অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলবিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করার দাবিতে ‘মার্চ ফর ইউনূস’ কর্মসূচি পালিত। গতকাল শনিবার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘মার্চ ফর ইউনূস’ প্ল্যাটফর্মে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন কিছু মানুষ। এসময় তাদের হাতে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি দেখতে চাই’সহ নানা ব্যানার দেখা যায়।
বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, ড. ইউনূসকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় রাখতে হবে এবং নির্বাচন আয়োজনের আগে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। তারা ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করার পাশাপাশি জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানান। এছাড়া সংবিধান সংস্কার, ‘জুলাই গণহত্যাকারী’ আওয়ামী লীগের বিচার সম্পন্ন এবং ড. ইউনূসকে পাঁচ বছর সময় দেওয়ার দাবিও জানান তারা।
ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করে জাতীয় সরকার গঠনসহ পাঁচ দফা দাবিতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘মার্চ ফর ইউনূস’ কর্মসূচি করা হয়। সরেজমিন শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে দেখা যায়, গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় নানা ব্যানার হাতে সাধারণ মানুষ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। কর্মসূচির শুরুতে উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। কর্মসূচির আয়োজন করা হয় ‘দেশের সর্বস্তরের জনগণ’ ব্যানারে। কর্মসূচিতে স্লোগান দেওয়া হয়- ‘তুমি কে, আমি কে? ইউনূস, ইউনূস!’; ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা’; ‘এই মুহূর্তে দরকার জাতীয় সরকার’; ‘বাঁশের লাঠি তৈরি কর, বাংলাদেশ রক্ষা কর’; ‘চুপ্পু না ইউনূস, ইউনূস ইউনূস’ স্লোগান। ‘মার্চ ফর ইউনূস’ কর্মসূচির পাঁচ দাবির মধ্যে রয়েছে- ১. ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ করতে হবে; ২. জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে; ৩. সংবিধান সংস্কার করতে হবে; ৪. জুলাই মাসের হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে ও ৫. ড. ইউনূসকে অন্তত ৫ বছরের সময় দিতে হবে।
জাতীয় সরকার গঠনের আহ্বান ইনকিলাব মঞ্চের : জুলাই গণহত্যার বিচার, মৌলিক সংস্কার ও নির্বাচনের দাবি নিয়ে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে জাতীয় সরকার গঠনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। গতকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে দেশের চলমান সংকট মোকাবিলায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি এ আহ্বান জানান।
ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়ে শরিফ ওসমান হাদি বলেন, বিএনপি অসহযোগিতা করলে তাদের জাতির কাছে জবাবদিহি করতে হবে। জামায়াত অসহযোগিতা করলে জবাবদিহি করতে হবে তাদেরও। এই সরকারের মেয়াদ হবে অন্তত ১০ মাস থেকে এক বছর। যদি জাতীয় সরকার না করতে পারেন তাহলে জাতীয় ঐক্য কাউন্সিল গড়ে তোলেন। জাতীয় ঐক্য কাউন্সিল প্রধান হবেন ড. মোহাম্মদ ইউনূস। সব রাজনৈতিক দল থেকে সেখানে প্রতিনিধি থাকবে সদস্য হিসেবে। তাদের সাংবিধানিক মর্যাদা হবে ক্যাবিনেট মন্ত্রী পরিষদের মতো। তারা মন্ত্রী হবেন না, উপদেষ্টা হবেন না কিন্তু ওয়াচডগ হিসেবে কাজ করবেন।
তারা প্রত্যেক বিষয়ে কথা বলতে পারবেন। জুলাই ঘোষণাপত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত জুলাই ঘোষণাপত্রের কার্যক্রম না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত আওয়ামী কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে কোনো লাভ নেই। যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না আসে, যারা জুলাইয়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন দিল্লির সঙ্গে মিলে আওয়ামী লীগ তাদের কচুকাটা করবে। জুলাই ঘোষণাপত্র সাংবিধানিক স্বীকৃতি পেলেই আওয়ামী কার্যক্রম নিষিদ্ধ হবে।
প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের বিষয় নিয়ে হাদি বলেন, আপনার কোনো ইখতিয়ার নাই পদত্যাগ করার। আপনাকে আমরা ক্ষমতায় বসিয়েছি। আপনি পদত্যাগ করে দেশের বাইরে চলে গেলে জুলাই যোদ্ধাদের কী হবে? যদি পদত্যাগ করতে চান, জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই আপনাকে পদত্যাগ করতে হবে।