ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শেখ হাসিনাকে ৩ জুন ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ

শেখ হাসিনাকে ৩ জুন ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আদালত অবমাননার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আলম বুলবুলকে আগামী ৩ জুন ট্রাইব্যুনালে সশরীরে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল সোমবার ট্রাইব্যুনাল থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

গত রোববার আদালত অবমাননার অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে এই দুই অভিযুক্তকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য বহুল প্রচারিত দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩-এর ১১(৪) ধারা এবং ট্রাইব্যুনাল বিধিমালা-২০১০ এর ৪৫ বিধির আওতায় শেখ হাসিনা ও শাকিল আলম বুলবুলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদের নোটিশ পাঠানো হলেও তারা পূর্বনির্ধারিত তারিখে হাজির হননি এবং কোনো লিখিত জবাবও দেননি। এই প্রেক্ষাপটে আত্মপক্ষ সমর্থনের আরও একটি সুযোগ দিয়ে ট্রাইব্যুনাল আগামী ৩ জুন সকাল ১০টায় তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে বক্তব্য পেশের নির্দেশ দিয়েছেন। নির্ধারিত সময়ে তারা হাজির না হলে, তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার কার্যক্রম চলবে বলে জানানো হয়েছে। অভিযোগের পেছনে রয়েছে একটি ভাইরাল অডিও, যেখানে বলা হয়, ‘আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি।’ ফরেনসিক পরীক্ষায় এটি শেখ হাসিনার কণ্ঠ বলে প্রমাণিত হওয়ার পর আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষের শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। আদালতের তিন সদস্যের প্যানেলের নেতৃত্ব দেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদার। আসামিদের অনুপস্থিতিতে ২৫ মে শুনানি অনুষ্ঠিত না হওয়ায় পরবর্তী আদেশের জন্য ৩ জুন তারিখ নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এদিকে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে পোস্টে বলেন, ‘বিচার শুরু হচ্ছে শিগগির। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রক্রিয়া দৃশ্যমান করার দাবি আছে সমাজে। এটি দৃশ্যমান করা হয়েছিল আট মাস আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়েই। এরপর তদন্তকারী অফিস ও প্রসিকিউশন অফিস পুনর্গঠন করা হয়েছে। তদন্তকারী দল কয়েকটি মামলার তদন্ত শেষ করেছে। প্রসিকিউশন টিম পরীক্ষা নিরীক্ষা করে একটি মামলার ফরমাল চার্জ গঠন করেছে। গতকাল এটি ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়ার পর তা আমলে নেয়া হয়েছে।’ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল ফরমাল চার্জ আমলে নেওয়ার মাধ্যমে একটি বিচার প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। সেটি কাল থেকে শুরু হয়ে গেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রধান আসামি হিসেবে শেখ হাসিনার মামলার বিচারের শুনানি পর্ব শুরু হচ্ছে অচিরেই। ইনশাআল্লাহ, অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলেই এই বিচারের রায় পেয়ে যাব আমরা। গণহত্যার বিচার, আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার।’

গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আসন্ন জাপান সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী বলেছেন, ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরাতে আন্তর্জাতিক বিধি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ আছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে শেখ হাসিনাকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, শেখ হাসিনাকে ফেরাতে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করব। তবে আদালতের নির্দেশনা দেশের মধ্যেই কার্যকর হয়; দেশের বাইরে তা কার্যকর হয় না। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিধি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বন্দিবিনিময় চুক্তি রয়েছে-সে চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে উভয় দেশের সম্মতি থাকতে হবে। তাহলে সেটা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত