ঢাকা রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নিবন্ধন ফিরে পেল জামায়াত

নিবন্ধন ফিরে পেল জামায়াত

এক যুগ আগে রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে রায় দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। তবে, এতে জায়ামাতে ইসলাম তাদের নিবন্ধন ফিরে পেয়েছেন। তবে, জামায়াতের প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ থাকবে কি না বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

গতকাল রোববার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ এ রায় দেন। নিবন্ধন ফিরে পাওয়ায় সারা দেশে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীর মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। রায়ে আদালত বলেছেন, দলটির ক্ষেত্রে পেন্ডিং (অনিষ্পন্ন) গঠনতন্ত্র ও রেজিস্ট্রেশন ইস্যু এবং অন্য কোনো ইস্যু যদি থেকে থাকে, তা সাংবিধানিক ম্যান্ডেট (বিচারগত ও আইনগত) পুরোপুরি প্রয়োগ করে নিষ্পত্তি করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের করা আপিল সর্বসম্মতিতে মঞ্জুর এবং লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) নিষ্পত্তি করে এ রায় দেওয়া হয়। গতকালের রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তা ন্যায়সংগত হয়নি। এ অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে দেওয়া রায় ও আদেশ বাতিল করা হয়েছে। রায়ের পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আইনি লড়াই-সংগ্রাম শেষে, জামায়াত দল হিসেবে তার ন্যায্য অধিকার ফিরে পেল। এই রায়ের মাধ্যমে আরও একটি জুলুমণ্ডনিপীড়নের অবসান হলো। আপিল বিভাগের এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হলো এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হলো। আমরা আশা করছি এই রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতি এক নতুন মাত্রা লাভ করবে, ইনশাআল্লাহ।

রায়ের পর আপিলকারীর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক সংসদ প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে। বাংলাদেশের আগামী সংসদে ইন্টারেস্টিং এবং কনস্ট্রাক্টিভ বিতর্ক হবে, যার মাধ্যমে ডেমোক্রেসি (গণতন্ত্র) একটি স্থায়ী রূপ লাভ করবে। শিশির মনির বলেন, জামায়াতে ইসলামীর ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক নির্বাচন কমিশনের সামনে অন্য ইস্যু হিসেবে পাঠানো হয়েছে। সংক্ষিপ্ত আদেশ চেয়েছি। সংক্ষিপ্ত আদেশ দ্রুত নির্বাচন কমিশনের কাছে নিয়ে যাব। কমিশন অতি দ্রুত নিবন্ধন ও দাঁড়িপাল্লা প্রতীক বুঝিয়ে দেবে বলে প্রত্যাশা এই আইনজীবীর। এদিকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম বলেছেন, আপিল বিভাগের রায়ের ফলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে ইসির দেওয়া নিবন্ধন বহাল রইল। তবে প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে আদালত কোনো পর্যবেক্ষণ দেননি।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের নভেম্বরে জামায়াতকে নিবন্ধন সনদ দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে ইসির দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট করেন সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি। চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ। একই সঙ্গে আদালত এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সনদ দেন, যা ওই বছরই আপিল হিসেবে রূপান্তরিত হয়। পাশাপাশি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে দলটি। তবে হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরপরই তা স্থগিত চেয়ে জামায়াত আবেদন করে, যা ২০১৩ সালের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের তৎকালীন চেম্বার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। এরপর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৪ সালের ১ আগস্ট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে জারি করা আগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়। আর গতকাল রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায় বাতিল করে রায় দেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত