ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সাম্য হত্যা তদন্তে গাফিলতির প্রতিবাদ ও বিচার দাবি

ছাত্রদলের শাহবাগ অবরোধ : * পৌনে দুই ঘণ্টা পর শাহবাগ ছাড়ে ছাত্রদল * হত্যার তদন্ত ডিবির কাছে হস্তান্তরের আশ্বাস স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার * বিচার দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
সাম্য হত্যা তদন্তে গাফিলতির প্রতিবাদ ও বিচার দাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতির প্রতিবাদে ও মূল হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজধানী ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা গতকাল রোববার বিকেল পৌনে চারটার দিকে তাঁরা শাহবাগ অবরোধ করেছেন। শাহবাগ অবরোধ করে ছাত্রদলের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ‘বিচার বিচার বিচার চাই, সাম্য হত্যার বিচার চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। এই প্রতিবেদন লেখার সময় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের আরেকটি বড় অংশ পাবলিক লাইব্রেরির সামনে বসে নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন মেট্রোরেল স্টেশনের কাছে অবস্থান নিয়েছেন। নেতা-কর্মীরা শাহবাগ মোড়ের সড়কে বসে পড়েছেন। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে শাহরিয়ার হত্যার ‘প্রকৃত’ আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ থানা ঘেরাও করেন।

গত শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দেয়। তাঁরা জানিয়েছিল, শাহরিয়ার আলম সাম্যর হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতির প্রতিবাদে এবং মূল হত্যাকারীসহ সব আসামিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার, সুষ্ঠু বিচার এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে এই সমাবেশ হবে? পাশাপাশি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হবে? সেই ঘোষণা অনুযায়ী, ছাত্রদল বেলা তিনটার দিকে শাহবাগে অবস্থান নেয়। এর আগে দুপুরে ক্যাম্পাসে কালো পতাকা মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।

গত মঙ্গলবার রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চের পাশে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার নিহত হন। তিনি স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।

এ ঘটনায় গত বুধবার সকালে নিহত শাহরিয়ারের ভাই শরীফুল আলম বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে। গ্রেপ্তার তিনজনকে ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

পৌনে দুই ঘণ্টা পর রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে সরে গেছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতির প্রতিবাদ এবং এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে গতকাল রোববার বিকেল পৌনে চারটার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছিলেন তাঁরা।

বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম আজকের মতো কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করেন। এরপর ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা মিছিল করে শাহবাগ থেকে চলে যান। তখন শাহবাগ মোড় দিয়ে আবার যান চলাচল শুরু হয়। এর আগে শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচিতে শাহরিয়ার আলম হত্যার বিচার চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। সেখানে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন বক্তব্য দেন। তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন। এ ছাড়া শাহরিয়ারের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারসহ তাঁদের অন্য দাবিগুলো মেনে না নেওয়া হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। এদিকে সাম্য হত্যার তদন্ত গোয়েন্দা সংস্থা ডিবির কাছে হস্তান্তরের আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল রোববার বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. নিয়াজ আহমেদ খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করতে এলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তাদের এ আশ্বাস দেন।

সাক্ষাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হোসনে আরা বেগমসহ কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

সাক্ষাৎ শেষে অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম বলেন, আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে সাম্য হত্যার সুষ্ঠু বিচার হোক। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আমাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন এবং নোট নিয়েছেন।

পরে সাম্যর বন্ধু এসএস নাহিন ইসলাম বলেন, আমরা শাহবাগ থানাকে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা দিয়েছিলাম, কিন্তু আশানুরূপ অগ্রগতি পাইনি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে ডিবির কাছে তদন্ত হস্তান্তর করা হবে এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারের ব্যবস্থা করা হবে।

নাহিন বলেন, আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট না হলেও আশাবাদী। আমরা তখনই আশ্বস্ত হবো যখন দেখব আসামিরা বিচারের আওতায় এসেছে। কর্মসূচি প্রত্যাহারের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমরা সকলের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।

তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল ও দল বিভিন্নভাবে সাম্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে নিজেদের দাবি জানাচ্ছে। আমরা সবসময় বলে আসছি, আমাদের একটাই দাবি- সাম্য হত্যার বিচার। আমরা যা করা উচিত, তাই করব। কর্মসূচির বিষয়ে আমরা সবাই মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো। প্রয়োজন হলে আরো কঠোর আন্দোলনে যাব। আমাদের দাবি ছিল দৃশ্যমান অগ্রগতি। যেহেতু স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন এবং তদন্ত ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে, তাই আমরা আশাবাদী যে ইতিবাচক কিছু দেখতে পাব।

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্য’র হত্যার বিচার দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে শিক্ষক সংগঠন সাদা দল। গতকাল বেলা সাড়ে এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক মানববন্ধনে সাদা দলের নেতারা এই আল্টিমেটাম দেন।

মানববন্ধনে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, সাম্য মারা যায়নি, হত্যা করা হয়েছে। পাঁচ দিন হয়ে গেলেও প্রকৃত খুনিকে বের করা যায়নি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জোরালো দাবি জানাচ্ছি, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রকৃত খুনিকে বের করতে হবে, অন্যথায় আমরা আরও কঠোর আন্দোলনে যাব।

ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, আমরা কোনো ব্যক্তি স্বার্থে কাজ করবো না। সাম্য হত্যার মোটিভকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করতে চাচ্ছে একটি গ্রুপ। আগে সাম্য হত্যার বিচার হবে তারপর আমরা অন্য আলাপ করব। ২ মাস আগে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। সেই হত্যারও বিচার হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক হত্যা হয়েছে, বিচার হয়নি। তিনি বলেন, সরকার সংস্কারের কথা বলছে অথচ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। সাম্য হত্যার বিচার শুরু না হলে আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হবো।

মানববন্ধনে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, একজন শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থীর লাশ অনেক ভারী, অনেক কষ্টদায়ক। আমাদের ক্যাম্পাস কি আদৌ নিরাপদ? আমরা একটি নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি জানাই, যেখানে আর কোনো শিক্ষার্থীকে প্রাণ দিতে না হয়। তিনি বলেন, জাতি হিসেবে আমি লজ্জিত, আমার যে ভূমিকা সেটা আমি পালন করতে পারিনি। নাগরিক হিসাবে আমার যে দায়িত্ব সেটা আমি পালন করতে পারছি না।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান বলেন, ঢাবির শিক্ষক হিসেবে আমি লজ্জিত। আমাদের সন্তানরা কেন অন্যের হাতে প্রাণ দেবে? ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করা আমাদের দায়িত্ব। মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন, সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম, অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান, ব্যবসা প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিনসহ অন্যান্য শিক্ষকরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত