ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

গাজায় অনাহারে ৩৩০ জনের মৃত্যু

গাজায় অনাহারে ৩৩০ জনের মৃত্যু

ফিলিস্তিনির গাজায় নতুন করে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে গাজায় প্রতিদিন মানুষ মরছে এবং চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এতে চরম দুর্দশায় রয়েছেন উপত্যকার বাসিন্দারা। গাজা অবরোধে ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করল যুক্তরাজ্য। ইসরায়েল হামলা বন্ধ না করলে এবং ত্রাণ যেতে না দিলে দেশটির বিরুদ্ধে ‘পদক্ষেপ’ নেবে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা। ৫ মে থেকে গাজায় নতুন করে অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। গত সোমবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘পুরো গাজার নিয়ন্ত্রণ’ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে তার সরকার। দীর্ঘ ১১ সপ্তাহ অবরোধের পর এদিনই উপত্যকাটিতে পাঁচ ট্রাক ত্রাণ ঢুকতে দিয়েছে ইসরায়েল। তবে গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিদিন সেখানে ৫০০ ট্রাক ত্রাণ প্রয়োজন।

গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর দেশটির আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন দিয়েছে যুক্তরাজ্য। তবে এই সংঘাত এখন এক ‘কালো অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে’। ১১ সপ্তাহ ধরে গাজা অবরোধ করে রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে উপত্যকাটিতে কাজ করা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) হাতে খাবারের মজুত শেষ হয়ে গেছে। যুক্তরাজ্যের আইনপ্রণেতাদের ডেভিড ল্যামি আরও বলেন, পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে তিনজন ব্যক্তি ও চারটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। যারা নৃশংসভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে যাবে ব্রিটিশ সরকার। এর মধ্যে গতকাল যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের হামলা, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন বৃদ্ধি এবং বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতার ঘটনার জেরে যুক্তরাজ্যে ইসায়েলের দূত জিপুরা হোতোভেলিকে তলব করেছে ব্রিটিশ সরকার। বসতি স্থাপনকারীদের ওপর যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞাকে ‘বিভ্রান্তিকর, অযৌক্তিক ও দুঃখজনক’ বলেছে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলেছে, নিজেদের অস্তিত্ব ও নিরাপত্তার জন্য ইসরায়েলের ধ্বংস চাওয়া শত্রুদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি। বাইরের চাপের কারণে এই সংগ্রাম থেকে সরে যাবে না ইসরায়েল। আর বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করা নিয়ে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ইসরায়েলবিরোধী আবেগ ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের কারণে যুক্তরাজ্য যদি নিজেদের অর্থনীতির ক্ষতি করতে চায়, তাহলে সেটি তাদের সিদ্ধান্ত।’ গাজার জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে এই সময়ে ৩৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে অনাহারে। একই সময়ে প্রয়োজনীয় খাদ্য, চিকিৎসা ও অন্যান্য সুবিধার অভাবে ৩ শতাধিক নারীর গর্ভপাত হয়েছে।

ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডে ‘হতাশ’ রাশিয়া: গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান জোরদার এবং পূর্ণমাত্রার স্থল অভিযান শুরু করায় হতাশা প্রকাশ করেছে রাশিয়া। গত মঙ্গলবার মস্কোয় এক সংবাদ সম্মেলনে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এ মন্তব্য করেন। তিনি জানান, গাজায় রকেট ও বোমা হামলার মাত্রা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে বেসামরিক প্রাণহানিও বেড়েছে। গত তিন দিনে গাজার বিভিন্ন অংশে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের জন্য নির্ধারিত স্থান ও সামাজিক অবকাঠামোতে চালানো হামলায় প্রায় ৩০০ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে আমরা হতাশ, যা অনিবার্যভাবে নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ও নতুন ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে আনছে।

গাজায় ত্রাণ বিতরণ হয়নি: ইসরায়েল সীমিত পরিমাণে ত্রাণ বিতরণের অনুমতি দেওয়ার পর এক দিন পেরিয়ে গেলেও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় কোনো ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘ এ কথা জানিয়েছে। টানা ১১ সপ্তাহ অবরুদ্ধ করে রাখার পর গত সোমবার ইসরায়েল বলেছে, তারা ফিলিস্তিন ভূখণ্ডটিতে সীমিত পরিমাণে ত্রাণ বিতরণের অনুমতি দিয়েছে। এরইমধ্যে, গাজা দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, গত সোমবার চার ট্রাকভর্তি শিশুখাদ্য সীমান্তের ওপারে ফিলিস্তিনিদের প্রান্তে পৌঁছে দেওয়া হয়। পরদিন মঙ্গলবার (গতকাল) বেশ কয়েকটি ট্রাকে করে আটা, ওষুধ, পুষ্টিসামগ্রী ও অন্যান্য জরুরি পণ্য গাজায় প্রবেশ করেছে। সাংবাদিকদের ডুজারিক আরও বলেন, ‘ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ আমাদের কেরেম শালোম সীমান্তে ফিলিস্তিনি প্রান্তে ত্রাণসামগ্রী নামিয়ে রাখতে বলেছে। গাজা উপত্যকার ভেতরে আমাদের দলের প্রবেশ করার বিষয়টি নিশ্চিত হলে সেগুলো (বিতরণ করার জন্য) আবার আলাদাভাবে যানবাহনে তোলা হবে।’ এর আগে একই দিন জেনেভায় জাতিসংঘের মানবিক দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেছিলেন, ইসরায়েল প্রায় ১০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সোমবার বলেছেন, ইসরায়েল প্রাথমিকভাবে যে পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে, তা ‘সমুদ্রে একফোঁটা পানির মতো’। ইসরায়েল বলেছে, তারা পুরো গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। তাই হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান আরও জোরদার করার পরিকল্পনা করেছে তারা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত