ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

প্রতিদিন এক ঘণ্টা কর্মবিরতির ঘোষণা সরকারি কর্মচারীদের

প্রতিদিন এক ঘণ্টা কর্মবিরতির ঘোষণা সরকারি কর্মচারীদের

সরকারি চাকরি আইন সংশোধন অধ্যাদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করবেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। আজ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত তাদের এই নতুন কর্মসূচি চলবে। বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতারা। একই সঙ্গে মাঠপর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ সব দপ্তরে একই সময়ে এই কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। গতকাল ভূমি সচিব সালাউদ্দিনসহ সাত সচিব সচিবালয়ের কর্মচারীদের দাবির বিষয়টি অবহিত করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশিদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশে ফেরার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে টানা পাঁচ দিন ধরে সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছেন সরকারি কর্মচারীরা। সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান বাদীউল কবীর সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশকে ‘অবৈধ কালাকানুন বা কালো আইন’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে আমরা মোটামুটি একটি সবুজসংকেত পেয়েছি। আশা করি, আমাদের আলাপ-আলোচনার ফলশ্রুতিতে যে ফলাফল আসবে, তাতে কর্মচারীরা সন্তুষ্ট হবেন।’

আলোচনা, আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা, বাজেট ঘোষণাসহ বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বাদীউল কবীর বলেন, সব বিষয় মাথায় রেখে আগামী দিনগুলোতে তারা আন্দোলন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জরুরি সেবার বিষয়টি বিবেচনা করে সচিবালয়ে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলতে থাকবে। মাঠপর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ সব দপ্তরে একই সময়ে একই কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এবং পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। বাদীউল কবীর বলেন, তবে জরুরি সেবা, যেমন যারা বাজেটের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, যারা হাসপাতালে রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন, সেসব কর্মচারী যেন যত কম সময় এই কর্মবিরতি পালন করেন। সেটি যেন আধা ঘণ্টার বেশি না হয়, সেই অনুরোধ জানান তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঐক্য ফোরামের আরেক কো-চেয়ারম্যান মুহা. নূরুল ইসলাম বলেন, ৩১ মে পর্যন্ত তাদের এই কর্মবিরতি চলবে। এরপর অবশ্যই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। যদি ৩১ মের পর ভালো কোনো ফলাফল না পাওয়া যায়, তাহলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সেই কর্মসূচি পরে পরিষ্কার করা হবে। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই।

গতকাল সকালে কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনার দায়িত্বপ্রাপ্ত ভূমি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব এ এম এম সালেহ আহমেদের নেতৃত্বাধীন কয়েকজন সচিব ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিল করার বিষয়ে কর্মচারীদের দাবি মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদের কাছে তুলে ধরেন। এখন মন্ত্রিপরিষদ সচিব বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তুলে ধরবেন। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন সচিব গত মঙ্গলবার আন্দোলনকারী কর্মচারী প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন হয়। এর পর থেকে এই অধ্যাদেশের বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। আন্দোলনের মধ্যেই গত রোববার সন্ধ্যায় ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে সরকার। এই অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে গত শনিবার থেকে টানা পাঁচ দিন সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। নিজেদের দপ্তর ছেড়ে বিপুলসংখ্যক কর্মচারী এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। তারা এই অধ্যাদেশকে নিবর্তনমূলক ও কালো আইন উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি করে আসছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত