ততায় রূপান্তরিত হয়। পশ্চিমাদের চাওয়া অনুযায়ী ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে আসছেন মাহমুদ আব্বাস। এ কারণে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঙ্গে আব্বাসের সম্পর্ক সাপে-নেউলে। এই প্রেক্ষাপটে মাহমুদ আব্বাস বলেন, ‘হামাসকে গাজার নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে হবে এবং তাদের হাতে থাকা অস্ত্র হস্তান্তর করে নিজেদের রাজনৈতিক দলে রূপান্তর করতে হবে।’ হামাসের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কুত্তার বাচ্চারা, যাদের আটকে রেখেছ, তাদের ছেড়ে দাও। তাদের সুযোগ দেওয়া বন্ধ কর এবং আমাদের মুক্তি দাও। তোমাদের কারণেই ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যাওয়ার অজুহাত পেয়েছে।’ গাজায় আরও ৪৫ ফিলিস্তিনি নিহত: আলজাজিরা জানিয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। রাতভর গাজায় হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত