ঢাকা রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দুয়ারে ভোট, রাজনীতিময় ঈদ

দুয়ারে ভোট, রাজনীতিময় ঈদ

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে পুরোদমে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ছুটছেন নিজ নিজ সংসদীয় আসনে। ভোটারদের মন জয় করতে নানা কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত সময় পার করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষিত না হলেও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন রাজনৈতিক নেতারা। যদিও এরইমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন- আগামী বছরের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপরই সম্ভাব্য প্রার্থীরা আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। ঈদুল আজহা সেই নির্বাচনি পালে এবার দিয়েছে বাড়তি হওয়া। এবারের ঈদে বিভিন্ন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ছিল এলাকামুখী। রাজনৈতিক দল ও সাধারণের মাঝে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন। দীর্ঘদিনের ভোটারবিহীন নির্বাচনের বাইরে এসে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠবে বলেই সাধারণের ধারণা। ফলে নির্বাচনি আবহে এবার উদযাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহা।

নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ঈদ উদযাপনকে নির্বাচনি প্রস্তুতি হিসেবে নিয়েছিলেন নানামুখী প্রস্তুতি। সম্ভাব্য প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের চাঙা করতে ছুটে যান নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায়। পাশাপাশি এলাকার সাধারণ মানুষকে দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি। ঈদের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা মানুষের পাশে থাকারও চেষ্টা করেছেন। শুভেচ্ছা বিনিময়ের নামে এলাকায় চালিয়েছেন ব্যাপক প্রচার ও গণসংযোগ।

ব্যানার-পোস্টারে অধিকাংশ নির্বাচনি এলাকা ছেয়ে গেছে। এতে ঈদের পাশাপাশি ভোটের আমেজও সৃষ্টি হয়েছে। এসব রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রত্যেকেই আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনসাধারণের কাছে সহযোগিতা চাওয়া শুরু করেছেন। তারা মতবিনিময় সভা এবং নানা ধরনের সেমিনার, গণসংযোগ, উঠোন বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। এরইমধ্যে অনেকেই কৌশলে নিজের প্রার্থিতাও ঘোষণা করেছেন। এতে ঈদকেন্দ্রিক ভোটের রাজনীতি জমে ওঠে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, গত ১৫ বছরে নেতাকর্মীদের কাছে ঈদ মানেই ছিল বাড়তি আতঙ্ক। ঈদ মানেই ছিল হামলা-মামলা, গ্রেপ্তার-হয়রানির ভয়। বহু নেতাকর্মী নিজ বাড়িতে থেকে ঈদ উদযাপন করতে পারেননি। অনেকের ঈদ কেটেছে জেলে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে গত রোজার ঈদ মুক্ত পরিবেশে কাটাতে পেরেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এবার ঈদুল আজহাও মুক্ত পরিবেশে উদযাপন করতে পেরেছেন। ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে নির্বাচনের আগে আর ঈদ আসবে না। ফলে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে ছিল এবারের ঈদ একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

বিএনপির অধিকাংশ নেতাই ঈদের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনি এলাকার মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। একই সঙ্গে বিগত সরকারের আমলে নির্যাতিত ও গুম-খুনের শিকার নেতাকর্মীর পরিবারের পাশেও দাঁড়িয়েছেন।

এবার গুলশানের নিজ বাসভবন ফিরোজায় ঈদের নামাজ আদায় করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঈদের নামাজ আদায় করেন লন্ডন স্থানীয় মসজিদে। এছাড়াও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গুলশান আজাদ মসজিদে, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন গুলশান সোসাইটি মসজিদে, মির্জা আব্বাস শাহজানপুর ঈদগাহ ময়দানে নামাজ আদায় করেন। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কেরানীগঞ্জ স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। আব্দুল মঈন খান নরসিংদীর পলাশে, নজরুল ইসলাম খান বনানী ডিওএইচএস মসজিদে, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রামে, সালাহউদ্দিন আহমেদ কক্সবাজারে, বেগম সেলিমা রহমান বনানী বাসায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সিরাজগঞ্জে, হাফিজউদ্দিন আহমদ বনানী বড় মসজিদে অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ধানমন্ডিতে ঈদের নামাজ আদায় করেন। এছাড়াও বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য, কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতারা ও সাবেক সংসদ এবং সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন বলে জানা গেছে। ঈদের দিন বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপির মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়র নেতারা। রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও তৃণমূল নেতাকর্মীর সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে এলাকায় গিয়েছিলেন। লম্বা ছুটি কাজে লাগিয়ে কর্মী-সমর্থকদের আরও চাঙা করেছে দলটি। এরইমধ্যে দলটি বিভিন্ন আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামও ঘোষণা করেছেন। জানা গেছে, জামায়াত নেতাদের মধ্যে আমির ডা. শফিকুর রহমান ঢাকায়, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক মুজিবুর রহমান মক্কায়, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের কুমিল্লায়, মাওলানা শামসুল ইসলাম চট্টগ্রামে, অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার খুলনায়, এটিএম মা’ছুম কুমিল্লা, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জে, হামিদুর রহমান আযাদ ঢাকায়, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের মক্কায়, মোয়াজ্জম হোসাইন হেলাল বরিশালে, মাওলানা মো. শাহজাহান চট্টগ্রাম, মতিউর রহমান আকন্দ ঢাকায় পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করেন।

বসে নেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গঠিত নতুন দল এনসিপির নেতারাও। দলটির অধিকাংশ নেতা এবার নিজ এলাকায় ঈদ উদযাপন করেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া তিনটি দলের বাইরে অন্য রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নিজ নির্বাচনি এলাকায় গিয়েছেন। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় ঈদ উদযাপন করেন। দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ঈদ করেন নিজ এলাকা রংপুরে। এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম নিজ জেলা পঞ্চগড়ে ঈদ করেছেন। দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহও নিজ জেলা কুমিল্লায় ঈদ করেছেন। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় ঈদ করেছেন। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ঈদ করেন নিজ জেলা ভোলায়। নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগও করেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের যারা ঈদের দিন নিজ এলাকায় কাটিয়েছেন, তারা ঈদ উৎসবে যোগদানের পাশাপাশি গণসংযোগ ও মতবিনিময়ে অংশ নেন। বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে, এসএমএস পাঠিয়ে এবং সোশ্যাল মিডিয়া, ব্যানার-পোস্টারের মাধ্যমে গণসংযোগ করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের সমর্থনকারী নেতারা। সব মিলিয়ে ঈদের আনন্দের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের আমেজে চাঙা হয়ে ওঠে প্রতিটি এলাকা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত