দেশে ফের চোখ রাঙাতে শুরু করেছে মহামারি করোনাভাইরাস। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। ১০১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এই ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তবে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত কারও মৃত্যু হয়নি। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৬০ জনে। গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের প্রত্যেকেই ঢাকা মহানগরী এলাকার বাসিন্দা। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন দুইজন। এর ফলে এ সংখ্যা ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৮ জনে দাঁড়িয়েছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিত করতে পাঁচ দফা নির্দেশনা পালনের আহ্বান জানিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
গত সোমবার রাতে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আজাদ খান বলেন, করোনার নতুন উপধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেসব বিষয় মানার কথাও বলা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া। এছাড়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং বাইরে বের হলে মাস্ক পরা। যদি কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি আশপাশে থাকে, তবে তার থেকে অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা। অপরিষ্কার হাত দিয়ে চোখ, মুখ ও নাক স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা। হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু অথবা কনুই দিয়ে মুখ ও নাক ঢেকে রাখা।
সম্প্রতি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায়ও বলা হয়েছে, দেশের আন্তর্জাতিক প্রবেশপথগুলোতে থার্মাল স্ক্যানার ও ডিজিটাল থার্মোমিটারের মাধ্যমে আগত যাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হবে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত মাস্ক, গ্লাভস ও পিপিই মজুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গুরুতর হলে নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে আইইডিসিআরের হটলাইনে (০১৪০১-১৯৬২৯৩) যোগাযোগের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে জারি করা হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সম্প্রতি অমিক্রনের কয়েকটি নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট-এলএফ.৭, এক্সএফজি, জেএন-১ এবং এনবি ১.৮.১-এর সংক্রমণ বিভিন্ন দেশে দ্রুত হারে বাড়ছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে এই ভ্যারিয়েন্টগুলো বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ভারতসহ আশপাশের কয়েকটি দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এরই মধ্যে সতর্কতা জারি করেছে। সেই সঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া এসব দেশে ভ্রমণ না করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে যেসব বিদেশি যাত্রী বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন, তাদেরও স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা হচ্ছে। তবে বিদেশ ফেরত অনেক যাত্রী বিমানবন্দরে ব্যবস্থাপনা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ, ঝুঁকি কমাতে কর্তৃপক্ষের আরও সক্রিয় ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস এম রাগীব সামাদ জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে বিমানবন্দরে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এদিকে বেনাপোল স্থলবন্দরেও একই সতর্কতা দেখা গেছে। ইমিগ্রেশনে আগত যাত্রীদের করোনা উপসর্গ রয়েছে কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বিশ্বব্যাপী একসময় তাণ্ডব চালানো করোনাভাইরাস নতুনরূপে আবারও হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে- এই আশঙ্কা থেকেই সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
করোনার নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট রোধে করণীয় : ভারতসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশে করোনার নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বেড়ে গেছে। তাই সতর্ক থাকা খুবই জরুরি। বাংলাদেশে এর সম্ভাব্য সংক্রমণ প্রতিরোধে সতর্কবার্তা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
দেশে প্রবেশপথের জন্য নির্দেশনা : দেশের বিভিন্ন স্থল বা নৌ বা বিমানবন্দরগুলোতে আইএইচআর স্বাস্থ্য ডেস্কসমূহে সতর্ক থাকা, হেলথ স্ক্রিনিং এবং সার্ভেল্যান্স জোরদার করা। দেশের পয়েন্টস অব এন্ট্রিসমূহে থার্মাল স্কান্যার বা ডিজিটাল হেন্ড হেল্ড থার্মোমিটারের মাধ্যমে নন টাচ টেকনিকে তাপমাত্রা নির্ণয় করা। চিকিৎসা কাজে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ মাস্ক, গ্লাভস এবং রোগ প্রতিরোধী পোশাক মজুত রাখা (পিপিই)। ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য রোগ প্রতিরোধ নির্দেশনাগুলো প্রচার করা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারত ও অন্যান্য আক্রান্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকা।
সবার জন্য সাধারণ পরামর্শ : ১. সাতবার প্রয়োজনমতো সাবান দিয়ে হাত ধোয়া (অন্তত ২৩ সেকেন্ড)। ২. নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করা। ৩. আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরে থাকতে হবে। ৪. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না। ৫. হাঁচি-কাশির সময় বাহু বা টিস্যু বা কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন।
সন্দেহভাজনদের ক্ষেত্রে করণীয়: অসুস্থ হলে ঘরে থাকুন। মারাত্মক অসুস্থ হলে কাছের হাসপাতালে যোগাযোগ করুন। রোগীর নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে বলুন। প্রয়োজন হলে আইইডিসিআরের হটলাইন (০১৪০১-১৯৬২৯৩) নম্বরে যোগাযোগ করুন।