পর্যটকবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে সিলেটের কোনো পাথর কোয়ারি আর লিজ দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
গতকাল শনিবার সকালে সিলেটের জাফলং এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান উপদেষ্টা রিজওয়ানা। এসময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খনিজসম্পদ ও রেল-সড়ক যোগাযোগ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. ফায়জুল কবির খান। আরও উপস্থিত ছিলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জাফলং একটি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ)। এখানকার পাথর কোয়ারিগুলো পরিবেশ ধ্বংস করছে। এগুলো পর্যটকের জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এ এলাকা নিয়ে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
খনিজসম্পদ উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. ফায়জুল কবির খান বলেন, অবৈধভাবে উত্তোলিত পাথর ক্রাশার মেশিন দিয়ে ভাঙা হচ্ছে, যা অনিয়ম ও পরিবেশের জন্য হুমকি। তিনি এসব ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ সংযোগ তাৎক্ষণিক বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দেন বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে। এছাড়া তিনি জাফলংয়ের পর্যটন অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও দেন।
এদিকে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে পরিবেশ ও খনিজসম্পদ বিষয়ক দুই উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে পাথর কোয়ারি চালুর দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন কয়েকশ’ শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দা। গতকাল শনিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বল্লাঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গত বছরের ৫ আগস্ট থেকেই গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাসহ আশপাশের এলাকায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন শুরু হয়, যা এখনও অব্যাহত আছে। এ পরিস্থিতিতে শনিবার সকালে জাফলং ও পিয়াইন নদ এলাকা পরিদর্শনে যান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, উপদেষ্টারা কোয়ারি এলাকা পরিদর্শনের পর গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় তারা বলেন, পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে জাফলংয়ে আর কোনো পাথর কোয়ারি ইজারা দেওয়া হবে না। এরপরই কিছু ব্যক্তি বিক্ষোভ শুরু করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর উপদেষ্টারা গাড়িতে ওঠেন। তখন বল্লাঘাট এলাকায় কয়েকশ’ শ্রমিক ও এলাকাবাসী কোয়ারির ইজারা দেওয়ার দাবিতে তাদের গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভ করেন এবং ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন। প্রায় পাঁচ থেকে সাত মিনিট অবরোধ চলার পর পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। এরপর উপদেষ্টারা সিলেটের উদ্দেশে রওনা হন। বিকালে তাদের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি এলাকা পরিদর্শনের কথা রয়েছে। এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার মো. তোফায়েল আহমদ বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার পরপরই কিছু ব্যক্তি স্লোগান ও বিক্ষোভ শুরু করেন। তবে পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যেই তারা সরে যান। এরপর উপদেষ্টারা চলে যান। জাফলং পরিদর্শন শেষে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জাফলং একটি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ)। আমরা ট্যুরিজম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি, কীভাবে এখানে ইকোফ্রেন্ডলি ট্যুরিজম গড়ে তোলা যায়।
এতে যারা পাথর উত্তোলন করতেন, তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। তিনি জানান, জাফলং নিয়ে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, এ জায়গাটিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আপাতত এখান থেকে কোনো পাথর উত্তোলন করতে দেওয়া হবে না। এখান থেকে ক্রাশার মেশিন সরাতে হবে, তাই এসব মেশিনে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। এসময় মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান তাৎক্ষণিকভাবে ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি তিনি জাফলংয়ের পর্যটন অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন।