ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ইসি ও তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ চায় এনসিপি

ইসি ও তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ চায় এনসিপি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিচ্ছে। এরইমধ্যে নতুন ভোটকেন্দ্রের খসড়া নীতিমালার পরিবর্তন করে ডিসি-এসপিদের বাদ দিয়ে ইসির অধীনে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দিকে এগিয়েছে ইসি। এছাড়া, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণ বিধিমালার খসড়াও নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে। ইসির এসব কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট নয় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল নির্বাচন কমিশনের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছেন এনসিপির নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন বিএনপির মুখপাত্রের ভূমিকায় একপাক্ষিকভাবে কাজ করছে। সেজন্য বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন, বিএনপিপন্থি উপদেষ্টা আখ্যা দিয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি সংস্কার সুপারিশ বাস্তবায়ন না হলে এই উপদেষ্টাদের পদত্যাগে বাধ্য করার হুঁশিয়ারি দেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী।

গতকাল বুধবার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, নির্বাচন কমিশন বিএনপির মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করছে। এটি আমাদের জন্য লজ্জার। এতে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয়। সরেজমিন দেখা গেছে, বেলা সাড়ে ১১টায় খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নির্বাচন ভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন নেতাকর্মীরা। তবে দুপুর দেড়টায় পুলিশ বেস্টনি অতিক্রম করে মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন তারা। এসময় মৃদু উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এরপরই কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত হন। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ছাড়াও কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব সরোয়ার তুষারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য রাখেন। নির্বাচন ভবনের সামনে আড়াই ঘণ্টার বেশি বিক্ষোভ করা হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, ২০২২ সালের নির্বাচনি আইনে যারা নিয়োগ পেয়েছেন, হাসিনা রেজিমের তিনটি জালিয়াতির নির্বাচনে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে, তাদের অবিলম্বে অপসারণ করে আইনের আওতায় আনতে হবে। না হলে ছাত্র-জনতা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। এ কমিশন পুনর্গঠন না করে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তিনি পুনর্গঠনের পর টেস্ট কেস হিসেবে স্থানীয় নির্বাচন দাবি করেন। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, শেখ হাসিনা যেভাবে কমিশনকে ধ্বংস করেছে, ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা পুরোপুরি পুনর্গঠন না করলে এনসিপি জাতীয় নির্বাচনে যাবে না। নগর ভবনের সামনে অবস্থানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সেখানে আওয়ামী লীগের টাকায় আন্দোলন করছে বিএনপির লোকজন। সারা বাংলাদেশেই এমনটি চলছে। কুমিল্লায় এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলায় হাসনাত আব্দুল্লাহকে বিষোদ্গার করা হয়। তিনি ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানান। সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ বিএনপির মুখপাত্র হিসেব কাজ করছেন। তা বন্ধ না করলে আপনাদের বিদায় নিতে হবে। এসময় তিনি উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বিভিন্ন ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন। বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদের সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিষয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, তাকে আমরা মজলুম ভেবেছিলাম। কিন্তু তার সাম্প্রতিক বক্তব্য শহিদদের রক্তের সঙ্গে গাদ্দারি। তিনি ভারত থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে এসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। জুলাই ঘোষণাপত্রের কোনো হেরফের মেনে নেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন এনসিপিরি এই নেতা।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশে এডুকেশন ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য ওয়াহিদউদ্দিন ভাই (উপদেষ্টা) কাজ করছেন, দেশে ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরকে ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য সালেহউদ্দিন ভাই (উপদেষ্টা) কাজ করছেন। আইন মন্ত্রণালয় ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য আসিফ নজরুল কাজ করছেন। এ মাঠে ‘কুসুম কুসুম খেলা’ চলবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, এনসিপি নেতারা যত দিন আছি জাতীয় নির্বাচনের আগে অবশ্যই স্থানীয় নির্বাচন দিতে হবে। স্থানীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় কোনো নির্বাচন হবে না।

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চেয়েছিলাম, নিষিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নির্বাচন কমিশন ও সংবিধান নিষিদ্ধ হয়নি। উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছেন অভিযোগ করে পাটোয়ারী বলেন, (জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে) আমাদের আসিফ নজরুল বলেছিলেন, ঘোষণাপত্র দেবেন। একবার মুলা দেখিয়েছিলেন ছাত্র-জনতাকে; ঘোষণাপত্র দেবেন বলেছিলেন, উনি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এবার যদি হেরফের হয় আসিফ নজরুল বাংলাদেশে থাকবেন কি না জানি না। জনগণের সঙ্গে অনেক ‘বাটপারি’ হয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, জনগণের সঙ্গে আপনি বেইমানি করেছেন। এ বেইমানি নিয়ে আপনি সরকারি অফিসে আসতে পারেন না। আমরা আপেক্ষা করছি, ঘোষণাপত্র হবে, ইসি পুনর্গঠন হবে, স্থানীয় নির্বাচন হবে, গণপরিষদ নির্বাচন হবে এবং সুন্দর বাংলাদেশ পাব। এ প্রত্যাশায় বিক্ষোভ সমাপ্তি করছি।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে কমিশনের সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন, তখন ভবনের প্রবেশমুখে বিক্ষোভ করছিলেন এনসিপির নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভের বিষয়টি কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে কোনো মতামত দিতে চায় না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তিনি দাবি করেন, ইসি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছে। ইসি পুনর্গঠনের দাবির বিষয়টি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে আমরা কোনো মতামত দিতে চাই না।’

স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার দাবির বিষয়ে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আ সিকুয়েন্সিং অব ইলেকশন, কোনটা আগে হবে, কোনটা পরে হবে, এটা ইসির হাতে নেই। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে কোন নির্বাচন আগে হবে, পরে হবে। ইসির দায়িত্ব নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।’ বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ মার্চ রায় দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল। নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রায়ের বিরুদ্ধে ইসি আপিল না করায় তা নিয়ে সমালোচনা চলছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ইসি নির্বাচনি সব ধরনের আইনবিধি পর্যালোচনা করেছে। তাতে দেখা গেছে, এখানে ইসির পক্ষভুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া অতীতেও ইসির স্বপ্রণোদিত হয়ে এ ধরনের পক্ষভুক্ত হওয়ার নজির পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত