যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনছে সৌদি আরব। এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়েছে। প্রতিরক্ষা খাতের ইতিহাসে এটিকে সবচেয়ে বড় চুক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, চুক্তির প্রথম দফায় জ্বালানি, নিরাপত্তা, প্রযুক্তি ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর নজর দেওয়া হবে। আগামী চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি আরবের বিনিয়োগ হবে ৬০০ বিলিয়ন ডলার। অস্ত্র চুক্তির ১৪২ বিলিয়ন ডলার তারই অংশ। বিবিসি জানায়, এ চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরবকে সর্বাধুনিক সমরাস্ত্র এবং অন্যান্য সেবা দেবে ওয়াশিংটন। যার মধ্যে রয়েছে বিমানবাহিনীর আধুনিকীকরণ এবং মহাকাশ সক্ষমতা বৃদ্ধি, আকাশ ও মিসাইল প্রতিরক্ষা, সামুদ্রিক এবং উপকূলীয় নিরাপত্তা, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং স্থল বাহিনীকে আধুনিকীকরণ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ করা।
সংবাদদাতারা বলছেন, চুক্তির আওতায় সৌদির সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। এর মাধ্যমে সৌদির সামরিক অ্যাকাডেমি এবং মিলিটারি মেডিকেল সেবা বাড়ানো হবে। আর সৌদির নিরাপত্তার পুরো বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের সিস্টেম এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সাজানো হবে।
খবরে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের কোম্পানি ডেটাভোল্ট যুক্তরাষ্ট্রের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কোম্পানি ও জ্বালানি অবকাঠামোতে ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এছাড়া গুগল, ডেটাভোল্ট, ওরাকল, সেলসফোর্স, এএমডি এবং উবার প্রভৃতি নতুন নতুন প্রযুক্তিতে ৮০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিমানবন্দর, বাদশা সালমান পার্ক, কিদিয়া সিটিসহ অন্যান্য প্রকল্পে কাজ করবে। যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবে গ্যাস টারবাইন এবং বোয়িং ৭৩৭-৮ যাত্রীবাহী বিমান রপ্তানি করবে। গ্যাস টারবাইনের দাম হবে ১৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। অপরদিকে বিমানের দাম হবে ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য খাতে সৌদির কোম্পানি মিশিগানে স্যালাইন তৈরির কারখানা বানাতে ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এছাড়া নতুন কাজসহ কিছু বিশেষ তহবিল তৈরি করা হয়েছে, যেগুলো বিনিয়োগ অংশীদারত্ব তহবিল হিসেবে বিবেচিত হবে। এ তহবিলগুলোর মধ্যে জ্বালানি খাতের উন্নয়নে ৫ বিলিয়ন ডলার, মহাকাশ এবং প্রতিরক্ষা শিল্পের প্রসারে ৫ বিলিয়ন ডলার এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রের উন্নয়নে ৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। উপসাগরীয় অঞ্চলে চার দিনের সফরে গত মঙ্গলবার সৌদি আরবে পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সফরের মূল লক্ষ্য অর্থনৈতিক বিনিয়োগ আকর্ষণ ও বাণিজ্যিক চুক্তি সই।
সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ট্রাম্পের একটি প্রাথমিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। ট্রাম্পের এ সফরে তার সঙ্গে আছে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ব্যবসায়ী ও কর্পোরেট নেতৃত্বের একটি প্রতিনিধিদল।
ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে উপসাগরীয় অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে যে গুরুত্বপূর্ণ, তা তার এ সফরের মধ্য দিয়ে আবারও স্পষ্ট হলো। সৌদি আরবের মাধ্যমেই দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্ট মেয়াদে তার প্রথম আনুষ্ঠানিক বিদেশ সফর শুরু হলো। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদেও প্রথম বিদেশ সফরের গন্তব্য হিসেবে সৌদি আরবকে বেছে নিয়েছিলেন।
গত জানুয়ারিতে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ঘোষণা করেছিলেন, আগামী চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা) বিনিয়োগ করবে সৌদি আরব। তবে ট্রাম্পের প্রত্যাশা, এ অঙ্ক বাড়িয়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১২১ লাখ ৫২০ হাজার কোটি টাকা) করা হবে।
সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে যুক্তরাষ্ট্র : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি সিরিয়ার ওপর আরোপ করা দীর্ঘদিনের মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেবেন। সিরিয়ার সাবেক শাসক বাশার আল-আসাদের আমলে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ওয়াশিংটন। সৌদি আরব সফররত ট্রাম্প বলেন, ‘একটি (সিরিয়ায়) নতুন সরকার এসেছে। আশা করি, তারা দেশকে স্থিতিশীল করতে এবং শান্তি বজায় রাখতে সফল হবে।’
সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে এক আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘আমি সিরিয়ার ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেব, যাতে দেশটিকে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের সুযোগ দেওয়া যায়।’ ট্রাম্পের এমন ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, জনগণের বিরুদ্ধে বাশার সরকারের যুদ্ধাপরাধের প্রতিক্রিয়ায় সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার মন্তব্যকে স্বাগত জানায় সিরিয়া।