ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

অভ্যন্তরীণ রুটে সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

অভ্যন্তরীণ রুটে সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে নদীতে বিপদসংকুল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে উপকূলীয় ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। ওই নিম্নচাপের প্রভাবে সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত এবং অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোতে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত জারি হওয়ায় উপকূলীয় নৌপথসহ অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলো উত্তাল রয়েছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে যাত্রী সাধারণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে উপকূলীয় ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী সব ধরনের নৌযানের চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, গতকাল বুধবার বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপটি সৃষ্টি হয়। এটি গতকাল ভোর ৫টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের উত্তরপূর্ব দিকে অবস্থান করছিল যা বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছাকাছি। নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া দিয়ে গতকাল বিকেলে উপকূল অতিক্রম করবে। যার প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত এবং ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইতে পারে। সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটির প্রভাব ইতোমধ্যে বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশের প্রতিটি জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

দেশের ছয় জেলায় বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সংস্থাটি জানিয়েছে, এসব এলাকার নদ-নদীসমূহ বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। একই সঙ্গে নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী দুই দিন চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী ও ফেনী ইত্যাদি নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে; এবং এই সময় মুহুরী নদীর পানি সমতল বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এই সময়ে ফেনী জেলার মুহুরী নদীর সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। পরবর্তী একদিন নদীসমূহের পানি সমতলে হ্রাস পেতে পারে। এছাড়া সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, ধলাই, খোয়াই ও সোমেশ্বরী নদীসমূহের পানি সমতলে আগামী তিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এই সময়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলায় উক্ত নদীসমূহের সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতলে আগামী তিন দিন বৃদ্ধি পেতে পারে; এবং তিস্তা নদী সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।

এদিকে, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরও শক্তি সঞ্চয় করে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, গভীর নিম্নচাপটি গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৭৫ কিলোমিটারপশ্চিমণ্ডদক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৮৫ কিলোমিটার পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে এগিয়ে বিকাল নাগাদ সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার কাছাকাছি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর উপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

লঘুচাপে উত্তাল সমুদ্র, ভেসে গেছে সৈকতের বিভিন্ন স্থাপনা : উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি একই এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। ঢেউয়ের তোরে ভেসে গেছে কুয়াকাটা সৈকতের বিভিন্ন স্থাপনা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ২৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এর প্রভাবে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। বড় বড় ঢেউ তীরে পড়ছে। গত বুধবার সকাল ১০টা শুরু হওয়া জোয়ারের তাণ্ডবে পুলিশ বক্স এলাকা, সরদার মার্কেট, ফুচকা মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনার বেশকিছু অংশ ভেঙে পড়েছে। সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মাইকিং করে সরিয়ে দিচ্ছেন পুলিশ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা।

বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সন্দ্বীপ : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ। নিম্নচাপের প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়ার পাশাপাশি গত বুধবার থেকেই সাগর উত্তাল রয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের সঙ্গে সব ধরনের নৌ চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর হওয়ায় কার্যত সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সন্দ্বীপ। আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুকূলে আসার আগপর্যন্ত এই নির্দেশনা বহাল থাকবে বলে জানান বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক (পোর্ট অফিসার) মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘সাধারণত ৩ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বললে আমরা নৌযান না চালানোর নির্দেশনা দিই। আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুযায়ী পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া হবে। এই সময়ে কোনো নৌযান চলাচল করবে না।’

সন্দ্বীপ থেকে পূর্ব উপকূলে চট্টগ্রামে যাত্রী পারাপারে রয়েছে একাধিক ঘাট। যোগাযোগের প্রধান ঘাট কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাট হয়ে স্পিডবোট, কাঠের তৈরি লঞ্চ ও বিআইডব্লিউটিএর জাহাজ এমভি মালঞ্চ চলাচল করে। সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়ায় চলাচল করে ফেরি কপোতাক্ষ। পশ্চিম উপকূলের চরলক্ষ্মী ঘাট দিয়ে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে যাত্রী পারাপারের একটি ঘাট রয়েছে। এখানে প্রতিদিন কাঠের তৈরি একটি লঞ্চ চলাচল করে। আজ এসব ঘাটের কোনোটিতেই কোনো ধরনের নৌযান চলাচল করেনি বলে জানা গেছে।

বৈরী আবহাওয়ায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও আরিচা-কাজীরহাট নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ : বৈরী আবহাওয়ার কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া এবং মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাবনার কাজীরহাট নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল আটটার পর থেকে বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া শুরু হয়। এতে নদী উত্তাল হয়ে ওঠে এবং বড় ঢেউ দেখা দেয়। দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সকাল ৯টার পর থেকে এসব নৌপথে ছোট-বড় সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে দায়িত্বে থাকা আরিচা লঞ্চ মালিক সমিতির ঘাটব্যবস্থাপক নুরুল আনোয়ার মিলন বলেন, সকালে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার কারণে নদীতে বড় ঢেউ ওঠে। পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে ওঠায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে লঞ্চ চলাচল আবার শুরু হবে। এ সময় যাত্রীদের ফেরিতে নদী পার হতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত