ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে যোগ দিয়েছেন

এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে যোগ দিয়েছেন

আন্দোলন প্রত্যাহারের পর আজ সোমবার সকালে কাজে যোগ দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গতকাল সকাল ৯টার দিকে এনবিআরের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ দপ্তরে যান। নিজেদের কাজে মনোনিবেশ করেন। চলছে নিয়মমাফিক কাজ। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, গতবারের চেয়ে রাজস্ব আদায় বেশি হবে এটা নিশ্চিত। কিন্তু যেরকম আশা করছিলাম, একটু তো হোঁচট খেয়েছি এই কয়দিনের কাজকর্মে। গতকাল এনবিআর ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আজ (গতকাল) সকাল ১০টা পর্যন্ত আমাদের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। আজ যেটা ট্রেজারিতে জমা হবে সেটার রিপোর্ট কাল পাব। এর বাইরে সরকারি প্রকল্পের কর বা মূসকের বিল থাকে; যেটা আদায় হয়, সেটা সমন্বয় করতে কিছুটা সময় লাগবে। নরমালি জুন ক্লোজিং-এ একটু সময় লাগে। ২-৩ সপ্তাহ লেগে যাবে ফাইনাল ফিগার আসতে।

এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, এখন আমাদের রেভিনিউ রিপোর্টিংটা সিস্টেমেটিক। আমরা ম্যানুয়াল রিপোর্ট করি না। আইবাসে আমরা আদায়ের রিপোর্ট করি। গত কয়েকদিনের আন্দোলনে ব্যবসা-বাণিজ্য বিঘ্নিত হয়েছে উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, রাজস্ব আদায় হোঁচট খেয়েছে। আজকেও সময় আছে, আজকে তারা (কর্মকর্তারা) চেষ্টা করছেন। ট্যাক্স অফিসারদের প্ল্যানের মধ্যে আছে কারা ট্যাক্স পেয়ার, কারা বছরের শেষে কর দিবে। এটা তারা জানেন। আজ সব দপ্তর খোলা, ব্যাংক খোলা।

তিনি বলেন, আমার ধারণা আজকে (সোমবার) ভালো পরিমাণ অর্থ জমা হবে। সরকারি বিলগুলো অ্যাডজাস্ট করলে গতবারের চেয়ে বেশি হবে এটা নিশ্চিত। একটা নির্দিষ্ট অংশের গ্রোথ হবে। আমরা যেরকম আশা করেছিলাম হয়তো সেটার কাছাকাছি থাকবে। তারপরেও জুলাই মাসে আবার ড্রাইভ দিয়ে আমরা এটা ট্রেজারিতে নিয়ে আসব। জুলাই মাসে আমাদের টাকা লাগবে। সরকারকে জুলাই মাসে খরচ করতে হবে। আমাদের কর্মতৎপরতা আগের মতো চলবে।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যা কিছু হয়েছে সব ভুলে গিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে, দেশের স্বার্থে আমরা সবাই কাজ করব। যে কাজগুলো আছে সেগুলো এগিয়ে নিয় যাব। আশা করি আমাদের আর এ ধরনের সমস্যার মধ্যে যেতে হবে না। অতীতে রেভিনিউ অফিসাররা যেভাবে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন, একইভাবে তারা কাজ করবেন।

এনবিআরে কর্মচাঞ্চল্য শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কাস্টমস হাউজগুলো গতকাল বিকেল থেকেই কাজ শুরু করছে। তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছেন। এর ফলে সবার মাঝে স্বস্তি বিরাজ করছে? বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ও নীতি নির্ধারকদের মধ্যে। সকাল থেকেই আমাদের সব দপ্তরে কাজ শুরু হয়েছে। সম্পূর্ণ উপস্থিতি আছে। সব কাস্টমস হাউজ, আইসিডি, ভ্যাট ও কর অফিস সবাই কাজ করছে। যেহেতু আজ ৩০ জুন (অর্থবছরের শেষ দিন), আজকে আমাদের একটা বড় ড্রাইভ থাকে। রেভিনিউগুলো যেগুলো পাইপলাইনে আছে সেগুলো ট্রেজারিতে নিয়ে আসার একটা ক্রমাগত চেষ্টা থাকে। সেই চেষ্টাটা চলছে।

এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তবু পুরোপুরি কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসেনি। চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল, ঢাকা কাস্টম হাউস, ভোমরা, বুড়িমারী, সোনা মসজিদ, আখাউড়াসহ দেশের সব স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনে আমদানি–রপ্তানিসংক্রান্ত শুল্কায়নের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানেও শুল্ক-কর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে যোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা আলোকিত বাংলাদেশ কে জানান, সকাল থেকে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ ডেস্কে গেছেন। দাপ্তরিক কাজ করছেন। কেউ কেউ গত কয়েক দিনের আন্দোলনের নানা দিক নিয়েও আলোচনা করছেন। আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক কর্মকর্তা জানান, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সামনের সারির নেতাদের মধ্যে বদলি আতঙ্ক বিরাজ করছে। অবশ্য দেড় মাস ধরে সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে এনবিআরের যৌক্তিক সংস্কারে দাবিতে আন্দোলন করছেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলন হয়। গত কয়েক দিনের আন্দোলনে বিশেষ করে গত শনিবার ও গতকাল রোববারের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য অচল হয়ে পড়ে। আন্দোলন প্রত্যাহারের বিষয়ে গত দুই দিন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা সমঝোতার উদ্যোগ নেন। গতকাল দিনভর নানা উদ্যোগ নেন তাঁরা। ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করে। এরপর এনবিআরের আন্দোলনরত ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে গতকাল রাতে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন ব্যবসায়ী ও আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সংবাদ সম্মেলনে এনবিআরের কর্মকর্তারা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এদিকে সরকারও কঠোর অবস্থানে যায়। সরকার এনবিআরের চাকরিকে অত্যাবশ্যক সেবা ঘোষণার পাশাপাশি এনবিআরের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তে নামে। এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে গত ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। উদ্দেশ্য হলো, করহার নির্ধারণের মতো নীতিগত কাজ এবং কর আদায়ের কাজ পৃথক রাখা। এর পর থেকেই এনবিআরের যৌক্তিক সংস্কারে দাবিতে আন্দোলন করছিলেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এনবিআরের কর্মকর্তারা দুটি বিভাগ করা নিয়ে তেমন আপত্তি করেননি। তবে তাঁরা মূলত ওই দুই বিভাগে পদায়নের ক্ষেত্রে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার চাইছেন। সরকার উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগের কথা বলছে, যার মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা যায়। আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের পদত্যাগও দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীদের পক্ষে বক্তব্য দেন বিসিআই সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষে বক্তব্য দেন পরিষদের সভাপতি ও ভ্যাট বিভাগের নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, দেশের শীর্ষস্থানীয় চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি মির্জা আশিক রানা, মহাসচিব সেহেলা সিদ্দিকা প্রমুখ। রাজস্ব ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার ও এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করে আসছিল এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। আর গত দুইদিন মার্চ টু এনবিআর ও কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেছে তারা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত