ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

টানা বৃষ্টিতে বাড়ছে পানি প্লাবিত নিম্নাঞ্চল

* রাজধানীজুড়ে জলাবদ্ধতা তীব্র ভোগান্তিতে নগরবাসী * কয়রা উপকূলে উঁচু জোয়ার : মুহূর্তেই ভেঙে পড়ল বেড়িবাঁধের ৩০০ মিটার * বৈরী আবহাওয়ায় ফ্লাইটে সাময়িক বিলম্ব * এখনও উত্তাল বঙ্গোপসাগর * শেরপুরে আবারও নদ-নদীর পানি বাড়ছে, চেল্লাখালীর পানি বিপৎসীমার উপরে
টানা বৃষ্টিতে বাড়ছে পানি প্লাবিত নিম্নাঞ্চল

টানা বৃষ্টিতে বাড়ছে পানি। প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয় বৃষ্টি, এখনও থামেনি বৃষ্টি। সারা দেশের মতো টানা এই বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়ও। পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ। প্রয়োজনীয় কাজে বের হওয়া অনেক কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকেই পাচ্ছেন না রিকশা বা কোনো বাহন। মাঝে মাঝে দু-একটি রিকশা বা সিএনজি পাওয়া গেলেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। কেউবা আবার বাড়তি ভাড়া না গুনে হাঁটু পানির মধ্যেই বৃষ্টিতে ভিজে ছুটে চলছেন গন্তব্যে। গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে।

রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকার সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ সমস্যায় বড় ভুক্তভোগী মান্ডা, মুগদা, বাসাবো, মতিঝিল ও কমলাপুরের মানুষ। এসব এলাকার সড়ক দুই থেকে তিন ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে ঘরমুখো মানুষ দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও কোনো বাহন পাচ্ছেন না। অনেকে হাঁটু পানির মধ্যেই ছুটে চলেছেন গন্তব্যের দিকে। মাঝেমধ্যে কেউ রিকশা অথবা সিএনজি পেলেও গুনতে হচ্ছে তিন থেকে চারগুণ ভাড়া।

তীব্র জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ফুটপাতের দোকানিরাও। ফুটপাতে বসা বেশিরভাগ দোকানই বন্ধ। কিছু দোকান খোলা থাকলেও বেচাকেনা নেই বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

মগবাজার থেকে মতিঝিলগামী একযাত্রী বলেন, কোনো রিকশা, সিএনজি, ইজিবাইক কিছুই এ রাস্তায় যেতে চায় না। পানি জমে আছে কিন্তু ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। এভাবে কতদিন চলবে, অনেক ভোগান্তি হচ্ছে।

এক সিএনজিচালক বলেন, বৃষ্টি হলেই তো পানি জমে যায়। সিএনজি চালাতে খুব কষ্ট হয়। এ কারণে ভাড়া একটু বেশি নেওয়া হয়। সবসময় তো আমরা বেশি ভাড়া নিই না। তবে রাস্তাঘাট ভালো থাকলে এই ঝামেলাটা থাকত না।

এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে কন্ট্রোলরুম স্থাপন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। কোনো এলাকায় জলবদ্ধতা দেখা দিলে ডিএনসিসি হট লাইন নাম্বারে ফোন করে তথ্য প্রদানের জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ঢাকা উত্তরের কোনো অঞ্চলে জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া গেলে দ্রুততার সঙ্গে জলাবদ্ধতা নিরসনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।

ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পূর্ব প্রস্তুতি থাকার কারণে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।

কয়রা উপকূলে উঁচু জোয়ার : মুহূর্তেই ভেঙে পড়ল বেড়িবাঁধের ৩০০ মিটার : খুলনার কয়রায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার ভোরে কয়রা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধের ১৩-১৪/ ২ নম্বর পোল্ডারের পাঁচটি স্থানের ৩০০ মিটার নদে ধসে পড়ে। এই ভাঙনে হুমকিতে পড়েছে বাঁধসংলগ্ন হরিণখোলা, ২ নম্বর কয়রা, গোবরা, ঘাটাখালী, মদিনাবাদ গ্রামসহ কয়রা উপজেলা সদরের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ।

হরিণখোলা গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে রাতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদে অন্তত ৪ ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ার হয়। আজ ভোরে ভাটার টানে পানি নামতে শুরু করলে কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী বেড়িবাঁধে হঠাৎ ফাটল ও ধসের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় লোকজনের চোখের সামনে ভাঙনরোধে পাউবোর দেওয়া জিও ব্যাগ ও বড় বড় মাটির খণ্ড নিয়ে বেড়িবাঁধের ৩০০ মিটার অংশ মুহূর্তেই নদে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙনরোধে অবিলম্বে পাউবোর পক্ষ থেকে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ফসলি জমিসহ অসংখ্য মাছের ঘের নদে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।

শেরপুরে আবারও নদ-নদীর বাড়ছে পানি, চেল্লাখালীর পানি বিপৎসীমার ওপরে : বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর চেল্লাখালী নদীর সন্ন্যাসীভিটা এলাকায় টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। এতে জেলার চারটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি রয়েছে। এর মধ্যে চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়তে থাকায় বন্যার শঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুর ১২টায় চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া ভোগাই ও শেরপুরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি রয়েছে। ঝিনাইগাতীতে মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি রাত থেকে বাড়তে শুরু করেছে।

জোয়ারের পানিতে লক্ষ্মীপুরের ২০ গ্রাম প্লাবিত : লক্ষ্মীপুরে গত তিন দিনের টানা বৃষ্টি ও মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপকূলীয় এলাকা ২০টি গ্রাম। পাশাপাশি পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে করে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। পাশাপাশি মাতাব্বরহাট এলাকায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌ-রুটে ফেরি চলাচল শুরু হলেও বন্ধ রয়েছে লঞ্চ ও ছোট নৌযানগুলো। বিশেষ করে গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। উত্তাল রয়েছে মেঘনা নদী।

পৌরসভার বাঞ্চানগর, সমসেরাবাদ, মজুপুর, কলেজ রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি, সাহেবেরহাট, পাটওয়ারীরহাট, চরফলকন, চরমার্টিন, চরলরেঞ্চ ইউনিয়ন এবং রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার, বড়খেরী, চরগাজী, চরআবদুল্লাহ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২০টি এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। জোয়ারের পানিতে রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি, ফসলি জমি, নিচু ঘরের ভিটি তলিয়ে যায়। তবে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত কখন হালকা, মাঝারি, ভারী বা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।

এছাড়া কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন এলাকায় রাস্তা ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে বলে জানান স্থানীয়রা। এছাড়া ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩১ কিলোমিটার তীর রক্ষাবাধেঁর কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু উত্তাল ঢেউয়ে বেড়িবাঁধের মাতাব্বরহাট এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। যে কোনো সময় ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়তে পারে বাঁধটি।

ঝালকাঠিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা : টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে ঝালকাঠির নিম্নাঞ্চল। এরমধ্যে সুগন্ধা, বিশখালী, গাবখান, হলতা ও ধানসিঁড়ি নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ফুট বেড়েছে। তলিয়ে গেছে শহরের রাস্তা-ঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফ্লোর, বসতবাড়িসহ বাগান ও কৃষিখেত। গত বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকায় দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।

পটুয়াখালীতে বেড়িবাঁধ ভেঙে ২০ গ্রাম প্লাবিত : গভীর নিম্নচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে পটুয়াখালীর গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় টানা মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে, সাথে বইছে দমকা হাওয়া। এরই মধ্যে জোয়ারের চাপে একাধিক স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে অন্তত ২০টি গ্রাম। গতকাল শুক্রবার সকালে দেখা যায়, বেড়িবাঁধ ভাঙার ফলে গলাচিপা, বাউফল, দশমিনা ও রাঙ্গাবালী উপজেলার বেড়িবাঁধহীন বিভিন্ন চরের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এমনকি সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের তোড়ে ধসে পড়েছে কুয়াকাটা মেরিন ড্রাইভ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জোয়ারের তোড়ে গলাচিপা পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বেড়িবাঁধের বাইরের এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সেখানে প্রায় আড়াই হাজার পরিবার এখন পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।

ওই এলাকার ঘরেগুলোতে ঢুকে পড়েছে জোয়ারের পানি। অনেক পরিবারে চুলা পর্যন্ত জ্বলেনি, ব্যবসায়ীদের মজুতকৃত ধান, ডাল ও বাদাম পানিতে তলিয়ে গেছে। তাছাড়া গলাচিপার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নিম্নাঞ্চল বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

জোয়ারের পানিতে ফেরির জেটি তলিয়ে যাওয়ায় নদীবেষ্টিত এই উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসান জানান, ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরিবারগুলোকে দ্রুত সহায়তা দেওয়া হবে বলেও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।

এদিকে, পানপট্টি ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পানপট্টি বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-সংলগ্ন এলাকায় ৫৫/৩ নম্বর পোল্ডারের প্রায় ১০ থেকে ১৫ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এতে বিবির হাওলা, গুপ্তের হাওলা, সুতিরাম ও খরিদা গ্রামসহ চারটি গ্রাম সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছে। এতে আশঙ্কা প্রকাশ করেন পানপট্টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা। তিনি বলেন, ‘আরও ১০ থেকে ১২টি গ্রাম প্লাবিত হতে পারে। ফলে এই এলাকার প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ চরম আতঙ্কে রয়েছেন। লবণাক্ত পানিতে তলিয়ে গেছে ফসিল জমি, পুকুর ও ঘের।’

তথ্যমতে, বেড়িবাঁধবিহীন চর কাজল ইউনিয়নের চর শিবার ধলার চর এলাকায় ২০০টি ঘর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া বড় চর কাজলের ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড তলিয়ে যাওয়ায় আরও দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গলাচিপা সদর ইউনিয়নের আগুনমুখা চরের ৬০টি ঘর এবং চর কারফারমার ৯০টি ঘর পানিতে ডুবে গেছে। এছাড়া, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন ডাকুয়া, গজালিয়া, কলাগাছিয়া ও নলুয়াবাগীর মানুষ। অন্যদিকে, রাঙ্গাবালীর মৌডুবি, চরআন্ডার বেড়িবাঁধ ভেঙে পাঁচ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে ভাটার অপেক্ষায় সময় গুনছেন। বাউফলের তেঁতুলিয়া নদী পাড়ের বাসিন্দারা ঝুপড়িঘর ছেড়ে উঁচুতে আশ্রয় নিয়েছেন। পাশাপাশি দশমিনার বাঁশবাড়িয়ার বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

নিম্নচাপের প্রভাবে ধেয়ে আসা কুয়াকাটায় সুউচ্চ ঢেউয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কুয়াকাটার মেরিন ড্রাইভের আদলে নির্মিত সড়কের বড় অংশ ধসে পড়েছে। পটুয়াখালীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মো: রাকিব জানান, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ শেষে বেড়িবাঁধের ভাঙন মেরামত করা হবে। এজন্য জিও ব্যাগ প্রস্তুত রয়েছে।

কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ভাঙন, আতঙ্কে এলাকাবাসী : খুলনার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের হরিণখোলা নামক স্থানে পাউবোর বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। জরুরিভিত্তিতে কাজ না করলে যে কোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে। যার কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে।

জানা গেছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে গতকাল শুক্রবার সকালে কয়রা কপোতাক্ষ নদের তীরে হরিণখোলা নামক স্থানে বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। সকালে হঠাৎ ১৩/১৪- ২ নম্বর পোল্ডারের পাঁচটি স্থানে ৩০০ মিটার বেড়িবাঁধ ধসে পড়ে। এতে হুমকিতে বাঁধসংলগ্ন গোবরা, ঘাটখালি, মদিবাদসহ উপজেলা সদরের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানালে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি জানালে সেখানে বস্তা দিয়ে কাজ শুরু করে। তবে জোয়ারের সময় নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় রয়েছে এলাকাবাসী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। সময় যত বাড়ছে, ততই যেন আরও বেশি ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের তীরে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে। কখন জানি ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণ পানিতে তলিয়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আমিন জানান, আজ সকালে হরিণখোলা নামক স্থানে বেড়িবাঁধে ধস নেমেছে। দ্রুত মেরামত না করা গেলে ছোট জায়গায় বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম বলেন, হরিণখোলা নামক স্থানে রফিকুল ইসলামের মৎস্য ঘেরের পাশ দিয়ে বেড়িবাঁধের ধস দেখা দিয়েছে। বাঁধ মেরামতের জন পাউবো কাজ শুরু করেছে। জরুরিভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামত করা না হলে বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে এলাকা প্লাবিত হতে পারে।

কয়রা সদর ইউনিয়নের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান এসএম লুৎফর রহমান বলেন, কয়রা সদর ইউনিয়ানের হরিণখোলা নামক স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ভাঙনের বিষয়টি পাউবোর কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকায় জরুরিভিত্তিতে কাজ না করলে এলাকা প্লাবিত হয়ে জমির ফসল, ঘরবাড়ি এবং মৎস্য ঘের নোনা পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাস বলেন, হরিণখোলায় বেড়িবাঁধ ভাঙনের কথা জেনেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল আলম বলেন, কয়রার হরিণখোলা নামক স্থানে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিক কাজ শুরু করা হয়েছে।

তালতলীতে চরম দুর্ভোগে বেড়িবাঁধের বাইরের মানুষ : বরগুনার তালতলী উপজেলার নলবুনিয়া, আমখোলা ও নিদ্রারচর এলাকায় বৃষ্টির পানি আর পায়রা নদীর জোয়ারের পানিতে ডুবে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি। এই তিন এলাকার হাজারো মানুষ বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাসের ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। সামান্য জোয়ারেই ভেসে যায় তাদের জীবন-জীবিকা। টেকসই বাঁধ দিয়ে বাঁচার সুযোগ চান ভুক্তভোগীরা।

নলবুনিয়ার কৃষক আনোয়ার মল্লিক কাঁদতে কাঁদতে বলেন, বারবার নদীর ভাঙনে জমি হারিয়েছি। এবার বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে থাকার ঘর। রান্না করার উপায় নেই, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। টেকসই বেড়িবাঁধ পেলে হয়তো আজ পথে বসতে হতো না। আমরা শুধু বাঁচার অধিকার চাই যেটা আমাদের থেকে কেড়ে নিচ্ছে সর্বনাশা পায়রা নদী।

আমখোলার গৃহবধূ রোকেয়া বেগমের চোঁখেও একই আর্তি। তিনি বলেন, আমরা বাঁধের বাইরে থাকি বলে কেউ আমাদের কষ্ট দেখে না। বৃষ্টি আর জোয়ারের পানি আমাদের ঘর- বাড়ি কেড়ে নিচ্ছে। আমরা আশ্রয় চাই, একটু নিরাপত্তা চাই। টেকসই বাঁধ চাই। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আল মাসুম জানান, প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। হতাহতের খবর নেই। বেড়িবাঁধের বাইরে পানি উঠেছিল, এখন নেমে গেছে।

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন চিত্র ভিন্ন। মানুষগুলো শুধু বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ করছে। প্রতিনিয়ত হেরে যাচ্ছে প্রকৃতির কাছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় জনপদগুলো ক্রমাগত ঝুঁকিতে থাকলেও এখনও পর্যন্ত টেকসই কোনো সমাধান হয়নি। ফলে বাঁধের বাইরে থাকা পরিবারগুলো বছরের পর বছর ধরে অতি বর্ষা, বন্যা ও জোয়ারের মুখে তাদের সর্বস্ব হারিয়ে ফেলছে।

স্থানীয় ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, কেন তারা বাঁচার অধিকার পাবে না? বাঁধের বাইরে বসবাস করা মানুষগুলোর জীবন কি মূল্যহীন? ভুক্তভোগী ওই মানুষগুলোর দাবি, টেকসই বাঁধ দিন, বাঁচার একটু সুযোগ করে দিন।

বান্দরবানে টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ধস, রুমার সঙ্গে সদরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন : বান্দরবানে টানা দুই দিনের ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের ঘটনায় রুমা উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে ওয়াইজংশন-রুমা সড়কের একটি অংশে পাহাড় ধসে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় এবং পাহাড়ধসের আশঙ্কায় জেলা শহর ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

জেলা দুর্যোগব্যবস্থাপনা কমিটির সভা শেষে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আসিফ রায়হান জানান, সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলার ৭টি উপজেলায় ২২০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে। তবে এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে কেউ আসেননি। সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি রয়েছে। পাহাড়ধস ও নিম্নাঞ্চল ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতবাড়ির বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।

বৈরী আবহাওয়ায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, চলছে ফেরি : বৈরী আবহাওয়ার কারণে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া এবং মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাবনার কাজিরহাট নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুই নৌপথে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে দুই নৌপথে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক আছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয়ের ট্রাফিক সুপারভাইজার মো. শিমুল ইসলাম গতকাল শুক্রবার বলেন, বৈরী আবহাওয়ায় গতকাল সকাল থেকে পদ্মা ও যমুনা নদী উত্তাল হয়ে ওঠে। এতে যাত্রী পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গতকাল সকাল ৯টা থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দুই নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে। যদি আজ বিকেলের দিকে আবহাওয়া ভালো হয়, তখন লঞ্চ চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। লঞ্চঘাটে নদী পাড়ি দিতে আসা যাত্রীদের ফেরিতে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

ছয় জেলায় বন্যার পূর্বাভাস : দেশের ছয় জেলায় বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এসব এলাকার নদ-নদীগুলোর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ সংস্থা। জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ফেনী, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট ও নেত্রকোনা। ফেনী বাদে বাকি পাঁচ জেলা হাওর অঞ্চলের। গত বৃহস্পতিবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এক বুলেটিনে জানিয়েছে, আগামী দুই দিন ফেনীর মুহুরী নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরির ঝুঁকি রয়েছে। কারণ হিসেবে সংস্থাটি বলছে, ভারী বৃষ্টির প্রভাবে চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী ও ফেনী নদীর পানি বাড়তে পারে। আর মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। পরের এক দিনে এসব নদীর পানি কমে যাওয়ার আভাসও দিয়েছে সংস্থাটি। আগামী তিন দিন সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, ধলাই, খোয়াই ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বাড়তে পারে এবং বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

বৈরী আবহাওয়ায় ফ্লাইটে সাময়িক বিলম্ব : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ঐঝওঅ) থেকে বর্তমানে সকল আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের উড্ডয়ন ও অবতরণ কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তবে চলমান খারাপ আবহাওয়া ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কিছু ফ্লাইটে সাময়িক বিলম্ব হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো ফ্লাইটকে বিকল্প গন্তব্যে ডাইভার্ট করতে হয়নি, যা যাত্রী ও এয়ারলাইন্স উভয়ের জন্য একটি স্বস্তির বিষয়। যেকোনো সম্ভাব্য পরিস্থিতি দক্ষতার সাথে মোকাবিলার জন্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষণিকভাবে এয়ারলাইন্স, সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও আবহাওয়া অধিদফতরের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে।

এখনও উত্তাল বঙ্গোপসাগর : জোয়ারের তাণ্ডবে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত এলাকায় অধিকাংশ জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। সতর্ক অবস্থানে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া জোয়ারের তাণ্ডব চলে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। এ সময় সৈকতে অতি উৎসাহী কিছু পর্যটককে গোসলে মেতে থাকতে দেখা গেছে। সৈকতের আশপাশের মার্কেটগুলোর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক।

বরগুনায় নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত : নিম্নচাপের প্রভাবে বরগুনার বিভিন্ন নদীতে জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় নদীসংলগ্ন বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের বসতঘরে পানি প্রবেশের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সরেজমিন বরগুনার সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের ডালভাঙা নামক এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিষখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই এলাকার একটি রিং বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে পনি প্রবেশ করছে। নদীতে জোয়ারের পানির উচ্চতা আরও বাড়লে আবারও এসব এলাকার ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে মূল বেড়িবাঁধের ভিতরের অংশের বাসিন্দারা নিরাপদে রয়েছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত