ফেনী সীমান্ত দিয়ে নারী, শিশুসহ ১৩ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকাল শুক্রবার ভোরে জেলার ছাগলনাইয়ার সীমান্ত দিয়ে তাদের ঠেলে পাঠানো হয়। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে তাদের আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন- মো. আলতাফ (৩৯), তার স্ত্রী মোমিনা বেগম (৩২), মো. আমিনুল ইসলাম (৩৮), তার স্ত্রী উর্মি বেগম (২৯), মোমিনুল হক (৩৫), তার স্ত্রী শেফালী বেগম (৩০) এবং ইশরাক হোসেন (৪০)। বাকি ছয়জন শিশু।
বিজিবি জানায়, ছাগলনাইয়া উপজেলার মটুয়া সীমান্ত ফাঁড়ির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত দিয়ে ঠেলে পাঠানো ৪টি পরিবারের ১৩ জনকে আটক করে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আটক ব্যক্তিদের বরাতে বিজিবির কর্মকর্তারা বলেন, ওই ১৩ বাংলাদেশিকে হাত ও চোখ বেঁধে সীমান্ত এলাকায় নিয়ে আসা হয়। পরে বৈরী আবহাওয়ার সুযোগ নিয়ে প্রত্যেকের হাত ও চোখের বাঁধন খুলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে।
ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, বিজিবির পক্ষ থেকে থানায় হস্তান্তর করা ১৩ জনকে স্থানীয় মটুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে রাখা হয়েছে। তাদের খাবারসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। বিজিবি-৪ ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, সীমান্তে ঠেলে পাঠানোর ঘটনায় বিএসএফের সংশ্লিষ্ট কোম্পানি কমান্ডারকে মৌখিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিজিবির কোম্পানি কমান্ডার। এ বিষয়ে প্রতিবাদলিপি পাঠানোর বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। এদিকে, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার রেমা-কালেঙ্গা সীমান্ত দিয়ে আরও ২২ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে গতকাল শুক্রবার ভোর পর্যন্ত এই ঘটনা ঘটে। পরে তাদের আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এর আগে গত সোমবার একইভাবে রেমাকালেঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ১৯ জনকে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ। এ নিয়ে হবিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ৪১ জনকে পাঠাল ভারত।
বিজিবির হবিগঞ্জ-৫৫ ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টির সুযোগে বিএসএফ তাদের নিজ সীমান্তে একত্র করে কাঁটাতারের গেট খুলে ২২ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ সময় দুজন আহত হন। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ৩ শিশু, ১০ নারী ও ৯ জন পুরুষ রয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, তাদের সবার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলায়। বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
বিজিবি সূত্র জানায়, আটক ব্যক্তিদের কেউ কেউ ১৮ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তাদের একজন বলেন, ‘আমরা হরিয়ানায় দীর্ঘদিন ধরে ইটভাটায় কাজ করতাম। দুই দিন আগে সিআইডি পুলিশ আমাদের ধরে নিয়ে গিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়।’ চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য খলিলুর রহমান বলেন, আজ ভোরে বৃষ্টি হচ্ছিল। এ সময় সীমান্তের রেমা-কালেঙ্গা বনের ভেতর দিয়ে বিএসএফ তাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি দেখে বিজিবিকে খবর দেন। পরে বিজিবি গিয়ে তাদের আটক করে।
বিজিবির কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, বর্তমানে আটক ব্যক্তিদের সীমান্তের একটি আদিবাসী বাড়িতে রাখা হয়েছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে তাদের বিজিবি ক্যাম্পে নেওয়া হবে। এদিকে, মৌলভীবাজারের দুই উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে ২৯ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। গতকাল শুক্রবার ভোরে কমলগঞ্জ ও সকালে জুড়ী উপজেলা থেকে তাদের আটক করে বিজিবি। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ও শিশু আছে। বিজিবির রাজকি বিওপি ক্যাম্পের কমান্ডার নায়েক সুবেদার আবুল হাশেম বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কমলগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বিএসএফের ঠেলে পাঠানো ২১ জন। গত সোমবার সকালে ৪৬ বিজিবির বর্ডার আউট পোস্টে বিজিবির ওই কমান্ডার বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে আজ সকাল থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। এরই মধ্যে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ওই ১০ জনকে সীমান্ত এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। এরপর ওই ব্যক্তিদের আটক করে ক্যাম্পে আনা হয়। আটক ১০ জনের মধ্যে ৪ শিশু, চারজন পুরুষ ও দুইজন নারী রয়েছেন। তারা বৃষ্টিতে ভিজে জবুথবু অবস্থায় ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তিরা জানান, তাদের বাড়ি কুড়িগ্রামে। বিএসএফ ভোরের দিকে তাদের ঠেলে এপারে পাঠিয়েছে। তাদের পূর্ণাঙ্গ নামণ্ডঠিকানা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে আবুল হাশেম আরও বলেন, আটক ব্যক্তিরা জীবিকার সন্ধানে বেশ আগে ভারতে চলে যান। সেখানে হরিয়ানা রাজ্যে তারা দিনমজুরের কাজ করতেন। ৯ মে সেখানকার পুলিশ তাদের আটক করে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে। এ সময় তাদের মুঠোফোন ও পরিচয়পত্র জব্দ করা হয়। আটক ব্যক্তিরা ক্ষুধার্ত ছিলেন। ক্যাম্পে আনার পর তাদের খাবার দেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে কমলগঞ্জ উপজেলার পৃথক দুটি সীমান্ত এলাকা থেকে শিশুসহ ১৯ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের ভারত থেকে ঠেলে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি। আজ ভোর চারটার দিকে উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা বাগীছড়া থেকে পাঁচজন ও চাম্পাছড়া এলাকা থেকে ১৪ জনকে আটক করা হয়। বিজিবি ৪৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাকারিয়া জানান, গত ভোর চারটার দিকে কমলগঞ্জের বাগীছড়া সীমান্ত এলাকা থেকে পাঁচজন ও সকাল ৭টার দিকে চাম্পাছড়া সীমান্ত এলাকা থেকে ১৪ জনকে বিজিবির টহল দল আটক করে। প্রথম পাঁচজনকে কমলগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হচ্ছে। তারা নিজেদের কুড়িগ্রামের বাসিন্দা বলে দাবি করেছেন। অন্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আটক ব্যক্তিদের সবাইকে কমলগঞ্জে হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।