ঢাকা রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রাজনীতিতে সুবাতাস

রাজনীতিতে সুবাতাস

আগামী বছরের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ঈদের আগের দিন গত শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ ঘোষণা দেন। ঈদের পর গত মঙ্গলবার লন্ডন সফরে গিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। থাকবেন চার দিন। আগামীকাল শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠককে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতিতে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। আগামীকাল লন্ডন সময় সকালে এই বৈঠক হওয়ার সূচি রয়েছে। বৈঠকের বিষয়টি বিএনপির পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- এই বৈঠক রাজনীতিতে টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। নির্বাচনের সময় নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপিসহ অন্যান্য দলের টানাপড়েন চলার মধ্যেই গত শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী এপ্রিলের শুরুতে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেন। তার এই ঘোষণায় রাজনীতির মাঠে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিএনপিসহ অনেক দল জানায়, ঘোষিত সময় নির্বাচন আয়োজনের জন্য উপযোগী নয়। নির্বাচন আয়োজনের এই সময় পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ করা হয় সরকারের প্রতি। এমন অবস্থার মধ্যেই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস লন্ডন সফরে গেছেন। সফরের মধ্যে আগামীকাল শুক্রবার সকালে লন্ডনের হোটেল ডোরচেস্টারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। দু’জনের বৈঠকে নির্বাচন, জুলাই গণহত্যার বিচার, সংস্কারসহ জাতীয় ও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। বৈঠকটি ঘিরে চাঞ্চল্য বিরাজ করছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। অনেকের প্রত্যাশা এর মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যে যে ফাটল দেখা যাচ্ছে সেটি কেটে যাবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বৈঠককে রাজনীতিতে টার্নিং পয়েন্ট বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি (ইউনূস) যে হোটেলে উঠেছেন সেখানেই বৈঠক হবে।

এদিকে প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক আয়োজনের খবরে রাজনৈতিক অঙ্গনেও ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। বিএনপির অনেক নেতাকর্মী এই বৈঠকের খবর প্রচার করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তারা বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরেছেন। অনেকে ধারণা করছেন, বৈঠকে নির্বাচনের সময় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করবেন তারেক রহমান। এই আলোচনার ভিত্তিতে নির্বাচনের সময়সীমায় পরিবর্তনও আসতে পারে।

এই বৈঠককে সামনে রেখে লন্ডন গিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেন তিনি। বিএনপির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে এ খবর জানা গেছে। এদিকে গতকাল বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠকটি হবে ঐতিহাসিক। আলোচনার মধ্য দিয়ে নির্বাচনসহ সব সমস্যা সমাধান সম্ভব।’ তিনি আরও বলেন, ‘গোটা জাতি আজ লন্ডনের দিকে তাকিয়ে। বিশ্বাস করি, এটি হবে ঐতিহাসিক বৈঠক এবং এ বৈঠকের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে সুবাতাস বইবে। বিএনপি আশা করছে, বৈঠকটি দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট কাটাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। সূত্রমতে, ড. ইউনূস-তারেক রহমানের এ বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থার সমাধানে একটি ‘নতুন ডাইমেনশন’ বা মাত্রা উন্মোচিত হতে পারে বলে মনে করছে বিএনপি। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরও তেমনটাই মনে করছে। প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘ইউনূস-তারেক বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনসহ সব ইস্যুতে আলোচনার সুযোগ আছে।’ নির্বাচনের সময় নিয়ে এখনও একই রেখায় হাঁটছে না সরকার ও বিএনপি। ভোটের তারিখ নিয়ে দলটি ‘চাপ অব্যাহত’ রাখতে চাইলেও সরকারের সঙ্গে কোনো সংঘাতে জড়াবে না বলে জানা গেছে নেতাদের কাছ থেকে। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও এমন পরামর্শ দিয়েছেন। তাই প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের আমন্ত্রণে তারেক রহমানের এ বৈঠক শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। বৈঠকে নির্বাচন কমিশন, অন্তর্বর্তীকালীন বা ছোট একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভবিষ্যৎ কাঠামো, সংবিধান সংস্কার, মানবিক করিডর, বন্দরব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসবে। বিএনপি মনে করে, মূল রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান নির্ভর করছে এ বৈঠকের ফলাফলের ওপর। নির্বাচন-সংস্কারসহ চলমান রাজনৈতিক নানা ইস্যুতে বিএনপি ও অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যকার উত্তেজনা যখন চরমে, এই সময় এমন একটি বৈঠক আশাবাদী করে তুলছে রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে দেশবাসীকে। বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, লন্ডনের ডরচেষ্টার হোটেলে প্রথমবারের মতো ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠকে বসছেন তারা। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে এই বৈঠকটি নির্ধারণ করা হয়েছে। ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক নিয়ে গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটি একটি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে। বৈঠকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তারেক রহমান নেতাদের সঙ্গে আলাপ করেন। বৈঠকে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আলাদা করে সবার মত নেন। ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির নেতারা সরাসরি কিছু না বললেও বৈঠকের বিষয়ে পজেটিভ ইঙ্গিত দিয়েছেন। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে এই বিষয়ে বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেছেন, এ বিষয়ে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে কথা বলবেন লন্ডনে। বিএনপি শীর্ষ নেতাদের ধারণা, দুই নেতার এই প্রথম সাক্ষাতের গুরুত্ব অনেক বেশি। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনের সময়, নির্বাচন-পরবর্তী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এজেন্ডা, তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রাসঙ্গিকতাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত