অস্থির হয়ে উঠেছে সবজির বাজার। শীত মৌসুমের সবজি নিয়ে গত তিন-চার মাস সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে যে স্বস্তি ছিল, তা আর নেই। বাজারে এখন বেশির ভাগ সবজির দাম ৭০ টাকার ওপরে। পাশাপাশি বাড়তির তালিকায় রয়েছে পেঁয়াজ ও ডিম। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজারগুলোতে প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়শ, পটোল, শালগম, ঝিঙা, চিচিঙ্গার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। উচ্ছে ও বেগুন কিনতে খরচ করতে হচ্ছে কেজিতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এর চেয়ে বেশি দর দেখা গেছে বরবটি ও কাঁকরোলের। গ্রীষ্মকালীন এসব সবজি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। শজিনার দর সব সময় কিছুটা বেশি থাকে। এর কেজি দেখা গেছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। গাজর ও টমেটোর কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। দাম বেড়েছে শসারও। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম। মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকায়। আলুর দর এখনও কম। প্রতি কেজি কেনা যাচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকায়। সবজির দাম বাড়লেও গত বছরের এই সময়ের তুলনায় কিছুটা কম রয়েছে। তখন বেশির ভাগ সবজির দাম ৮০ টাকার ওপরে ছিল।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, শীতকালীন সবজির মৌসুম শেষ হয়ে এসেছে। এখন গ্রীষ্মকালীন কিছু সবজি আসা শুরু হয়েছে। এগুলোর উৎপাদন খরচ তুলনামূলক বেশি। দামও শুরুর দিকে একটু বেশি থাকে। তাদের ভাষ্য, এবার শীত মৌসুমে সবজির দাম অনেক কম ছিল। এতে কৃষকদের লোকসান গুনতে হয়েছে। ফলে এখন তারা কিছুটা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।
কারওয়ান বাজারের একজন সবজি বিক্রেতা বলেন, দর কমে যাওয়ায় এ বছর অনেক কৃষকের লোকসান হয়েছে। এখন যেসব সবজি আসছে, সেগুলোর উৎপাদন ব্যয় কিছুটা বেশি। সে জন্য কৃষক দাম একটু বেশি নিচ্ছেন।
ক্রেতারা বলছেন, রোজায় সবজির দাম কম থাকলেও, ঈদের পর থেকেই বাজার চড়া। তাদের দাবি দাম কমাতে বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখতে হবে। এদিকে এক সপ্তাহ ধরে চড়া পেঁয়াজের বাজার। এ সময় কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে ভালো মানের প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায়। পাড়া-মহল্লায় এ দাম আরও বেশি। এ ছাড়া হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজের কেজি কেনা যাচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়।
রোজার শুরু থেকে কমতে শুরু করে ডিমের দাম। এক পর্যায়ে ফার্মের ডিমের ডজন ১১৫ টাকায় নেমে এসেছিল। তবে তিন-চার দিন ধরে বাড়ছে। বর্তমানে ফার্মের প্রতি ডজন ডিম (বাদামি রং) বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়।
রোজার শেষদিকে এসে মুরগির দাম বেড়েছিল। তবে এখন অনেকটা কম। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা ও সোনালি জাতের মুরগি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা।
তেলের বাজারও অস্থির। ভোজ্যতেলের বাজারে বোতলের আকাল এখনও আছে। খোলা সয়াবিন ও পামওয়েলের সরবরাহে ঘাটতি দেখা যায়নি। পাঁচ লিটারের বোতলের সরবরাহ কিছুটা কম রয়েছে। দুই-তিন মাস ধরে বোতলজাত তেলের সরবরাহ ঘাটতি নিয়েই চলছে বাজার।
এদিকে, বিগত বছরের চেয়ে কেজিতে চার টাকা বেশি দামে ধান-চাল ক্রয় করছে সরকার। সরকারের বেশি দামে কেনার কারণে বাজারে চালের দাম কিছুটা বাড়বে বলে জানিয়েছেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে ধান সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধন অনুষ্ঠানে খাদ্য উপদেষ্টা এ কথা বলেন। খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, ধান-চাল ক্রয় নিয়ে কোনো সিন্ডিকেট আর হবে না, হতে দেবে না সরকার। কৃষকের স্বার্থে বিগত বছরের চেয়ে বেশি দামে ধান ও চাল কিনছে সরকার। তিনি বলেন, বিগত আমন ধান সংগ্রহ অভিযানে কোনো সিন্ডিকেট ছিল না, বোরো সংগ্রহেও কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না। বিগত সরকারের আমলে কী হয়েছে, না হয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে এখন কোনো সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব থাকবে না।
সরকারি সভার মাধ্যমে অনেক বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা করে ধান-চালের মূল্য নির্ধারণ করা হয় বলে জানান উপদেষ্টা। সরকার প্রতি কেজি ধান ৩৬ টাকা ও চাল ৪৯ টাকা কেজি দরে কিনবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, বাজারে চালের মূল্য কিছুটা বাড়তে পারে। কৃষক পরিশ্রম করে ধান উৎপাদন করে তাদের উপযুক্ত মূল্য দিতে না পারলে কৃষক ধান চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। এতে কৃষক লাভবান হবেন বলেও জানান তিনি। জানা গেছে, এবার সুনামগঞ্জে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৬৪৫ মেট্রিক টন। ৩৬ টাকা কেজি দরে ১ হাজার ৪৪০ টাকা মণ ধান সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে কিনবে সরকার।