ঢাকা রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নির্বাচনের উপযুক্ত সময় ফেব্রুয়ারি এপ্রিল পার হওয়া উচিত নয়

বললেন জামায়াত আমির
নির্বাচনের উপযুক্ত সময় ফেব্রুয়ারি এপ্রিল পার হওয়া উচিত নয়

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাস নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় বলেছেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। তবে এ সময়ে সম্ভব না হলে নির্বাচনের জন্য এপ্রিল মাস পার হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। গতকাল সকালে ঢাকার মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জেলা ও মহানগরী আমির সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা দুটি সময়কে উপযুক্ত মনে করি। একটি ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে। তবে যদি এ সময়ের মধ্যে সংস্কারগুলো এবং বিচারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া জনমনে আস্থা সৃষ্টির পর্যায়ে না আসে, তাহলে সর্বোচ্চ এপ্রিল পার হওয়া উচিত নয়।’ নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ছয় মাসের সময়সীমা ঘোষণা করেছেন। এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে জামায়াতের আমির আরও বলেন, ‘এখানে আমাদের দেশের আবহাওয়া ও পারিপার্শ্বিকতার বিষয় আছে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ এবং মার্চ মাসের তিন ভাগের দুই ভাগ রোজা থাকবে। সে সময়ে নির্বাচন সম্ভব নয়।’ সংস্কার কার্যক্রম যেটা হাতে নেওয়া হয়েছে, তা যদি আক্ষরিকভাবেই গতিশীল করা হয় এবং অংশীজনরা সেরকম সহযোগিতা করেন, তাহলে সরকারের ঘোষিত সময়ের মধ্যে সংস্কার করে নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করেন জামায়াতের আমির। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘রাজনীতিক বক্তব্য দিতে হলে ওখান থেকে বের হয়ে এসে দেন। ওখানে থেকে নয়। রাজনীতি করার আপনারও অধিকার আছে। কিন্তু দল নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে কেউ যদি রাজনীতি করেন, সেটা জাতি মেনে নেবে না, জাতি চায় না।’ বিগত সরকারের আমলে ২৬ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে বলে উল্লেখ করেন জামায়াতের আমির। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত পাচারের ঘটনার শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান তিনি।

পেশিশক্তি ও কালোটাকার প্রভাব থেকে মুক্ত করার জন্য পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান জামায়াত আমির। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের ৬২টি দেশ এই পদ্ধতিতে নির্বাচন করে। এটা যারা একবার শুরু করেছে, তারা আর বাদ দেয়নি।’

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা দেখে বিস্মিত হয়েছেন বলেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিদ্যমান কালচারের সম্পূর্ণ বিপক্ষে তারা কিছু সুপারিশ এনেছেন। সেগুলো বিবেচনা করার প্রশ্নই ওঠে না। এরকম বিষয় যদি সমাজে কখনও ভুলক্রমে ঢুকে পড়ে, তাহলে সামাজিক ব্যবস্থা তছনছ হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন ‘শুধু তা-ই নয়, তাদের কিছু সুপারিশ আল্লাহর বিধানের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে তারা করেছেন।’

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা কাণ্ডজ্ঞানহীন উল্লেখ করে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করার কথা বলেন। এ ধরনের সংস্কার কমিটি করতে হলে নারী সমাজের প্রকৃত প্রতিনিধিত্বকারীদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান জামায়াতের আমির। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল তাদের কর্মীদের থেকে জাতিকে সুরক্ষা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এজন্য যেখানে যাই শুনতে হয়, রেট আগের চেয়ে বেশি। কেন ভাই রেট আগের চেয়ে বেশি হবে? রেটই তো থাকবে না।’ আওয়ামী লীগ কমপক্ষে তিনটি গণহত্যা চালিয়েছে, বলেন জামায়াতের আমির। এর মধ্যে প্রথমটি পিলখানা হত্যাকাণ্ড, দ্বিতীয়টি ৫ মে শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড এবং চব্বিশের জুলাই-আগস্ট মাসে চালানো হত্যাযজ্ঞের কথা উল্লেখ করেন তিনি। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী দল বাংলাদেশকে শোষণ করেছে বলেন জামায়াতের আমির। পুরোটা সময়জুড়ে তারা এ দেশের বিরোধী দলমত এবং বিশেষভাবে ইসলামপন্থি জনগণের ওপর তাণ্ডব চালিয়েছে। ফ্যাসিবাদের হাতে নির্যাতিত নিহত জামায়াতের নেতাকর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং জুলাই আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ করেন তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত