এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে মাত্র ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের চেয়ে পাসের হার কমেছে ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এমনকি বিগত ১৬ বছরের মধ্যে এসএসসিতে এটিই সর্বনিম্ন ফলাফল। শিক্ষা বোর্ডগুলোর তথ্যমতে, ২০০৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় এবারের চেয়ে কম পাসের হার ছিল। সে বছর পাস করেছিল ৬৭ দশমিক ৪১ শতাংশ শিক্ষার্থী। অর্থাৎ, ১৬ বছর আগেই সেই ফলাফলের আবর্তে ফিরেছে এসএসসির ফল। শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর কর্মকর্তাদের দাবি, এটিই প্রকৃত ফল। বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে ফলাফল ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হতো। ফল প্রকাশের একদিন আগেও শিক্ষা উপদেষ্টা গণমাধ্যমকে এমন বক্তব্য দেন। কাউকে বাড়তি নম্বর বা গ্রেস মার্কস না দেওয়ায় ‘প্রকৃত ও সত্য’ ফল উঠে এসেছে বলে দাবি বোর্ড কর্মকর্তাদের। শিক্ষাবিদরা বলছেন, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এমন নিম্নমুখী ফলাফল শিক্ষা খাতের জন্য মোটেও সুখকর নয়। কোনো ব্যাখ্যায়ই এটিকে ইতিবাচকভাবে দেখানোর সুযোগ নেই। বিপর্যয়ের কারণগুলো সূক্ষ্মভাবে খতিয়ে দেখে সেই ঘাটতি পূরণে চেষ্টা করতে হবে।
ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এবার মূলত চারটি কারণে ফল খারাপ হয়েছে। প্রথমত, এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা গত পাঁচ বছরের শিক্ষাজীবনে করোনা মহামারিসহ নানা কারণে বিদ্যালয়ে ক্লাস পেয়েছে কম। দ্বিতীয়ত, ‘প্রশ্ন কঠিন’ হওয়ায় এবার গণিতে পাসের হার কম। তৃতীয়ত, এবার উত্তরপত্র মূল্যায়নে অন্যান্য বছরের চেয়ে ‘কড়াকড়ি’ ছিল। চতুর্থত, নেপথ্যে আন্দোলন ও রাজনীতি।
১৬ বছর আগের ধারায় এসএসসির ফল : ২০০৯ সালে দেশে জাতীয় নির্বাচন দেয় ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিনের সরকার। বহুল আলোচিত ওয়ান/ইলেভেনের সরকারের অধীনে সেটি ছিল সর্বশেষ এসএসসি পরীক্ষা। ২০০৯ সালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ১১টি বোর্ডে গড় পাসের হার ছিল ৬৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। সে বছর মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১০ লাখ ২৩ হাজার ৪৮৪ জন। পাস করে ৬ লাখ ৮৯ হাজার ৩৯০ জন। ফেল করেছিল ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৯৪ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৮২ হাজার ২১২ জন।
১৬ বছর পর সেই একই ধারার ফলাফল দেখা গেছে এবার। ২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। চলতি বছর দেশের ৩ হাজার ৭১৪টি কেন্দ্রে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ জন। পাস করেছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। ফেল করেছে ৬ লাখ ৬৬০ জন। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন।
সর্বশেষ ১৫ বছরের ফলাফল যেমন ছিল : ওয়ান-ইলেভেন সরকারের বিদায়ের পর ২০১০ সালে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রথম এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার এক লাফে প্রায় ১৩ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়। সে বছর গড় পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে ৮০ শতাংশের ওপর পাসের হার দেখা যায়। ২০১১ সালে পাসের হার দাঁড়ায় ৮২ দশমিক ১৬ শতাংশ, ২০১২ সালে ৮৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ২০১৩ সালে ৮৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ, ২০১৪ সালে ৯১ দশমিক ৩৪ শতাংশ, ২০১৫ সালে ৮৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, ২০১৬ সালে ৮৮ দশমিক ৭০ শতাংশ, ২০১৭ সাল ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ, ২০২০ সালে ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ, ২০২১ সালে ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ (করোনার বছরে অটোপাস), ২০২২ সালে ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ, ২০২৩ সালে ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং ২০২৪ সালে পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
জিপিএ-৫ পাওয়ার হার ‘সঠিক পথেই’ : এবার পাসের হারে ‘বড় ধস’ দেখা গেলেও জিপিএ-৫ পাওয়ার হার ‘সঠিক পথেই’ আছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির আগে জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা যেমন ছিল, তাতে এবারের সংখ্যার খুব বেশি ব্যবধান নেই বলেই এ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই বলে উল্লেখ করেন শিক্ষাবিদরা।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর তথ্যমতে, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ২০১৩ সাল পর্যন্ত জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা লাখের নিচে ছিল। ২০১৪ সালে হঠাৎ বড় লাফ দেখা যায়। সে বছর ১ লাখ ৪২ হাজার ২৭৬ জন জিপিএ-৫ পায়। অবশ্য এরপর টানা ছয় বছর এর চেয়ে কম জিপিএ-৫ পায় শিক্ষার্থীরা। ২০১৫ সালে ১ লাখ ১১ হাজার ৯০১ জন, ২০১৬ সালে ১ লাখ ৯ হাজার ৭৬৮, ২০১৭ সালে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১, ২০১৮ সালে ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৯, ২০১৯ সালে ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ ও ২০২০ সালে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন জিপিএ-৫ পায়। তবে এরপর করোনার বছরগুলোতে লাফিয়ে লাফিয়ে জিপিএ-৫ বাড়তে থাকে। ২০২১ সালে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন জিপিএ-৫ পায়। তার পরের বছর অর্থাৎ, ২০২২ সালে সব রেকর্ড ভেঙে জিপিএ-৫ পায় ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। ২০২৩ সাল থেকে জিপিএ-৫ পাওয়ার হার কিছুটা কম। সেই বছর জিপিএ-৫ পায় ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন এবং ২০২৪ সালে জিপিএ-৫ পায় ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন।
বাড়তি নম্বর নয়, প্রকৃত ফল দেওয়ায় পাসের হার কম : পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমার বিষয়টি এবার ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরারের ভাষ্য, ‘এবার ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে ফল তৈরির অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসেছেন তারা। ফলে মেধার সঠিক মূল্যায়নই ফলাফলে উঠে এসেছে।’
ফল প্রকাশের আগের দিনই তিনি এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফল যে খারাপ হবে, তার ইঙ্গিত দেন। গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘গত ১৬ বছরে যে সরকার ছিল, তাদের আমলে সরকারের সাফল্য দেখানোর জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের নম্বর বাড়িয়ে দিয়ে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বাড়িয়ে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে ফলাফল প্রকাশ করা হতো। এমনকি সে ফলাফল প্রকাশ নিয়ে এক ধরনের ফটোসেশনের আয়োজন ছিল রাষ্ট্রপ্রধানের। শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা পরীক্ষার ফলাফলের বই-পত্র নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতেন এবং প্রধানমন্ত্রী তখন তাদের নিয়ে ফটোসেশন করে রেজাল্ট প্রকাশ করতেন। আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার এটাকে বাহুল্য মনে করছে। এটা থেকে সরে এসে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতার প্রকৃত মূল্যায়নে শিক্ষা বোর্ডগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে।’
ফল ঘোষণার অনুষ্ঠানে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের মোর্চা বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, ‘বাড়তি কোনো নম্বর বা গ্রেস কাউকে দেওয়া হয়নি। নির্দিষ্ট নম্বর পেলে একটু বাড়িয়ে দিয়ে কাউকে জিপিএ-৫ দিয়ে দেওয়ার পথে আমরা হাঁটিনি। সরকারের নির্দেশনা ছিল সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন করা, সেটিই আমরা করেছি। উদারনীতি পরিহার করায় ফলাফল কিছুটা নিম্নগামী।’
শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে ক্লাস পেয়েছে কম : সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার যারা এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়, তারা ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক স্তরের মোট পাঁচ বছরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সময় বিদ্যালয়ে ক্লাস পায়নি। এর মধ্যে এ বছরের এসএসসির নিয়মিত পরীক্ষার্থীরা ২০২০ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে ওই বছরের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি শুরু হয়েছিল। তখন টানা দেড় বছর ছুটি ছিল। দ্বিতীয় দফায় করোনার কারণে ২০২২ সালের ২১ জানুয়ারি আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করে সরকার। সেবারও এক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে।
করোনার বন্ধের পাশাপাশি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণেও অনেক দিন ক্লাস হয়নি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। ফলে শিখন-ঘাটতি নিয়েই ওপরের শ্রেণিতে উঠেছে এবং পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা।
উত্তরপত্র মূল্যায়নে ছিল কড়াকড়ি : এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোর চেয়ে এবার উত্তরপত্র মূল্যায়নে ‘কড়াকড়ি’ ছিল। অন্যান্য বছর কিছুটা নমনীয়তা দেখানো হলেও এবার সেটা করা হয়নি। উত্তরপত্র মূল্যায়নে ‘কড়াকড়ির’ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠন আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমাদের কোনো টার্গেট ছিল না যে পাসের হার এত করব, বাড়াব, নাকি কমাব। আমাদের মিশন ছিল পরীক্ষা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা।’ তিনি বলেন, ‘উত্তরপত্র মূল্যায়নে শিক্ষকরা যখন উত্তরপত্র নিতে এখানে (বোর্ডে) আসেন, তখন ওনাদেরও প্রশ্ন ছিল কোনো নির্দেশনা আছে কি না। আমরা বলেছি, আমাদের বিশেষ কোনো নির্দেশনা নেই। মূল্যায়ন যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়ে আমাদের কাছে এই ফলাফল এসেছে।’
সব বোর্ডেই গণিতে ভরাডুবি : এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সব বোর্ডেই গণিতে পাসের হার আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা পূর্ণ পাঠ্যসূচিতে পরীক্ষা দিয়েছে। এর মধ্যে পরীক্ষায় গণিতসহ কয়েকটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ‘কঠিন’ করা হয়। এবার গণিতে পাসের হারও কম। যেমন ঢাকা বোর্ডে এবার গণিত বিষয়ে পাসের হার ৭৫ দশমিক ১৪ শতাংশ; যা ইংরেজিতে প্রায় ৮৮ শতাংশ, বাংলায় প্রায় ৯৭ শতাংশ, পদার্থে প্রায় ৯৩ শতাংশ, রসায়নে প্রায় ৯৫ শতাংশ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ে ৯৮ শতাংশ, পৌরনীতিতে ৯৪ শতাংশ এবং হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে পাসের হার ৯২ শতাংশের বেশি। অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডেও গণিতে পাসের হার কম। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় গণিতেই বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী কৃতকার্য হতে পারেনি। ফলে সব শিক্ষাবোর্ডে গণিতেই ভরাডুবি ঘটেছে। প্রকাশিত ফল বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ১১টি বোর্ডের বিভিন্ন বিষয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো ফল হয়েছে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে, যেখানে গণিতে পাসের হার ৮৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। এই ফল অন্যান্য বোর্ডের তুলনায় অনেকটাই ভালো হলেও বাকি সব বোর্ডেই চিত্রটা হতাশাজনক।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গণিতে পাস করেছে ৭৫ দশমিক ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। রাজশাহী বোর্ডে এ হার কিছুটা ভালো-৮৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। যশোর বোর্ডেও তুলনামূলক ভালো ফল হয়েছে, পাসের হার ৮৫ দশমিক ০২ শতাংশ। তবে কুমিল্লা, দিনাজপুর ও ময়মনসিংহ বোর্ডে ফল অনেকটাই খারাপ। কুমিল্লা বোর্ডে গণিতে পাসের হার ৭২ দশমিক ০১ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডে ৭১ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বোর্ডে মাত্র ৬৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। বরিশাল বোর্ডে এই হার আরও কম-মাত্র ৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। চট্টগ্রাম বোর্ডে গণিতে পাস করেছে ৮১ দশমিক ৫৩ শতাংশ শিক্ষার্থী, যা তুলনামূলকভাবে ভালো হলেও আশানুরূপ নয়। সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ১৭ শতাংশ। এছাড়া, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডেও গণিতে পাসের হার কম, যেখানে ৭৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণিত বিষয়টিকে শিক্ষার্থীরা এখনও ভয় পায়। পাশাপাশি স্কুলে গণিতশিক্ষকের সংকট, মানসম্মত পাঠদানের অভাব এবং পর্যাপ্ত অনুশীলনের সুযোগ না থাকায় এমন ফলাফলের দেখা মিলছে। একইসঙ্গে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে গাণিতিক ধারণার দুর্বলতা, অনুশীলনমূলক প্রশ্নে অনভ্যস্ততা এবং পাঠ্যবই নির্ভর না হয়ে কোচিং ও গাইড নির্ভরতা বৃদ্ধিও অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্কুলপর্যায়ে গণিতশিক্ষার পদ্ধতিগত পরিবর্তন এবং হাতে-কলমে শিক্ষাদান ও অনুশীলনের সুযোগ বাড়ানো না হলে ভবিষ্যতেও এ ধরনের ভরাডুবি এড়ানো কঠিন হবে। অন্যদিকে, এবার ফল প্রকাশ উপলক্ষ্যে এবার কোনো আনুষ্ঠানিকতা রাখা হয়নি। শিক্ষা উপদেষ্টা জানিয়েছেন, গোঁজামিল ও বাহুল্য এড়িয়ে, স্বচ্ছতায় গুরুত্ব দিয়েই ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
শিক্ষা খাত নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনীতির ইতি : দেশের শিক্ষা খাত কতটা এগিয়েছে, তা তুলে ধরতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার পরীক্ষার খাতায় নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার রেওয়াজ চালু করেছিল বলে মনে করেন অনেক শিক্ষাবিদ। এটিকে তারা একেবারে দৃশ্যমান বলেও উল্লেখ করেন। ফলে সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে ফলাফলেও পতন ঘটল। যদিও শিক্ষা খাত নিয়ে এমন রাজনীতি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবর রহমান বলেছেন, রাজনৈতিক কারণ তো আছেই। পাশাপাশি আরও কিছু কারণে এবার এসএসসির ফল বিপর্যয় হয়েছে। আগে এ অভিযোগটা আমাদের কানে আসতো যে, শিক্ষায় বিগত সরকার ব্যাপক উন্নয়ন করছে। সেটার দৃশ্যমান কিছু তো একটা দেখাতে হবে। এজন্য পরীক্ষায় নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হতো। একই সঙ্গে গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় পরীক্ষায় খারাপ করতে পারে বলেও মনে করেন অধ্যাপক মজিবর। তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দেশের অবস্থা স্থিতিশীল ছিল না। এ আন্দোলনে এসএসসি পরীক্ষার্থী অনেকে অংশ নিয়েছে। পরবর্তীসময়ে তারা তো স্বাভাবিক ছিল না। তারা শকড ছিল, মানসিকভাবে অস্থিরতায় ভুগেছে। ফলে পরীক্ষায় খারাপ ফল করে থাকতে পারে।