জলবিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসেবা ও সড়ক যোগাযোগে আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতার সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ করে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের মধ্যে একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক কৌশল প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও সেভেন সিস্টার্সের জন্য একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা থাকা উচিত। আমাদের আলাদা হওয়ার চেয়ে একসঙ্গে আরও বেশি অর্জন করার আছে।’
গতকাল সোমবার বাংলাদেশে সফররত নেপালের ফেডারেল পার্লামেন্টের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ডেপুটি স্পিকার ইন্দিরা রানার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। ঢাকায় নেপাল দূতাবাস আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন ইন্দিরা রানা।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, অভিন্ন অবকাঠামো ও জ্বালানি উদ্যোগের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে জলবিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা। ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য গত অক্টোবরে স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ-নেপাল-ভারত ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ বিক্রয় চুক্তির কথা উল্লেখ করে উভয় পক্ষই বৃহত্তর আকারে জলবিদ্যুৎ উদ্যোগের গুরুত্বের ওপর জোর দেয়।
স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা সবাই মিলে সমাধান করতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘রংপুরে আমাদের আসন্ন এক হাজার শয্যার হাসপাতালটি নেপাল ও ভুটানের রোগীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। আমরা আঞ্চলিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও অভিন্ন সমৃদ্ধিতে বিশ্বাস করি।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ না করে সবাই মিলে সমাধান করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ও ঘাটতি পূরণে প্রয়োজন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। সিভিল সার্জনরা মন থেকে চাইলে সীমিত সম্পদের মধ্যেও স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার মানের ২৫ শতাংশ উন্নতি সম্ভব। স্বাস্থ্য খাতে যে নিয়মণ্ডকানুন রয়েছে তা প্রতিপালন করলেই এ উন্নতি সম্ভব। তিনি বলেন, জনবল ও যন্ত্রপাতিসহ সম্পদের সীমাবদ্ধতার দোহাই দিয়ে হাত-পা গুটিয়ে থাকলে চলবে না। যা রয়েছে তা দিয়েই চিকিৎসাসেবা প্রদান করে যেতে হবে। পাশাপাশি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। দেশে প্রথমবারের মতো সিভিল সার্জন সম্মেলন আয়োজনের সুফল পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এতদিন কেন সিভিল সার্জন সম্মেলন হয়নি তা বোধগম্য নয়। এ সম্মেলনের মাধ্যমে সিভিল সার্জনদের মধ্যে সরাসরি দেখা-সাক্ষাৎ হবে, কথাবার্তা হবে, অনেক সমস্যা সম্পর্কে অবহিত ও নিষ্পত্তি হবে। রংপুরে আমাদের আসন্ন এক হাজার শয্যার হাসপাতাল নেপাল ও ভুটানের রোগীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আমরা আঞ্চলিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও অভিন্ন সমৃদ্ধিতে বিশ্বাস করি।
ডেপুটি স্পিকার ইন্দিরা রানা বিভিন্ন সেক্টরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গভীর করতে নেপালের আগ্রহের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের সব সংসদ সদস্যই বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চান। আমরা আমাদের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব জোরদার এবং মানুষে-মানুষে সংযোগ জোরদারে গুরুত্ব দিচ্ছি।’
ডেপুটি স্পিকার বাংলাদেশে নেপালি শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ‘বর্তমানে ২ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি নেপালি শিক্ষার্থী বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিকভাবে মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করছে।’ তিনি শিক্ষার মানের প্রশংসা করেন এবং দুই দেশের মধ্যে আরও শিক্ষা বিনিময় ও একাডেমিক সহযোগিতার আহ্বান জানান। উভয় পক্ষ ভৌত যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা করে। প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, ‘নেপালের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ উন্নত করা বাণিজ্য ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করবে। এই অঞ্চলজুড়ে মানুষ ও পণ্য চলাচল সহজ করবে।’ বৈঠকে বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভাণ্ডারি, প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ইশরাত জাহান উপস্থিত ছিলেন।