ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মহাসমাবেশ

সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে ভোট চায় ইসলামী আন্দোলন

* সংস্কার না করে নির্বাচন করলে ফের স্বৈরাচারী সরকার তৈরি হবে, আশঙ্কা চরমোনাই পীরের * বিএনপিকে ক্ষমতায় যাওয়ার গ্যারান্টি কে দিয়েছে, জানতে চান ফয়জুল করীম * জুলাই বিপ্লবকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেব না, বললেন গোলাম পরওয়ার
সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে ভোট চায় ইসলামী আন্দোলন

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হলে গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম (চরমোনাই পীর)। নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিপূর্ণ সংস্কারও দাবি করেন তিনি। সংস্কার না করে নির্বাচন আয়োজন করা হলে আবারও স্বৈরাচারী সরকার তৈরির আশঙ্কা প্রকাশ করছেন চরমোনাই পীর। গতকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত মহাসমাবেশের সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন রেজাউল করিম।

মহাসমাবেশের মূল পর্বের অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হন। সংস্কার, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে বেলা দুইটার দিকে মহাসমাবেশের মূল পর্বে সভাপতির বক্তব্যে চরমোনাই পীর বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান লক্ষ্য ছিল দেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে রক্ষা করা। ৫৪ বছরের জমা হওয়া জঞ্জাল দূর করা। অভ্যুত্থানের পর সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। আমরা মতামত দিয়েছি। এখন সংস্কার নিয়ে দ্বিতীয় দফা আলোচনা চলছে। আমরা লক্ষ করছি, মৌলিক সংস্কারে কেউ কেউ গড়িমসি করছে। এটা জুলাইয়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। স্বৈরাচার তৈরির রাস্তা খোলা রাখা যাবে না। সংস্কার না করেই নির্বাচন আয়োজন করে দেশকে আবারও আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যাবে না। রাষ্ট্রের মূলনীতিসহ সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের মতো বিষয়ে ঐকমত্য না হলে গণভোটের আয়োজন করতে হবে।

ইসলামী আন্দোলন আমির বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন করার কোনো বিকল্প নেই। আজকের এই জনসমুদ্র পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের পক্ষের জনসমুদ্র। ১৯৭২ সালের সংবিধান দেশের মানুষের বোধ-বিশ্বাস ও গণআকাঙ্ক্ষাবিরোধী উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই সংবিধান রচয়িতাদের স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করার ম্যান্ডেটই ছিল না। তারা ভিনদেশের সংবিধান অনুসরণ করেছিলেন। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। কোনো ক্ষেত্রেই কাঙ্ক্ষিত সমৃদ্ধি ও উন্নতি হয়নি। রাজনৈতিক সংস্কৃতি কলুষিত হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, সংবিধান মেনেই স্বৈরাচার তৈরি হয়েছে। এ জন্যই আমরা সংস্কারের প্রশ্নে অটল।

পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্তদের কোনো ক্ষমা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, যারা সরাসরি ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিচার করতে হবে। যারা অপরাধে সহায়তা করেছে, তাদেরও বিচার করতে হবে। বিচারের ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি হলেও পতিত সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপি এবং নেতারা এখনও জেলের বাইরে। অনেকেই দেশের বাইরে থেকে উসকানি দিয়ে যাচ্ছে। চরমোনাই পীর বলেন, দেশের সব মানুষের ভোটের দাম সমান। কারও ভোট যাতে অবমূল্যায়ন না হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তাই আগামী নির্বাচনে সংসদের উভয়কক্ষে অবশ্যই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে। যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সংসদে তাদের সেই অনুপাতে আসন থাকবে। এই পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনায় সবার মতের প্রতিফলন ঘটবে। কোনো দল জালেম হওয়ার সুযোগ পাবে না। এটা জেনজি’র দাবি। এটা এখন জনগণের দাবি। দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের দাবি। বর্তমানে ইসলামপন্থিদের ঐক্যের ব্যাপারে গণপ্রত্যাশা তৈরি হয়েছে জানিয়ে রেজাউল করিম বলেন, আমি শুরু থেকেই ইসলামপন্থি সব ভোট একবাক্সে আনার কথা বলে আসছি। আগামী নির্বাচনে শুধু ইসলামী দলই নয়, বরং দেশপ্রেমিক আরও অনেক রাজনৈতিক দলও একবাক্স নীতিতে আসতে পারে ইনশা আল্লাহ।

এদিকে ‘সংস্কার, গণহত্যার বিচার ও পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের’ দাবিতে ইসলামী আন্দোলন আয়োজিত মহাসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, বিএনপিকে ক্ষমতায় যাওয়ার গ্যারান্টি কে দিয়েছে তা জানতে চেয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের মানুষ কোনো দুর্নীতিবাজ ও চাঁদাবাজকে ক্ষমতায় যেতে দেবে না। একটি সর্বদলীয় সংসদ গঠন করতে পিআর হচ্ছে সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। বিএনপিরও তা মেনে নেওয়া উচিত।

ফয়জুল করীম বলেন, আজকে বিভিন্ন দলের যারা এখানে এসেছেন, তারা মোনাফেকি না করলে আগামীতে ইসলামী শক্তি ক্ষমতায় আসবে। আমরা নিজেরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। কোরআন ও সুন্নাহকে ক্ষমতায় নিতে চাই। তিনি বলেন, ইসলাম ক্ষমতায় গেলে মানুষ ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দারিদ্রের হার কমবে। মনুষ জীবনের নিরাপত্তা পাবে। দেশ থেকে ২৮ হাজার কোটি টাকা পাচার হবে না। দাঁড়ি-টুপি পরে চলতে গেলে হামলার শিকার হবে না কেউ। ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা বলেন, এখন একজন রিকশা চালক থেকে সবাই অনেক সচেতন। কাজেই কেউ বেইমানি করে পার পাবেন না। তিনি অভিযোগ করেন, বিগত দিনে ভারতের কাছে আওয়ামী লীগ সরকার দায়বদ্ধ ছিল। কিন্তু দেশের মানুষ ভারতের গোলামী করার জন্য একাত্তরে জীবন দেয়নি। সমাবেশে ইরানে ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা জানান তিনি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত মহাসমাবেশে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি ছাড়া আগামী নির্বাচন দেশের মানুষ মানবে না। এ নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঐক্য তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দৃশ্যমান সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। যারা বলেন ক্ষমতায় গেলে সংস্কার করবেন, তারা কীভাবে বুঝলেন তারা ক্ষমতায় যাবেন?’ মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু কিছু আচরণ জনগণের মধ্যে সন্দেহ তৈরি করেছে। নির্বাচনের আগে নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘ভিন্ন মত থাকা সত্ত্বেও আজকে আমরা এক হয়েছি। এর মাধ্যমে ইসলামের ঐক্যের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। পীর চরমোনাইয়ের এ উদ্যোগ ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’

জামায়াত নেতা বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেবো না। খুনিদের দৃশ্যমান বিচার নিশ্চিত করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই ঘোষণা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারের ভেতরে কোনো ফ্যাসিবাদী থাকতে দেওয়া হবে না।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত