ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ইসরায়েলি বিমানবন্দরে আবার ব্যালিস্টিক হামলা

* ইসরায়েলের হুমকির বিরুদ্ধে ইরানের কড়া প্রতিক্রিয়া * লন্ডনে ফিলিস্তিনের পক্ষে বড় বিক্ষোভ * ৭৬ ফিলিস্তিনি নিহত
ইসরায়েলি বিমানবন্দরে আবার ব্যালিস্টিক হামলা

ইয়েমেনের হুথি আনসার-আল্লাহ আন্দোলনের নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, তাদের যোদ্ধারা গত শুক্রবার ইসরায়েলের অতি গুরুত্বপূর্ণ বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে আবার হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটি ছিল তাদের তৃতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি এদিন এক টেলিভিশন বিবৃতিতে হামলার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘ইয়েমেনি বাহিনী তেলআবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে একটি হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এই হামলা সফলভাবে তার লক্ষ্য অর্জন করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘হামলার ফলে লাখ লাখ অবৈধ ইহুদি বসতিস্থাপনকারী নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন এবং বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।’ এর আগে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানায়, ইয়েমেন থেকে মধ্য ইসরায়েলের দিকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র তারা প্রতিহত করতে পেরেছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তারা ইয়েমেন থেকে ছোড়া তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে পেরেছেন। ইয়েমেনি বাহিনী বলেছে, তারা ইসরায়েলের দিকে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছেন, যার মধ্যে টানা দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের দিকে নিক্ষেপ করা হয়। তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এই হামলাগুলোর ফলে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির খবর দেয়নি। গত কয়েক সপ্তাহে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় ইয়েমেনি বাহিনী ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা বাড়িয়েছে। এর আগে, গাজায় চালানো আগ্রাসনের জবাবে লোহিত সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজগুলোতেও অব্যাহতভাবে হামলা চালান হুথিরা। তবে গত ৬ মে ওমানের মধ্যস্থতায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুথিদের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণা করেন, যা ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের কাছে ‘অপ্রত্যাশিত’ ছিল।

ইসরায়েলের হুমকির বিরুদ্ধে ইরানের কড়া প্রতিক্রিয়া : ইহুদিবাদী ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী। এক বিবৃতিতে বাহিনীর জেনারেল স্টাফ শুক্রবার বলেছে, ইসলামি বিপ্লবের পবিত্র লক্ষ্য এবং মূল্যবোধকে লক্ষ্য করে যে কোনো হুমকি বা অন্যায় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী পূর্ণশক্তি ও কর্তৃত্বের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নির্লজ্জ প্রেসিডেন্টের উচিত ইরান সম্পর্কে কথা বলার আগে এর ইসলামি বিপ্লব, দৃঢ় প্রতিরক্ষা এবং ট্রু প্রোমিজ অপারেশন ওয়ান ও টু-র ইতিহাস পর্যালোচনা করা, যাতে তিনি নিজের ভুল হিসাব সম্পর্কে বুঝতে পারেন। গত বছর গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় ইরান ট্রু প্রোমিজ ওয়ান ও টু-র মাধ্যমে তার সামরিক শক্তি প্রদর্শন করেছিল। একসঙ্গে শত শত মিসাইল আঘাত হেনেছিল ইসরায়েলে। হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল বলে জানায় ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো।

লন্ডনে ফিলিস্তিনের পক্ষে বড় বিক্ষোভ : গাজায় চলমান সংঘাতের মধ্যে ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাজ্যের অস্ত্র রপ্তানি বন্ধের দাবিতে লন্ডনের ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে গত শুক্রবার বিকা?লে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সমবেত হন। ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন’ বা পিএসসি আয়োজিত এই বিক্ষোভ থেকে ইসরায়েলি গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানানো হয় এবং এই গণহত্যায় যুক্তরাজ্য জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

এই বিক্ষোভ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি-র সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর অনুষ্ঠিত হলো, যেখানে তারা গাজায় ইসরায়েলের পদক্ষেপকে ‘জঘন্য’ এবং ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগকে ‘ভয়াবহ’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে, বিক্ষোভকারীরা যুক্তি দিচ্ছেন, কেবল কথা যথেষ্ট নয়, বরং তারা সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ, বিশেষ করে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন। সেখানে রাজনৈতিক কর্মী, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক জন রিজ বলেন, ‘আমরা দাবি করছি, তারা তাদের কথাকে কাজে পরিণত করুন।

ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করুন।’ ব্যাপক প্রতিবাদ সত্ত্বেও, যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র রপ্তানির লাইসেন্স অনুমোদন অব্যাহত রেখেছে, যার মধ্যে সংঘাতে ব্যবহৃত মার্কিন এফ-থার্টিফাইভ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশও রয়েছে। যদিও সরকার ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে কিছু অস্ত্র রপ্তানির লাইসেন্স স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছিল, সমালোচকরা উল্লেখ করেছেন, ইসরায়েলে অস্ত্রের সামগ্রিক সরবরাহ তেমন কমেনি। র‍্যালিতে উপস্থিত থেকে সাবেক লেবার নেতা জেরেমি করবিন সরকারি বক্তব্য ও নীতির মধ্যেকার বিরোধ তুলে ধরেন। করবিন জানান, ৪ জুন তিনি হাউস অব কমন্সে একটি বিল পেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যার মাধ্যমে গাজার যুদ্ধাপরাধে যুক্তরাজ্যের জড়িত থাকার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত চাওয়া হবে।

৭৬ ফিলিস্তিনি নিহত : গাজার বিভিন্ন স্থানে গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৭৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, কারণ বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শনিবার মন্ত্রণালয়ের বরাতে আলজাজিরা জানিয়েছে, সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাগুলোর একটি হয়েছে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের একটি বাড়িতে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ‘হত্যার জন্য ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে সামান্য অপরাধবোধও নেই; হেসেখেলে কৌতুক করে বেসামরিক লোকদের হত্যা করছে তারা।’ তারা জানান, এই হামলায় অন্তত ৫০ জন নিহত বা নিখোঁজ হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘নিষ্ঠুরতম পর্বে পৌঁছেছে গাজা সংকট। গাজার উত্তরাঞ্চলে এখনও পর্যন্ত কোনো ত্রাণ পৌঁছায়নি এবং গোটা উপত্যকায় যে সহায়তা ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে, তা এক চা চামচ পরিমাণের।’ গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫৩ হাজার ৮২২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন এক লাখ ২২ হাজার ৩৮২ জন। তবে গাজার সরকার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম অফিস বলছে, নিহতের সংখ্যা এরইমধ্যে ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে। কারণ, বহু মানুষ ধংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন, যাদের জীবিত থাকার সম্ভাবনা নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত