বজ্রপাতে একদিনে ৮ জেলায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার পৃথক সময়ে বজ্রপাতে তারা নিহত হন। নিহতের মধ্যে চারজন শিক্ষার্থী। নিহতদের স্বজন ও স্থানীয় প্রশাসনের বরাতে প্রতিনিধিদের তথ্য-
কুমিল্লা : বজ্রপাতে দুইজন কৃষক ও দুইজন শিক্ষার্থীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে কুমিল্লার বরুড়া ও মুরাদনগর উপজেলা এ দুর্ঘটনা ঘটে। বরুড়া উপজেলার খোশবাস ইউনিয়নের পয়ালগচ্ছ গ্রামে বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা উভয়েই বড়হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। নিহত কিশোর দুজন হলো- পয়ালগচ্ছ গ্রামের মৃত খোকন মিয়ার ছেলে ফাহাদ হোসেন (১৩) এবং আব্দুল বারেক মিয়ার নাতি সায়মন হোসেন (১৩)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিশুরা মাঠে ঘুড়ি উড়াতে ব্যস্ত ছিল। বজ্রপাত হলে দুই ছাত্র মারাত্মক আহত হয়। স্থানীয়রা তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মুরাদনগরে কৃষি জমিতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে দুজন কৃষক নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন আরও তিনজন। এ ঘটনার পর থেকে তারা শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন বলে জানা গেছে। নিহতরা হলেন- কোরবানপুর গ্রামের বীরচরণ দেবনাথের ছেলে নিখিল চন্দ্র দেবনাথ ও আন্দিকুট ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের জসিম উদ্দিন ভূইয়ার ছেলে জুয়েল ভূইয়া। মুরাদনগর উপজেলার পূর্বধৈইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থানের পাশে এই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কৃষক নিখিল চন্দ্র দেবনাথ ও জুয়েল ভূইয়া জমিতে ধান কাটার কাজ করতে যান। ঝড়ের সঙ্গে বিকট শব্দে কৃষি জমিতে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই বজ্রপাতে দুই কৃষক নিহত হন।
কিশোরগঞ্জ : অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনে বজ্রপাতে তিনজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজন কৃষক ও একজন কৃষানি। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জেলার মিঠামইন উপজেলার শান্তিগঞ্জ হাওরে খড় শুকাতে গিয়ে ফুলেছা বেগম (৬৫) নামে এক কৃষানি বজ্রপাতে নিহত হন। এছাড়া সকাল ১০টার দিকে জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার হালালপুর হাওরে ধান কাটার সময় ইন্দ্রজীত দাস (৩৬) ও কলমা হাওরে ধান কাটার সময় স্বাধীন মিয়া (১৪) নামের দুই কৃষক নিহত হন। নিহত কৃষানি ফুলেছা বেগম (৬৫) মিঠামইনে উপজেলার রাণীগঞ্জ কেওয়ারজোড় এলাকার মৃত আশরাফ আলীর স্ত্রী। এছাড়া ইন্দ্রজীত দাস (৩৬) অষ্টগ্রাম উপজেলার হালালপুর গ্রামের মৃত যতীন্দ্র দাসের ছেলে এবং স্বাধীন মিয়া (১৪) একই উপজেলার খয়েরপুর গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে।
সুনামগঞ্জ : শাল্লায় বজ্রপাতে রিমন তালুকদার নামে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল উপজেলার আটগাঁও গ্রামের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রিমন তালুকদার (২২) শাল্লা কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো গতকাল সোমবার সকালে শাল্লার বুড়িগাঙ্গাল হাওরে গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যায় রিমন। এসময় হঠাৎ বৃষ্টিপাত শুরু হলে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার আগে বজ্রপাতে রিমন তালুকদার ও তার সঙ্গে নিয়ে যাওয়া একটি গরুর মৃত্যু হয়।
নেত্রকোনা : মদনে বজ্রপাতে আরাফাত (১০) নামের এক মাদ্রাসার ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। আরাফাত উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের তিয়শ্রী গ্রামের মো. আব্দুস ছালাম মিয়ার একমাত্র ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আরাফাত বাড়ির পাশের একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত। গতকাল ফজরের নামাজের পর নিজ বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে বজ্রপাতের কবলে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
হবিগঞ্জ : বানিয়াচংয়ে হাওরে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। গতকাল সকালে বৃষ্টির সময় হাওরে এ ঘটনা ঘটে।
হবিগঞ্জের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আজাদুর রহমান জানান- সোমবার সকালে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে বানিয়াচং উপজেলার আড়িয়ামুগুর গ্রামের কালবাসী দাশের ছেলে দূর্বাসা দাশ (৩৫) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আহত হন তার ভাই ভূষণ দাশ (৩৪) ও বোন সুধন্য দাশ (২৮)। এছাড়া বজ্রপাতে বানিয়াচং উপজেলার বাগহাতা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে বায়েজিদ মিয়া (১৩) আহত হয়। তিনি জানান- হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। নিহতের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হবে।
চাঁদপুর : চাঁদপুরের কচুয়ায় বজ্রপাতে বিশখা সরকার (৩৫) নামের কৃষানির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলার উত্তর কচুয়া ইউনিয়নের নাহারা গ্রামের রাধা গবিন্দ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ওই কৃষানি বাড়ির পাশের জমি থেকে খড়ের গাদা আনতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান। মৃত বিশখা সরকার উত্তর কচুয়া ইউনিয়নের নাহারা গ্রামের হরিপদের স্ত্রী। বিশখা সরকার তিন কন্যাসন্তানের জননী।
যশোর : যশোরের শার্শা উপজেলার বেড়ি নারায়ণপুর গ্রামে বজ্রাঘাতে আমির হোসেন (৪০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে বাড়ির পাশে ধান গাদা দেওয়ার সময় বজ্রাঘাতে তিনি মারা যান।
আমির ওই গ্রামের স্কুলপাড়ার কোরমান আলীর ছেলে। যশোরের শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাজিব হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ওই কৃষক আকাশে মেঘ দেখে কাটা ধান গাদা দিচ্ছিলেন। আকস্মিক বৃষ্টিতে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বজ্রপাতের সময় সবাইকে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করার জন্য পরামর্শ দেন ওই কর্মকর্তা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে বজ্রপাতে মানিক মিয়া (৬২) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় হানিফ মিয়া (৬০) নামের আরেক কৃষক আহত হয়েছেন।
গতকাল বিকালে উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মানিক মিয়া উপজেলার চরমরিচাকান্দি গ্রামের মৃত কালা গাজীর ছেলে।
বাঞ্ছারামপুর থানার উপ-পরিদর্শক ফারুক আলম জানান, জমিতে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে মানিক মিয়া ও হানিফ মিয়া বজ্রপাতে আহত হন এবং মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মানিক মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন এবং হানিফ মিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠানো হয়। তিনি আরও জানান, পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মানিক মিয়ার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।