যে সংস্কারগুলোর ব্যাপারে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্য তৈরি হবে, সেগুলো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই বাস্তবায়ন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর। গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি। নূরের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল এ সংলাপে অংশ নিয়েছেন।
নুরুল হক নূর বলেন, আমরা সবাই যেন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থেকে জোর দিয়ে হলেও দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে কার্যকর সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করি। সংস্কারের ক্ষেত্রে ব্যক্তি, দল ও গোষ্ঠীর চেয়েও জাতীয় স্বার্থ ও দেশকে যেন প্রাধান্য দিই। এটা কমিশনের কাছে চাওয়া। গত ১৬ বছরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, অনেকেই স্ব স্ব জায়গা থেকে আন্দোলন করেছিলেন। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা ও প্রেক্ষাপট এমন ছিল, চাইলেও এ সমস্ত মানুষের ও আমাদের বেশি কিছু করার ছিল না। কিন্তু আমরা একটা প্রেক্ষাপট তৈরি করেছি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, গত ১৬ বছরে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল। আগামীতে যেন কোনো শাসক এরকম পথ অবলম্বন করে নাগরিকদের নিপীড়নসহ দেশকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে না পারে, সেজন্য কার্যকর সংস্কারের লক্ষ্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে চাই। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ বাংলাদেশের আগামীর অগ্রযাত্রার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করবে বলেও এ সময় আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সংলাপে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, চর্চা, ঐক্য এবং সম্মিলিতভাবে জাতীয় সনদ তৈরি করতে সবার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় সনদ তৈরি করা। যাতে করে ক্ষমতার বিন্যাসে পরিবর্তন ঘটে। বাংলাদেশ যাতে সমস্ত সম্ভাবনা নিয়ে জাগ্রত হতে পারে। আলী রীয়াজ বলেন, গত ৫৩ বছর মানুষ যে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করছে, সেই আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করা যায়, পথ উন্মুক্ত করা যায়, যেন সবাই মিলে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি। তারই অংশ হিসেবে এ আলোচনা।
তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন, মতামত ও সুপারিশই যথেষ্ট নয়। সব রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর জনমানুষের ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশকে নতুন বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর করতে পারব। কাজে কী লিখছি তা নয়, চর্চার মধ্য দিয়ে, অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে, প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে আমাদের এ কাজে অগ্রসর হতে হবে। আমরা সেই প্রচেষ্টায় আছি। ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তরুণদের নেতৃত্বে প্রাণ দিয়ে যে সম্ভাবনা তৈরি করেছে, সবাই মিলে সে সম্ভাবনাকে বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হতে হবে। সেই পথ ও প্রচেষ্টায় সবাই একত্রিত আছি, থাকব। একত্রিত থাকার তাগিদ জারি রাখব। রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে স্প্রেডশিট আকারে ৩৯টি দলের কাছে মতামত চেয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে ৩৫টি দল মতামত জমা দিয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ। গত রবিবার পর্যন্ত কমিশন ১৯টি দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে। ২০তম দল হিসেবে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে কমিশন সংলাপ করে।