ঢাকা সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হত্যা মামলায় মমতাজ চার দিন রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মমতাজ চার দিন রিমান্ডে

হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগমকে চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এই আদেশ দেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর মিরপুর থানায় দায়ের করা সাগর হত্যা মামলায় মমতাজকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে পুলিশ। শুনানি নিয়ে তার চার দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) গত সোমবার রাতে মমতাজকে গ্রেপ্তার করে। ডিএমপির এক বার্তায় বলা হয়, রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে মমতাজকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিএমপির ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেছিলেন, মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ধানমন্ডির স্টার কাবাবের পেছনের একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে ২০২৪ সালের ১৩ অক্টোবর রাতে নিজের ফেসবুকে একটি গান পোস্ট করে আলোচনায় আসেন মমতাজ বেগম। এরপর কয়েক মাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার কোনো খোঁজ মিলেনি, তবে গত সোমবার তাকে গ্রেপ্তারের পর ফের আলোচনায় এসেছেন।

প্রসঙ্গত, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে জাতীয় সংসদে গান গেয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেওয়া কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদের (টুলু) কাছে হেরে যান তিনি।

এর আগে, ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মনোনীত হন মমতাজ বেগম। পরে ২০১৪ সালেও মানিকগঞ্জ-২ আসনে নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মমতাজ বেগম।

রিমান্ড শুনানি ঘিরে আদালতে হট্টগোল, হাস্যরস : আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সংগীত শিল্পী মমতাজ বেগমকে গতকাল রাতে গ্রেপ্তারের পর গতকাল মঙ্গলবার আদালতে তুলে তার সাত দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। রিমান্ড শুনানি চলাকালে এবং পরে বেশ হট্টগোল হয়। রিমান্ড শুনানিতে বিভিন্ন বক্তব্যে উপস্থিত আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে হাস্যরসেরও সৃষ্টি হয়। এমনকি এক পর্যায়ে বিষণ্ণ মমতাজ বেগম নিজেও হেসে দেন। শুনানি শেষে আদালত মমতাজের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাকে নিয়ে যাওয়ার সময়ও হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা তাকে ঘিরে বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং কটূক্তিও করেন।

মমতাজ বেগম একজন সংগীত শিল্পী হিসেবেই পরিচিত দেশজুড়ে। তবে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে আগে থেকেই সম্পৃক্ত। তিনি ২০০৮ সালে প্রথমে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য মনোনীত হন। পরের দুইবারের নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ আসনে সরাসরি ভোটে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হন। তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেলেও তিনি পরাজিত হন। মমতাজ বেগম জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন স্থানে নানা সময়ে দেওয়া বক্তব্যের কারণে বিভিন্ন সময় আলোচিত ও সমালোচিত হন।

গতকাল দুপুরে সিএমএম আদালতের বিচারক মো. জুয়েল রানার আদালতে মমতাজ বেগমকে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের সমর্থনে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বক্তব্য দেন। শুনানির শুরুতেই তিনি বলেন, ‘আমরা জাতি হিসেবে আবেগপ্রবণ। একজন ফুটবলার ভালো খেললে আমরা তার খেলাটাই দেখি। তাকে পছন্দ করার কারণ তিনি ভালো খেলেন। তেমনিভাবে নায়িকার অভিনয়, শিল্পীর ভালো গান আমরা পছন্দ করি। তারা কোন দল করে সেটা দেখা হয় না। তাদের কাজটাকে আমরা ভালোবাসি। তবে এই আসামি জনগণের ভালোবাসাটাকে ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেন।’ পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, ‘আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব যখন আরেক রাষ্ট্রের কাছে জিম্মি ছিল, গুম, আয়নাঘর, আন্দোলন করলেই যখন গুলি করা হতো, তখন এই মমতাজ গানের ভালোবাসা দিয়ে ফ্যাসিস্টকে সহযোগিতা করতে গেল। সংসদে তার ভূমিকা নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, সংসদের অধিবেশনে যেখানে মিনিটে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়, সেখানে সে গান গাইল- আমার নেত্রী শেখ হাসিনা, সারা বিশ্বে নাই তার তুলনা। সংসদে তোফায়েল, আমুসহ আওয়ামী লীগের অন্য সিনিয়র নেতারা যেখানে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে কটুকথা বলেননি, সেখানে সে বক্তব্য রাখল খালেদার বাপের নাম কী?

এসময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা ‘শেইম শেইম’ বলে স্লোগান দেন। এতে কিছুটা হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। শুনানির একপর্যায়ে পিপি আদালতকে বলেন, ‘এই আন্দোলনের সময় যখন হাসিনার মন খারাপ থাকত তখন সে গণভবনে গিয়ে হাসিনাকে গান শোনাত।’ এসময় এজলাসে হাস্যরসের তৈরি হয়।

কাঠগড়ায় পুরো সময় বিষণ্ণ থাকলেও পিপির এই বক্তব্য শুনে মমতাজ নিজেও হাসতে থাকেন। এরপর আদালত আসামিপক্ষের বক্তব্য শুনতে চান। সামনে দেখতে না পেয়ে আসামিপক্ষের দাখিল করা নথি থেকে আইনজীবী রেজাউল করিমকে ডাকতে থাকেন দায়িত্বরত সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা। তখন ওই আইনজীবী সামনে আসেন। বিচারক মমতাজকে জিজ্ঞাসা করেন- আপনি কি ওনাকে চিনেন? আপনার আইনজীবী হিসেবে তাকে নিয়োগ করতে চান? তাহলে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেন। পরে মমতাজ সম্মতি দিয়ে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেন। তবে ওই আইনজীবী আদালতকে জানান, আজকে আমার কোনো বক্তব্য নেই। এরপর আদালত বেলা ৩টা ২৮ মিনিটে মমতাজের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন। এরপর মমতাজকে আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তখন আইনজীবীরা বলেন, ‘তাকে লিফটে নেওয়া যাবে না। সিঁড়ি দিয়ে নামাতে হবে। বিএনপির অনেক নেতাকে লিফটে নিতে দেওয়া হয়নি। হেঁটে-হেঁটে তোলা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত