ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর আগে হত্যার ভিডিও পাওয়া গেছে

ট্রাইব্যুনালকে প্রসিকিউশন
আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর আগে হত্যার ভিডিও পাওয়া গেছে

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোর ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আরও এক মাস বাড়ানো হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নতুন তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী ২৫ মে।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গতকাল সোমবার এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। গতকাল সোমবার মামলাটি ট্রাইব্যুনালের কার্যতালিকার দুই নম্বরে ছিল। শুনানিতে প্রসিকিউশনের (রাষ্ট্রপক্ষ) পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালকে বলা হয়, লাশ পোড়ানোর আগে হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও পাওয়া গেছে।

শুনানিতে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, এই মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। তবে এই হত্যাকাণ্ডের একটি নতুন ভিডিও পাওয়া গেছে। তাই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরও এক মাস সময় প্রয়োজন। পরে ট্রাইব্যুনাল সময়ের আবেদন মঞ্জুর করেন। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৫ মে তারিখ ধার্য করেন।

মামলার আসামি হিসেবে সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, সাবেক উপ-পরিদর্শক মালেক ও সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদারকে আজ কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

শুনানি শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। তিনি বলেন, তদন্ত করতে গিয়ে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটনের সময়ের একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। সেটা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

মিজানুল ইসলাম আরও বলেন, আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন আজ ধার্য ছিল। তারা যখন তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করছিলেন, সেই মুহূর্তে হঠাৎ করে একটা তথ্য আসে। তারা একটা ভিডিও শনাক্ত করতে পেরেছেন। তারা উদ্ধারও করেছেন। এতে দেখা গেছে যে এইখানে (আশুলিয়ায়) কারা কীভাবে হত্যা করেছেন। সেই বিষয়টা তাদের সামনে এসেছে। এ বিষয়ে তদন্ত সমাপ্ত করার জন্য কিছুদিন সময় দরকার।

এ সময় একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সব মিলিয়ে সময়ক্ষেপণ হয়ে যাচ্ছে নাকি? একটি ভিডিও একেবারে শেষের দিকে এসে পেলেন, আট মাস পেলেন না। এর ব্যাখ্যা কী?

জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, তদন্ত একটা চলমান প্রক্রিয়া। এখন কোনো তথ্য যদি আমাদের সামনে আসে নতুন করে, সেই তথ্য ইগনোর (উপেক্ষা) করে তো আমরা তদন্ত রিপোর্ট (প্রতিবেদন) দাখিল করতে পারব না। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্টের জন্য এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে এই সময়টা প্রয়োজন। এটা বিচারকে বিলম্বিত করার জন্য না, ন্যায়বিচারকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য।

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সাভারের আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এক মাস সময় মঞ্জুর করে আগামী ২৫ মে পরবর্তী দিন ঠিক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি নিয়ে সোমবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ ও প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ।

এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আবেদনের বিষয়ে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলায় তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের জন্য আজ দিন ধার্য ছিল। তবে তদন্ত পর্যায়ে আমরা একটা ভিডিও শনাক্ত করেছি। সেখানে কারা কীভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, সে বিষয়টি সামনে এসেছে। এসব যুক্ত করে তদন্ত শেষ করতে একটু সময়ের দরকার। তাই আমরা এক মাস সময় চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।

লাশ পোড়ানোর ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে গত ১৫ এপ্রিল তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল। যে তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে সেদিন কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয় তারা হলেন- ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম ও ডিবির সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন। আজ তিনজনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছিল।

লাশ পোড়ানোর নৃশংস ঘটনার বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয় তরুণকে গুলি করে হত্যার পর লাশ পুলিশ ভ্যানে রেখে আগুন লাগিয়ে দেন পুলিশ সদস্যরা। যখন এসব লাশে আগুন দেওয়া হচ্ছিল, তখন একজন জীবিত ছিলেন। জীবিত থাকা অবস্থায় তার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়।

জুলাই অভ্যুত্থানে ঢাকার আশুলিয়ায় ৬ লাশ পোড়ানোর মামলায় তদন্তের শেষ পর্যায়ে এসে হত্যার ভিডিও ফুটেজ হাতে পেয়েছে তদন্ত সংস্থা। জড়িত দুজনকে শনাক্ত করা গেছে জানানো হয়েছে। বাকিদের শনাক্তের কাজ চলছে।

গতকাল সোমবার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের দিন ঢাকার আশুলিয়ায় ঘটে এক নারকীয় হত্যাকাণ্ড। ৬ জনের নিথর দেহ গাড়িতে উঠিয়ে আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়িয়ে দেয় পুলিশ।

তদন্ত সংস্থা জানায়, তখনও একজন জীবিত ছিলেন। আগুনেই তাকে পুড়িয়ে নিশ্চিত করা হয় মৃত্যু। সেই বিভীষিকাময় দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, কেঁপে ওঠে পুরো দেশ।

এই বহুল আলোচিত মামলার তদন্ত যখন শেষের পথে, ঠিক তখনই আসে আরেকটি বিস্ফোরক ভিডিও। যেখানে ধরা পড়ে লাশ পোড়ানোর আগে গুলি করে হত্যার নির্মম চিত্র।

অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম জানান, দুজন হত্যাকারীকে শনাক্ত করা গেছে। বাকিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও জানান, নতুন করে শনাক্ত হওয়া হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে। আশুলিয়ার এ মামলায় তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার দিন ঠিক হয়েছে ২৫ মে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত