বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন তার সমর্থকরা। এতে ১৫ দিন ধরে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে সিটি কর্পোরেশনের নাগরিকসেবা।
গতকাল সরেজমিন ঘুর দেখা গেছে, ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচিতে ইশরাকের সমর্থকদের পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারীরাও যুক্ত ছিলেন। মূল ফটক আটকানোর পাশাপাশি সব বিভাগের গেটে ঝুলছে তালা। আন্দোলনকারীরা নগর ভবনের সামনের খোলা চত্বরজুড়ে অবস্থান নিয়ে মিছিল ও স্লোগান দেন। বন্ধ রয়েছে সব ধরনের সেবা। সেবাপ্রত্যাশীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। নাগরিকসেবার বিষয়ে ডিএসসিসির কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, আন্দোলনের ফলে গত ১৫ দিন জন্মনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, ট্যাক্স প্রধানসহ সব ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ থেকে বঞ্চিত নগরবাসী। এই আন্দোলন যত দীর্ঘ হবে নগরবাসীর ভোগান্তি ততই বাড়বে।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, নাগরিকসেবায় যে ধরনের ভোগান্তি তৈরি হয়েছে তার দায় স্থানীয় সরকারের। কারণ স্থানীয় সরকারের টালবাহানায় আদালতের রায়ের পরেও ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানো হচ্ছে না। তারা আরও বলেন, ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর আগপর্যন্ত নগরভবনের তালা খোলা হবে না। তবে নগরভবনের তালা বন্ধ থাকলেও নাগরিকসেবার সঙ্গে সম্পর্কিত পরিচ্ছন্ন বিভাগের কাজ চলমান থাকবে। এদিকে এই আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী সাবেক সচিব মশিউর রহমান বলেন, সাধারণ নাগরিকদের যেন কোনো ধরনের ভোগান্তি না পোহাতে হয় তার জন্য আমরা পরিচ্ছন্নতা বিভাগের সব ধরনের কাজে সহযোগিতা করছি। তবে, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে মেয়রের শপথ পড়ানো না হলে আমরা আবারও কঠিন থেকে কঠিনতর আন্দোলনে নামব। আন্দোলনের মাধ্যমে ঢাকাবাসী তাকে মেয়রের পদে বসাবে।
ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে গত ১৪ মে থেকে এই আন্দোলন শুরু হয়। গতকাল বেলা ১১টা থেকে নগর ভবনের বাইরে ও ভেতরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তার সমর্থক ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মচারীদের একটি বড় অংশ। নগরভবনের সেবা বন্ধ হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একাধিক বাসিন্দা। তারা বলেন, এই আন্দোলনের কারণে আমরা সেবা নেওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। কবে সঠিক সেবা পাব তার নিশ্চয়তা নেই। শিগগরিই সরকারকে এই সমস্যা থেকে জনগণকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, উপদেষ্টার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ইশরাক হোসেন শপথ নিতে পারছেন না। সাধারণ জনগণের যেই ভোগান্তি, নাগরিকরা যে সেবা পাচ্ছে না, তার জন্য দায়ী মূলত উপদেষ্টা।
এদিকে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায় ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা লিভ টু আপিলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বক্তব্য শুনবেন আপিল বিভাগ। এ জন্য নোটিশ ইস্যুর কথা জানিয়ে আজ শুনানির দিন রেখেছেন সর্বোচ্চ আদালত। গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ এই দিন নির্ধারণ করেন। হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে মেয়র ঘোষণা ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে গত সোমবার লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। লিভ টু আপিলটি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে গত মঙ্গলবার ওঠে। চেম্বার আদালত লিভ টু আপিলটি গতকাল আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় লিভ টু আপিলটি ১৪ নম্বর ক্রমিকে ওঠে। আদালতে লিভ টু আপিলকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন। ইশরাকের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম এহসানুর রহমান।