ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রাজপথ ছাড়লেন জবি শিক্ষার্থীরা

দাবি পুরণে সরকারের আশ্বাস
রাজপথ ছাড়লেন জবি শিক্ষার্থীরা

আবাসন সংকটসহ তিন দফা দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা রাজধানীতে টানা কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। আন্দোলনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার রাতে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস পেলে আন্দোলন স্থগিত করেছে জবির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

ইউজিসি চেয়ারম্যান ও উপাচার্যের বক্তব্যের পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দীন সরকারের পক্ষ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়ার কথা উল্লেখ করে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কাকরাইল মোড়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে ড. রইছউদ্দীন বলেন, আমাদের দাবিগুলো যেহেতু মেনে নেওয়ায় হয়েছে, তাই চলমান আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করা হলো। তবে দাবিগুলো বাস্তবায়নে গড়িমসি হলে এই আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে আবার আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, আমরা সবসময় শিক্ষার্থীদের স্বার্থ দেখি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছে সরকার। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, আমরা সারাদিন এটা নিয়ে কাজ করেছি। ইউজিসি একটি পরিবার হিসেবে সবাই মিলে এটার সমাধান করতে পারব। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি একসঙ্গে বসে সব সমাধান করব। আপনাদের সব দাবি বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি। এসময় ইউজিসি চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি আদায়ের জন্য গণঅনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে জবি উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, ইউজিসির সঙ্গে আমাদের মিটিং হয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জবির পরিচালনা বাজেট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাজেট বাড়ানোর মাধ্যমে প্রথম দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত এসেছে। আবাসন সংকটের কথা ভেবে দ্রুতই অস্থায়ী হল নির্মাণ করা হবে। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।

জানা যায়, শিক্ষার্থীদের আগের তিন দফা দাবির সঙ্গে পরবর্তীতে নতুন আরও এক দাবি যুক্ত হয়। সেটি হলো- ১৪ মে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের অতর্কিত হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। এর আগে শিক্ষার্থীদের দেওয়া তিন দফা দাবি হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি চালু করা, জবির প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করে অনুমোদন, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ একনেক সভায় পাস ও বাস্তবায়ন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও বিএনপির নেতারা। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’র দক্ষিণ পাশে কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে উপস্থিত হয়ে সংহতি জানান কেন্দ্রীয় যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন এবং জবি ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমান হামিদ।

তারা বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো অত্যন্ত যৌক্তিক। দীর্ঘদিন ধরে তারা এ সংকট নিরসনের দাবি জানিয়ে আসছে। আমরা তাদের সঙ্গে একমত।

জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরে গণঅনশনের ডাক দেয়, তবে গতকাল এক শিক্ষার্থীকে পানি পান করিয়ে গণঅনশন ভাঙেন ইউজিসি চেয়ারম্যান। এ সময় ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ সাবিনা শরমীন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্?দীন উপস্থিত ছিলেন। এরপর কয়েকজন শিক্ষার্থী অনশন ভাঙলেও কিছু শিক্ষার্থী অনশন চালিয়ে যান। তিন দফা দাবি পূরণের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ঘোষণা না করা পর্যন্ত তারা অনশন ভাঙবেন না বলে ঘোষণা দেন।

ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে তিন দফা বাস্তবায়নের দাবিতে গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে লংমার্চ করেন জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুর ১২টার দিকে তাদের লংমার্চ কাকরাইলে পৌঁছালে বাধা দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে বাধা পার হয়ে শিক্ষার্থীরা যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশত শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর ওই দিন বেলা দুইটা থেকে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যোগ দেন। এর পর থেকে টানা তিন দিন তারা এই কর্মসূচি চালান। এর মধ্যে গতকাল জুমার নামাজের পর প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে সমাবেশ এবং বিকেল চারটা থেকে গণঅনশন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন বৃত্তি, পূর্ণাঙ্গ বাজেট, দ্বিতীয় ক্যাম্পাস বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনে নামেন জবির শিক্ষার্থীরা। সেদিন দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দিকে এগোতে চাইলে কাকরাইল মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন। বুধবার সারা রাত প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার পর থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এদিন রাতেও যমুনার সামনে অবস্থান নেন তারা। শুক্রবার আন্দোলনের গতিপথ আরো বাড়তে থাকে, শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মধ্যে দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে সরকার। এতে শিক্ষার্থীরা আগের মতোই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে ফিরবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত