ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শেখ মুজিবসহ মুজিবনগর সরকারের সবাই মুক্তিযোদ্ধা

শেখ মুজিবসহ মুজিবনগর সরকারের সবাই মুক্তিযোদ্ধা

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মো. মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামান মুক্তিযোদ্ধা। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে এ কথা জানান তিনি। ফারুক ই আজম বলেছেন, মুজিবনগর সরকারে যারা ছিলেন, তারাও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবে। যারা সশস্ত্রভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছে, যারা পরিচালনা করেছে তারা মুক্তিযোদ্ধা। তবে ওই সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন। তিনি আরও বলেছেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রসহ কূটনীতিকরা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা। সহযোগী মানে এ নয় যে তাদের সম্মান ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। উপদেষ্টা বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করে তা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইনের সংশোধিত অধ্যাদেশে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও এটি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। ফারুক ই আজম বলেন, ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাই বাস্তবায়ন করেছে। ২০১৮ ও ২০২২ সালে এটা পরিবর্তন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী দুইয়েরই সম্মান, মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা একই থাকবে। জাতিগতভাবে মুক্তিযুদ্ধ না করলে আমরা স্বাধীন হতে পারতাম না। মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে গৌরব আমাদের জাতির ইতিহাসে আর কিছু হয়নি। এর আগে মঙ্গলবার রাতে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল অধ্যাদেশ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। সম্প্রতি সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়েছে এবং মঙ্গলবার রাতে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে জারি করা হয়। এই অধ্যাদেশের ভিত্তিতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহযোগীদের আর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হবে না। তবে উপদেষ্টা বলেন, এ ধরনের সংবাদ বিভ্রান্তিকর। বরং, অধ্যাদেশে মুজিবনগর সরকারকে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সুতরাং বঙ্গবন্ধু বা ওই সরকারের অন্য সদস্যদের স্বীকৃতি বাতিলের কোনো নির্দেশনা অধ্যাদেশে নেই। তিনি আরও বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রত্যক্ষভাবে সামরিক বা প্রতিরোধ কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন, তাদের স্বীকৃতি যেমন অপরিহার্য, তেমনি নেতৃত্ব, সংগঠক ও প্রেরণাদাতাদের অবদানকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা ফারুক ই আজম দৃঢ়ভাবে বলেন, “মুজিবনগর সরকারের অন্য সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা বাতিলের বিষয়ে যা বলা হচ্ছে, সেটি সঠিক নয়।” অধ্যাদেশে বিস্তারিত বলা হয়েছে, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হবেন তারাই, যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ভেতরে বা বাইরে প্রশিক্ষণ নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াই করেছেন।

এর মধ্যে আছেন— মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধা, ইপিআর, পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, কিলো ফোর্স, নৌ কমান্ডো, আনসার ও মুজিবনগর সরকারের স্বীকৃত যোদ্ধা। এছাড়া যেসব নারী পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, অর্থাৎ ‘বীরাঙ্গনা’ হিসেবে পরিচিত, তারাও ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’র মর্যাদা পাবেন। যুদ্ধের সময় যারা ফিল্ড হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স বা চিকিৎসা-সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন, তারাও ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃত থাকবেন। অন্যদিকে, যারা যুদ্ধক্ষেত্রে যাননি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাদের নতুনভাবে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ বলা হবে।

অধ্যাদেশে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’র সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যারা প্রবাসে বা দেশে অবস্থান করে যুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন করেছেন, মনোবল জুগিয়েছেন, সাংস্কৃতিক বা কূটনৈতিক প্রচারণা চালিয়েছেন—তারা এই শ্রেণিতে পড়বেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য— প্রবাসে অবস্থানকারী বাংলাদেশি পেশাজীবী, যারা বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে মত গঠন করেছেন, মুজিবনগর সরকারের অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দূত, ওই সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও সহকারী কর্মীরা, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জয়ী এমএনএ ও এমপিএ, যারা পরবর্তীতে গণপরিষদ সদস্য হয়েছিলেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলী, দেশ ও বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয় সাংবাদিক ও স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এসব শ্রেণির মানুষ আর ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে গণ্য হবেন না। তবে তারা এখন থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘সহযোগী’ শব্দটি যুক্ত হলেও কেউ তাদের অবদানের গুরুত্ব হারাচ্ছেন না। শুধু মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগীদের ভূমিকার মধ্যে একটি স্পষ্ট বিভাজন তৈরি করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। সরকার বলছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরতেই সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়েছে। এখন থেকে যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, তারা হবেন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’। আর যারা বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন, তারা থাকবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে। চূড়ান্তভাবে নতুন তালিকা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

ভুল সংবাদ পরিবেশন করলে ব্যবস্থা : আজাদ মজুমদার

এখন থেকে ভুল সংবাদ পরিবেশন করলে সরকার ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। গতকাল দুপুরে রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। তিনি বলেন, যারা এখন থেকে ভুল সংবাদ প্রকাশ করবেন বা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করবেন, যেগুলো মানুষকে বিভ্রান্ত করবে, সরকার তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। আজাদ মজুমদার বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের খেতাব সংক্রান্ত খবরটি ভুয়া, মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।’ তিনি আরও বলেন, যেসব গণমাধ্যম ভুল সংবাদ প্রচার করেছেন, আমরা আশা করব তারা তাদের ভুলটা সংশোধন করবেন। যেখানে তারা ভুল সংবাদটি ছাপিয়েছেন, ঠিক একই জায়গায় তারা সংশোধনী ছেপে পাঠকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করবেন।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ব্যাপারে খুব উদার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সমালোচনাকে সবসময় স্বাগত জানাই। কিন্তু কাউকে এরকম কোনো লাইসেন্স দেওয়া হয়নি যে, তিনি চাইলেই একটি ভুল সংবাদ প্রচার করবেন।

জাতীয় নেতাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিলের খবর ভিত্তিহীন: প্রেস উইং : জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন-২০২২ সংশোধন করে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগ থেকে অধ্যাদেশ জারির পর থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী রাজনীতিবিদের (এমএনএ/এমপিএ) ‘বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি’ থেকে বাদ দেওয়ার খবর প্রকাশ হয়েছে। তবে এসব খবরকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর’ বলে উল্লেখ করেছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস উইং।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস’ পেজে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং দুই মন্ত্রী মো. মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানসহ শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল বলে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর।’ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজমের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, মুজিবনগর সরকারে যারা ছিলেন, তারাও মুক্তিযোদ্ধা। যারা সশস্ত্রভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছে; যারা পরিচালনা করেছে, তারাও মুক্তিযোদ্ধা। তবে ওই সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা।’ উপদেষ্টা আরও জানান, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অধ্যাদেশ অনুযায়ী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রসহ কূটনীতিকরা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা। সহযোগী মানে এই নয়, যে তাদের সম্মান ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধার যে সংজ্ঞা ছিল সেটাই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০১৮ ও ২০২২ সালে এটা পরিবর্তন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী দুইয়েরই সম্মান, মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা একই থাকবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত