ঢাকা রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সবার দৃষ্টি এখন লন্ডনে

সবার দৃষ্টি এখন লন্ডনে

দেশের নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ ও সংবিধানসহ বেশকিছু সংস্কার কার্যক্রম জোরেশোরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মধ্যেই ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন দ্রুত সম্পন্ন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ তৈরি সৃষ্টি করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। ফলে দেশের ভেতরেই বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ বিভিন্ন দলের শীর্ষ প্রতিনিধিদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু, এতেও কোনো সুষ্ঠু সমাধান আসেনি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ফলে দেশের এখন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে বৈঠকে বসছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকের মধ্যদিয়ে দেশবাসীর নতুন এক আশার সঞ্চার হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনেও নতুন এক বার্তা আসবে। সেই বার্তার আশায় সবার দৃষ্টি এখন লন্ডনের দিকে।

জানা গেছে, দুই ঘণ্টার বৈঠকে নির্ধারিত কোনো এজেন্ডা রাখা হয়নি। বৈঠকে ভোটের দিনক্ষণ, সংস্কার, জুলাই সনদসহ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। আবার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো কোন পথে সমাধান করা সম্ভব তা আলোচনায় আসতে পারে।

বৈঠকের বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকটি ‘অনাদিকাল পর্যন্ত’ দেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ বৈঠককে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন, সংস্কার এবং গণতন্ত্রকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে এ বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শান্তিতে নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্বে এসেই নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারসহ বেশকিছু সংস্কারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। বিগত দশ মাসে সংস্কার কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন তৈরি করে ড. ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেছে। এরমধ্যেই ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছে। সেই উত্তেজনার মধ্যে লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আজ শুক্রবার দুজনের মধ্যে ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠক হবে। যা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের একটি সম্ভাব্য মোড় হতে পারে। বৈঠকে বিএনপির ৩১ দফা ড. ইউনূসকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন তারেক রহমান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন সুর দেখা যাচ্ছে। যা নিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ভেতরে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলাম এবং এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের ধারণা, দুই নেতার প্রথম সাক্ষাতের গুরুত্ব অনেক বেশি। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনের সময় ও নির্বাচনব্যবস্থা কেমন হতে পারে, সেসব নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এখানে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বাইরেও নির্বাচন কমিশন, সংবিধান সংস্কার ও রোহিঙ্গা ইস্যু গুরুত্ব পাবে।

বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে বিএনপির আগামীর কর্মসূচি। অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির মধ্যে যে মতপার্থক্য ও দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা অনেকটাই কমবে। বৈঠকে দু’পক্ষই নমনীয় থাকলে ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারলে পরিবর্তিত হতে পারে নির্বাচনের সময় এবং নির্ধারিত হতে পারে তারেক রহমানের দেশে ফেরার সময়ও।

লেখক, সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারুফ কামাল খান বলেন, বিএনপি এখন দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির দ্বন্দ্ব হলে সংস্কার, বিচার, নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে। এতে দেশ, জাতি, সরকার বা বিএনপি কারোই লাভ হবে না। এখানে সমঝোতা দরকার। বৈঠকে ওপেন এজেন্ডা রাখাতে ভালো হয়েছে। জানতে পেরেছি, কোনো নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। সুতরাং ওই দুই ঘণ্টা দু’পক্ষের বিষয়গুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হতে পারে।

গত মঙ্গলবার গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঈদ-পরবর্তী সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, রাজনীতির এই চলমান উত্তেজনা ও টানাপোড়েনের মুহূর্তে এই বৈঠক রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য একটি নতুন দুয়ার খুলে দিতে পারে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই বৈঠকের গুরুত্ব অনেক বেশি। এই আলোচনার মাধ্যমে বহু সমস্যার সমাধান সম্ভব।

লন্ডনে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের অনুষ্ঠেয় সাক্ষাৎকার নিয়ে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, সাক্ষাৎকারটি আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি। কারণ, অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের সঙ্গে দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের ফাংশনাল প্রধানের সাক্ষাৎ হচ্ছে। আমরা আশা করি, আগামী জাতীয় নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে তারা কথা বলবেন।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, লন্ডন সফরে দলীয় রাজনীতির বিশুদ্ধতা ও সংস্কার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপি নেতা তারেক রহমানের মধ্যে আলোচনা হওয়া উচিত। দেশে শান্তিপূর্ণ ও পরিশুদ্ধ রাজনৈতিক চর্চার স্বার্থে বিএনপিপ্রধান তারেক রহমানকে চাঁদাবাজি ও সহিংসতা বন্ধে ভূমিকা রাখতে প্রধান উপদেষ্টা আহ্বান জানাবেন। একই সঙ্গে বিএনপির সংস্কার প্রক্রিয়ায় দ্বিমতের বিষয়টি আলোচনা হবে এবং জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় তাদের আরও দায়বদ্ধতার প্রত্যাশা জাতি করছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত