সারা দেশে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। টানা বৃষ্টির ফলে কোথাও বাঁধ ভাঙছে, কোথাও পাহাড় ধসে পড়ছে, আবার কোথাও পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় দ্রুত ও সমন্বিত উদ্ধার এবং ত্রাণ তৎপরতা না চালালে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশবিদরা।
জানা গেছে, টানা বৃষ্টিপাতের কারণে নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এর ফলে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও পাহাড়ী এলাকাগুলোতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে ফেনী, কক্সবাজার, খুলনা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও চট্টগ্রামে। ফেনীতে রেকর্ড ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে মুহুরী, খাহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর অন্তত ১৭টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে গিয়ে ৩৫টিরও বেশি গ্রাম পানির নিচে চলে গেছে। প্লাবিত হয়েছে বাড়িঘর, রাস্তা ও কৃষিজমি, বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সংযোগ ও যোগাযোগব্যবস্থা। ঢাকায়ও টানা বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। খিলগাঁও, বাসাবো, মুগদা, মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সড়ক ও অলিগলি পানিতে তলিয়ে যায়, ফলে রাজধানীবাসীকে পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ আরও দুই দিন অব্যাহত থাকতে পারে। এতে পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা বা ফ্ল্যাশ ফ্লাডের আশঙ্কা রয়েছে।
কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, রামু ও মহেশখালী এলাকায় পাহাড়ি ঢলে এবং অতিবৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি ও বিদ্যালয়। নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু এলাকা থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জেলার বিভিন্ন অংশে আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামেও পানি ঢুকে পড়েছে কর্ণফুলী, পাহাড়তলী ও বাঁশখালী এলাকার নিচু অংশে। পাহাড় ধসের আশঙ্কায় স্থানীয়দের সরে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় পটুয়াখালী ও বরগুনার নদীবাঁধগুলোর উপর তীব্র চাপ তৈরি হয়েছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এসব অঞ্চলে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ফিশিং ট্রলার ও নৌযানকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে। পটুয়াখালী, বাউফল, রাঙ্গাবালী, কলাপাড়া ও গলাচিপায় গত ২৪ ঘণ্টায় গড়ে ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন, রেড ক্রিসেন্ট ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে সাবস্টেশন ডুবে যাওয়ায়। ফেনীতে চালু হয়েছে অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প, বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ ও শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, এই বন্যা শুধু মুহূর্তের দুর্যোগ নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের এক সরাসরি প্রভাব। পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় শহরগুলোতে বন্যার পরিণতি আরও ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষকে পানি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও খাবার মজুত রাখতে এবং প্রশাসনের দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে দেশের প্রায় ৩০টির বেশি জেলা কোনো না কোনোভাবে জলাবদ্ধতা বা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা লাখের ঘর ছুঁইছুঁই করছে। প্রশাসন বলছে, পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত আছে এবং প্রয়োজন হলে সেনা বা নৌবাহিনীকে মাঠে নামানো হবে।
বাড়ছে গোমতী নদীর পানি, কুমিল্লায় বন্যার শঙ্কা : টানা ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হু হু করে বাড়ছে কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি। ফলে জেলার কয়েকটি উপজেলায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে গোমতী নদীর পানি ৮ দশমিক ৫৬ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। যা বিপৎসীমার ৩ মিটার নিচে। গোমতী নদীর বিপৎসীমা ১১ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আকস্মিক ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে গত ২৪ ঘণ্টায় গোমতীর পানি ৫ মিটারের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। কুমিল্লা অঞ্চলের পাশাপাশি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যেও ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ওই রাজ্যের পানি গোমতী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুমিল্লা অংশের দিকে নামছে।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো. ওয়ালিউজ্জামান বলেন, টানা ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে গোমতী নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃষ্টি থেমে গেলে এবং উজানের ঢল বন্ধ হলে বিপদ কাটতে পারে। নতুবা বন্যার শঙ্কা রয়ে যাবে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অপরদিকে কুমিল্লা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেল ৩টা থেকে আজ বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১২৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। একটি ভারী বর্ষণের সংকেত রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।
কুমিল্লা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মো. আরিফ বলেন, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। সাগরে একটি লঘুচাপ আছে, তবে সেটি অনেক দূরে ভারতের অংশে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য আবহাওয়ার একই পূর্বাভাস রয়েছে। এদিকে গোমতীর পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যার আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে বন্যার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আমাদের ৫৮৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও জিআর চাল মজুত আছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
ফেনীতে ১৭টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে গিয়ে ৩৫টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত : ফেনীতে ভারী বৃষ্টিপাত এবং ভারতের উজানের পানিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৭টি স্থান ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। বন্ধ রয়েছে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কে যানচলাচল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে করে যাতায়াত করছেন সাধারণ মানুষ। গতকাল বুধবার দুপুর ১টার দিকে ফুলগাজী উপজেলার মুন্সিরহাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙনে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কের মুন্সিরহাট থেকে ফুলগাজী পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্ধ রয়েছে যানচলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন গন্তব্যে ছোটা মানুষ।
পিকআপে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফুলগাজী থেকে ফেনীর উদ্দেশে রওনা হওয়া একজন বলেন, ‘রাস্তায় ট্রাক-ট্রলি ছাড়া আর কোনো যানবাহন নেই। চিকিৎসার প্রয়োজনে শহরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছি। ভাড়া সিএনজি অটোরিকশার চেয়ে অনেক বেশি নিচ্ছে। ঝুঁকি থাকলেও নিরুপায় হয়ে যাচ্ছি।’ ট্রাকের একজন যাত্রী বলেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে পানি বাড়ছে। ভাঙন স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। প্রয়োজনের তাগিদে বাড়তি ভাড়া ও ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছি। এক পিকআপের চালক বলেন, সড়কের অনেক স্থানে পানি থাকায় রাস্তায় সিএনজি অটোরিকশাসহ যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। ভাড়া সিএনজি অটোরিকশার চেয়ে ৫০-৭০ টাকা বেশি নিচ্ছি। বড় গাড়িতে মানুষদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।
পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন, আতঙ্কে ৬০০ পরিবার : শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বসতঘর, দোকানপাটসহ ২৬টি স্থাপনা। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে অন্তত ৬০০ পরিবারের। গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধের ওই অংশে ১৩০ মিটার নদীতে বিলীন হয়েছে।
ভাঙন আতঙ্কে এরইমধ্যে নদীর পাড় থেকে বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন স্থানীয়রা। তাদের আশঙ্কা দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে নদীতে বিলীন হবে রাস্তাঘাট, হাট-বাজারসহ শতাধিক বসতবাড়ি। উপজেলার আলম খার কান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সি কান্দি ও ওছিম উদ্দিন মুন্সি কান্দি গ্রামের অন্তত ৬০০ পরিবার এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে আছেন। ভাঙন রোধে জরুরিভিত্তিতে এক হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। যদিও তাতে খুব একটা কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
২০১০-২০১১ অর্থবছরে পদ্মা সেতু থেকে মাঝিরঘাট হয়ে পূর্ব নাওডোবা আলমখার কান্দি জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে ব্যয় হয় ১১০ কোটি টাকা। গত বছরের ৩ নভেম্বর থেকে বাঁধের নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট এলাকায় ধস শুরু হয়। গত বছরের ১৬ নভেম্বর বিকেল পর্যন্ত বাঁধটির প্রায় ১০০ মিটার ধসে পড়ে নদীতে। এতে কংক্রিটের সিসি ব্লকগুলো নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া এলাকাটির আশপাশে দেখা দেয় ফাটল। পরে বাঁধটির সংস্কারে দায়িত্ব দেওয়া হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। গত বছর ওই বাঁধের যে ১০০ মিটার অংশ বিলীন হয়েছিল সেখানে ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বালুভর্তি জিওব্যাগ ও সিসিব্লক ফেলার কাজ শুরু হয়।
এদিকে, গত কোরবানির ঈদের দিন ভোররাতে সংস্কার করা বাঁধের ১০০ মিটার অংশসহ পাশের আরও একটি স্থানে ভাঙন শুরু হয়। একদিনের মধ্যে বাঁধের ২৫০ মিটার অংশ নদীতে তলিয়ে যায়। এরপর ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে নতুন করে জিওব্যাগ ডাম্পিং করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত সোমবার বিকেলে নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়। মাত্র দুই ঘণ্টার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয় ১৬টি বাড়ি ও ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভাঙনের আশঙ্কায় সরিয়ে নেওয়া হয় ১৫টি দোকান।
মঙ্গল মাঝির ঘাট বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, আকস্মিক ভাঙনের কারণে শ্রমিক সংকট শুরু হয়েছে। এজন্য পরিবারের সদস্যরাই নিজেদের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। যেকোনো উপায়ে ভাঙন রোধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি আমরা।
স্থানীয় বাসিন্দা সুমন হাওলাদার বলেন, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে পাড়ের কাছে চলে আসায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত বছর থেকে এই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা এলাকাবাসী আতঙ্কের মধ্যে আছি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে শত শত পরিবার উদ্বাস্তু হয়ে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান বলেন, বাঁধের ১৩০ মিটার নদীতে বিলীন হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ভাঙনের পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। এরইমধ্যে কিছু বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রায় ৯০ জন শ্রমিক নিয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও পদ্মার পাড়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রায় এক হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করেছি। ভাঙন রোধে দ্রুত সময়ের মধ্যেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, ভাঙন রোধে জরুরিভিত্তিতে বাঁধ পুনর্নির্মাণের চেষ্টা চলছে। বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়া ২৬টি পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। যাদের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে, তাদের মধ্যে দুই বান টিন ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করছে প্রশাসন।
নোয়াখালীতে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ ঘোষণা : নোয়াখালীতে অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইসরাত নাসিমা হাবীব বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ৯ জুলাই আষাঢ়ী পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি পেয়েছে। আগামীকাল ১০ জুলাই থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম (ক্লাস) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকবেন এবং চলমান দুর্যোগ পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদ্যালয়গুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের প্রয়োজন হলে তারা প্রস্তুত থাকবেন। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, জলাবদ্ধতা ও বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি চলছে। পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। বিশুদ্ধ পানির জন্য মোবাইল প্ল্যান্ট ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত রাখা হয়েছে। সাপে কাটা ও ডায়রিয়াসহ জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে বিদ্যালয় প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ত্রাণ তৎপরতা সমন্বয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা, পাহাড় ধসের শঙ্কা : চট্টগ্রামে সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে কর্মজীবী এবং শিক্ষার্থীদের। বৃষ্টির পরিমাণ আরও বেড়ে যাওয়ায় পাহাড় ধসের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
কখনও অঝোর ধারায়, আবার কখনও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে চট্টগ্রাম নগরীসহ আশপাশের এলাকায়। এতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে সড়ক ডুবে গেছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বশেষ আজ বুধবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
টানা বৃষ্টিতে নগরীর আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, কেবি আনাম আলী রোড়, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, রাহাত্তারপুল, বহদ্দারহাট এলাকায় কোথাও কোথাও সড়ক ও অলিগলির রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে। এরপরও বৃষ্টির মধ্যে সকালে কর্মস্থল ও স্কুল-কলেজে যাওয়ার জন্য বের হয়ে অনেককেই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে বৃষ্টির কারণে সকালে গণপরিবহন কম থাকায় ভোগান্তি বেশি হয়েছে।
এদিকে ভারী বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা না মেনে কাটা পাহাড়গুলোতে ধস হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. ইসমাইল ভূঁইয়া বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।’